আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় আর্যজাতি ও বৈদিক সভ্যতা
আর্যজাতি ও বৈদিক সভ্যতা
আর্যজাতি ও বৈদিক সভ্যতা
আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০ অব্দে ভারতবর্ষের উত্তর-পশ্চিম দিক দিয়ে একদল আক্রমণকারী উপমহাদেশে প্রবেশ করে। দীর্ঘাকৃতি, গৌরবর্ণ ও উন্নত নাসার অধিকারী এ জাতির নাম আর্য জাতি। ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাভাষী নরগোষ্ঠী থেকে উদ্ভূত এ জাতির আদি বাসস্থান সম্বন্ধে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে, তবে সকলেই এ ব্যাপারে একমত যে মধ্য এশিয়া থেকে এদের আগমন ঘটে।
সম্ভবত জমির সন্ধানে ও উন্নত জীবনযাত্রার তাগিদে এরা নিজেদের আবাসভূমি পরিত্যাগ করে দক্ষিণ-পশ্চিম মুখে অগ্রসর হয়। একদল ইরানে প্রবেশ করে প্রাচীন পারস্য সভ্যতার গোড়াপত্তন করে এবং অন্যদল ভারতের উত্তর-পশ্চিম গিরিপথ দিয়ে প্রবেশ করে পাঞ্জাব অঞ্চলে বসতি স্থাপন করে।
খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০ অব্দ থেকে ৮০০ অব্দ সময়ের মধ্যে ভারতবর্ষের আর্যরা ক্রমশ পূর্বদিকে অগ্রসর হয়ে কুরু, পাঞ্চাল, মৎস্য, শূরসেন, কোশল অঞ্চলে ও পরে গণ্ডক নদী অতিক্রম করে কাশী ও বিদেহ অঞ্চলে বসবাস শুরু করে। ভারতবর্ষের প্রাচীন অধিবাসীদের পরাস্ত করে আর্যদের এই অভিযানকার্য চলে। আর্যরা এদের অনার্য বা অসভ্য বলে অভিহিত করে তাদের ‘দাস’ বা ‘দস্যু’ নামে আখ্যায়িত করেছে।

তবে কৃষ্ণবর্ণ অনার্যগণ আর্যদের থেকে সংস্কৃতি ও সমাজব্যবস্থার দিক দিয়ে পৃথক হলেও তারা সত্যিকার অর্থে অসভ্য ছিল না। কৃষিকার্য, ‘পুর’ বা নগর তৈরি, দুর্গ নির্মাণ ও যুদ্ধবিগ্রহে এরা কম নিপুণ ছিল না। বস্তুত, আর্যরা এগুলি সম্পর্কে অনার্যদের কাছ থেকেই শিক্ষালাভ করে।
আর্যরা ক্রমশ সমগ্র উত্তর ভারত অধিকার করে। তাদের নামানুসারে এ অঞ্চলের নাম হয় আর্যাবর্ত। মধ্যভারতে আর্যরা বিদর্ভ ও চেদি রাজ্য ও পশ্চিমে অবন্তী, সৌরাষ্ট্র, সৌবীর প্রভৃতি কয়েকটি আর্য জনপদ ও গোদাবরীর তীরেও দুটি রাজ্য স্থাপন করে।
আর্যরা বিন্ধ্য পর্বত অতিক্রম করে ধীরে ধীরে দক্ষিণাপথে প্রবেশ করে এবং অনার্যদের সাথে যুদ্ধ করে সেখানে কয়েকটি জনপদ প্রতিষ্ঠা করে। সুদূর দাক্ষিণাত্যে তুঙ্গভদ্রা নদী পর্যন্ত আর্যসভ্যতার প্রভাব ছড়িয়ে পড়ার কাহিনী সে যুগের বিখ্যাত মহাকাব্য রামায়ণ থেকে জানা যায় ৷
আরও দেখুন :