বাঙলায় ছাপাখানা ও সামাজিক বিস্ফোরণ

ছাপাখান৷ ও সামাজিক বিস্ফোরণ নিয়ে ড. অতুল সুর তার “বাঙলা ও বাঙালীর বিবর্তন” বইয়ে লিখেছেন :- অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষপাদে এদেশে ছাপাখানার প্রবর্তন সমাজের ওপর এক গভীর প্রতিঘাত হেনেছিল। যদিও ছাপাখানা শিক্ষার বিস্তারে সহায়ক হয়ে দাড়িয়েছিল, তথাপি একথা বললে ভুল হবে যে, ছাপাখানা প্রবর্তনের পূর্বে এদেশের লোক অশিক্ষিত ছিল। সমাজের অনেকেই পাঠশালার মারফত সাক্ষরতা অর্জন করত। এটা যে উচ্চকোটির লোকদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল তা নয়। নিম্নকোটির লোকরাও সাক্ষরতা অর্জন করত। সামান্য মুদির দোকানে স্থর করে কৃত্তিবাসী রামায়ণ পড়া হত। বিদ্যার দৌড়ে অনেক মুর্দি আবার তার চেয়েও বেশি এগিয়ে যেত। দৃষ্টান্তস্বরূপ কান্ত মুদির উল্লেখ করা যেতে পারে— যিনি বাংলা, ফারসী ও যৎসামান্য ইংরেজি জানতেন এবং হিসাবপত্রে পারদর্শী ছিলেন।

 

মুদির দোকানে রামায়ণ পড়াই বলুন, আর চতুষ্পাঠীসমূহে সংস্কৃত ব্যাকরণ কাব্য-সাহিত্য-দর্শন অধ্যয়নই বলুন, সবই হাতে লেখা পুঁথির সাহায্যে করা হত। এর জন্য সমাজে এক শ্রেণীর লোক পুঁথিলেখকের কাজ করত। যখন ছাপাখানা আবির্ভূত হল, এবং মুদ্রিত বই বেরুতে লাগল, তখন তার প্রথম প্রতিঘাত গিয়ে পড়ল এইসব পুঁথিলেথকদের ওপর। অবশ্য তারা রাতারাতি সব বেকার হয়ে পড়েনি। কেননা, প্রথম প্রথম মুদ্রিত পুস্তকের প্রতি নিষ্ঠাবান সমাজের একটা প্রচণ্ড বিদ্বেষ ছিল।

[ ছাপাখানা ও সামাজিক বিস্ফোরণ]

এ বিদ্বেষের কারণ ছিল, ছাপাখানা বিলাতী যন্ত্র বলে। তখন এদেশে যা কিছু বিলাতী জিনিসের সংস্পর্শে আসত, তা নিষ্ঠাবান সমাজের বিচারে ছিল হিন্দুর ধর্মনাশ করবার একটা কৌশল মাত্র। কিন্তু নিষ্ঠাবান সমাজের এ বিদ্বেষ খুব বেশি দিন টেকেনি। ঊনবিংশ শতাব্দীর মধ্যাহ্নের পূর্বেই ছাপা বইয়ের প্রাবন এনে দিয়েছিল শিক্ষাজগতে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন। তখন থেকেই উপজীবিকার উপায় হিসাবে পু*থিলেখা তার গুরুত্ব হারিয়ে ফেলে।

ছাপাথানার সূত্রপাত হয়েছিল ১৭৭৮ খ্রীস্টাব্দে ইংরেজিতে রচিত ও হুগলীতে মুদ্রিত ন্যাথানিয়াল ব্রাসী হ্যালহেড কৃত বাংলা ভাষার একখানা ব্যাকরণ প্রকাশ থেকে। বইথানার গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এই বইখানাতেই প্রথম বিচ্ছিন্ন নড়নশীল (movable types) বাংলা হরফের চেহারা দেখতে পাওয়া গিয়েছিল। এই হরফ তৈরি করেছিলেন চার্লস উইলকিনস নামে কোম্পানির এক সিভি লিয়ান। তিনি পঞ্চানন কর্মকার নামে এদেশের একজন দক্ষ ও প্রতিভাশালী শিল্পীকে হরফ তৈরির প্রণালীটা শিখিয়ে দিয়েছিলেন। পরবর্তীকালে বাংলা হরফের সাট বিবর্তনের ইতিহাসে পঞ্চানন ও তার পরিজনদের প্রয়াস তথা দান অনন্যসাধারণ।

ছাপাখানার প্রবর্তনের ফলে, এক শ্রেণীর লোক যেমন তাদের কর্মসংস্থানের স্বত্র হারিয়ে ফেলল, অপর দিকে ছাপাখানা নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করল। ছাপাখানার বহুমুখী কাজে সমাজের বহুলোক নিযুক্ত হয়ে পড়ল। কেউবা অক্ষর খোদাই ও অক্ষর-ঢালাইয়ের কাজে নিযুক্ত হল, আবার কেউবা অক্ষর-সংযোজন ( composing ) ও মুদ্রাযন্ত্র চালানোর কাজে ব্যাপৃত হল। তারপর ছাপাখানার সঙ্গে সঙ্গে আসে ছবি ছাপবার জন্য নানা রকমের কাজ। ছবি ছাপবার জন্য আবির্ভূত হল শিল্পী ও শিল্পীর সঙ্গে আবির্ভূত হল ব্লকমিস্ত্রি, যারা কাঠে বা ধাতুর পাতে খোদাই করে ব্লক তৈরি করত ছাপবার জন্য।

তারপর লিথোগ্রাফি প্রক্রিয়াতেও ছবি ছাপা শুরু হতে লাগল। (১৮২২ খ্রীস্টাব্দের ২৬ সেপ্টেম্বর তারিখের ‘ক্যালকাটা জর্নাল’ অনুযায়ী দুজন ফরাসী শিল্পী, নাম বেলনস ও সার্ভিঞাক কর্তৃক এই প্রথা কলকাতায় প্রবর্তিত হয়েছিল)। এসব কাজের জন্য সমাজের মধ্যে বিশিষ্ট বৃত্তিধারী নানাশ্রেণীর লোকের আবির্ভাব হল। পুথি লেখকরা তাদের কর্ম হারাল বটে, কিন্তু তাদের তুলনায় সমাজের এক গরিষ্ঠ জনসংখ্যা নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ পেল।

এদিকে ছাপাখানার সংখ্যা বেড়ে যেতে লাগল। ছাপাখানার সংখ্যা যত বাড়ল সমাজের বেশিসংখ্যক লোক তত ছাপাখানার কাজে নিযুক্ত হল। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে (১৮৮৫-৮৬ খ্রীস্টাব্দে ) এদেশে ১,০৯৪টি ছাপাখানা ছিল। গড়ে যদি প্রতি ছাপাখানায় পাঁচজন লোক নিযুক্ত থেকে থাকে তা হলে বলতে হবে যে মালিক সমেত ৬,৫৬৪ সংখ্যক লোক ছাপাখানা থেকে তাদের অন্নবস্ত্রের সংস্থান করত। আর প্রত্যেক লোকের পরিবারে যদি পাঁচজন করে লোক থাকে, তা হলে ছাপাখানা থেকে প্রায় ৩২,৮২০ লোকের ভরণ পোষণ চলত। মাত্র কর্মসংস্থান ও ভরণপোষণ নয়, সমাজতাত্ত্বিকের দৃষ্টিতে সবচেয়ে যে বড় গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার ঘটল, সেটা হচ্ছে সমাজের বহুজন এক নতুন টেকনোলজিতে দক্ষ হয়ে দাড়াল।

তারপর নতুন নতুন দিকে ছাপাখানার বিকাশ ঘটল। লাইনোটাইপ, মনোটাইপ প্রভৃতি যন্ত্রের আবিষ্কার হল। মুদ্রণযন্ত্র ও প্ল্যাটেন প্রেস থেকে রোটারী প্রেসে পরিণত হল। সচিত্র বই ছাপবার জন্য হাফটোন ব্লক তৈরি হতে লাগল। অফসেট প্রিন্টিং-এরও প্রবর্তন হল। এসব কাজ সমাধার জন্য দক্ষতাপূর্ণ নান। বৃত্তিধারী মানুষের আবির্ভাব ঘটল। ফলে, অন্যান্য শিল্পের ন্যায়, ছাপাখানা ও এক বিরাট শিল্পে পরিণত হল। সমাজের লোকরা নতুন নতুন টেকনোলজি শিখল এবং এর দ্বারা সমাজের বহুলোক উপকৃত হল।

১৯৭৮ খ্রীস্টাব্দে ছাপাথানার ধর্মঘটের সময় প্রকাশ পেয়েছিল যে, মাত্র বলকাতার ৬,০০০ ছাপাখানায় প্রায় এক লক্ষ লোক নিযুক্ত ছিল। এছাড়া, কাগজ ও ছাপার কালি শিল্পেও বহু লোক নিযুক্ত আছে। কর্মনিযুক্তি বর্তমান সমাজের একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার, এবং সেদিক দিয়ে বিচার করলে মুদ্রাযন্ত্র এদেশের সমাজের ওপর এক অতি দুরপ্রসারী প্রভাব বিস্তার করেছে। কেননা, ছাপাথানার ফলস হচ্ছে বই ও সংবাদপত্র। বই ও সংবাদপত্র বিক্রির কাজে বহুলোক নিযুক্ত আছে। বস্তুত, ছাপাখানার কর্মযজ্ঞ ভারতের কর্মনিযুক্তির ক্ষেত্রে যে এক প্রচণ্ড প্রভাব বিস্তার করেছে, সে-বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই।

এবার অন্যদিক দিয়ে সমাজের ওপর ছাপাখানার প্রভাব সম্বন্ধে আমরা আলোচনা করব। ছাপাখানার সাহায্যেই সামাজিক অপপ্রথাসমূহ ও নিপীড়ন বন্ধ হয়েছিল। মুদ্রিত পুস্তকই এদেশে সমাজ-সংস্কারের প্রধান হাতিয়ার হয়ে দাড়িয়েছিল। বস্তুত ছাপাখানাই এদেশে ‘আন্দোলন’-এর যুগ আনে। ‘আন্দোলন’ চালাবার জন্য হাতে লেখা মাধ্যমের একটা সীমা আছে—সংখ্যা এবং ব্যয়, এই উভয় দিক থেকেই। অপরপক্ষে মুদ্রিত মাধ্যম মারফত প্রয়োজনীয় সংখ্যা

ছাপানো যায়, এবং তার ব্যয় ও অল্প। মুদ্রিত পুস্তকের সাহায্যে সামাজিক অপপ্রথার বিরুদ্ধে অভিযান প্রথম চালান রাজা রামমোহন রায়। সতীদাহ প্রথার বিলোপসাধনের জন্য তিনি কয়েকখানি পুস্তিকা রচনা করে তাঁর স্বপক্ষে দেশের জনমত গঠনের ও সরকারী দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেন। তাঁর সে আন্দোলন যে সাফল্যমণ্ডিত হয়েছিল, তা আজ সকলেরই জানা আছে।

রাজা রামমোহন রায় [ Raja Ram Mohan Roy ]
রাজা রামমোহন রায় [ Raja Ram Mohan Roy ]
মুদ্রিত পুস্তকের সাহায্যে অনুরূপ আন্দোলন চালিয়েছিলেন পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বিধবাবিবাহ প্রচলনের জন্য। তাঁর সে চেষ্টাও সার্থক হয়েছিল। রাজা রামমোহনের সমসাময়িক কালে ( ১৮২২ খ্রীস্টাব্দে ) স্ত্রীশিক্ষাবিধায়ক এক পুস্তিকা প্রচার করে, এদেশের মেয়েরা যাতে বিদ্যাভ্যাস করে, তার জন্য আন্দোলন করা হয়। এর ফলে এদেশে মেয়েদের মধ্যে ব্যাপকভাবে বিদ্যাভাসের হুচনা হয়। ১৮৫৪ খ্রীস্টাব্দে নাটুকে রামনারায়ণ কুলীনপ্রথা সম্পর্কে ‘কুলীনকুলসর্বন্ধ’ নাটক রচনা করেন।

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর [ Ishwarchandra Vidyasagar ]
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর [ Ishwarchandra Vidyasagar ]
১৮৬০ খ্রীস্টাব্দে দীনবন্ধু মিত্র ‘কচিৎ পথিক্য’ ছদ্মনামে তৎকালীন নীলকরদের বীভৎস অত্যাচার, চাষীদের লাঞ্ছনা ও দুরবস্থা অবলম্বনে তাঁর ‘নীলদর্পণ’ নাটক রচনা করেন, এই নাটকের ফলেই জাতীয় চেতনা জেগে ওঠে ও নীলকরদের অত্যাচার বন্ধ হয়ে যায়। তখন আন্দোলনমূলক রচনা সাহিত্যের রূপ ধারণ করেছে। জাতীয় অপগ্রথা, কুসংস্কার ও কু-অভ্যাস সমূহ দূরীকরণের জন্য সেযুগে আরও যেসব হষ্টিধর্মী সাহিত্য রচিত হয়েছিল, তাদের মধ্যে ছিল হানা ক্যাথেরীন ম্যালেন্স রচিত ‘ফুলমণি ও করুণার বিবরণ’, প্যারীচাঁদ মিত্র কর্তৃক রচিত ‘আলালের ঘরের দুলাল’ ও কালীপ্রসন্ন সিংহ কর্তৃক রচিত ‘ছতোম প্যাঁচার নকসা’।

কিছু পরেই বঙ্কিমচন্দ্র জাতীয় চেতনা জাগরণের জন্য লেখেন তাঁর আনন্দমঠ, সীতারাম, চন্দ্রশেখর ও দেবী চৌধুরাণী। আনন্দমঠ-এর ‘বন্দেমাতরম্’ গানই পরবর্তীকালের স্বাধীনতা আন্দোলনের মূলমন্ত্র হয়ে দাঁড়ায়। বিংশ শতাব্দীতে শরৎচন্দ্র তাঁর পল্লীসমাজ, চরিত্রহীন, বামুনের মেয়ে, পথের দাবী প্রভৃতি উপন্যাস লিখে সামাজিক অত্যাচার দূরীকরণ, স্ত্রীজাতির মর্যাদা স্থাপন ও জাতীয় চেতনা জাগরণের চেষ্টা করেন। মাত্র পুস্তক রচনা দ্বারাই এসব আন্দোলন সার্থকতা লাভ করেনি। সংবাদপত্র ও এর সহায়ক ছিল। বলা বাহুল্য, সংবাদপত্র ছাপা খানারই আর এক ফসল।

সংবাদপত্র মারফৎ এসব আন্দোলনের খবর ও ওই সম্বন্ধীয় সম্পাদকীয় মন্তব্য জনসমাজের কাছে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছিল; এবং তাতে সমাজের মধ্যে একটা জনমত গঠিত হচ্ছিল। বিশেষ করে জাতীয় চেতনা জাগবার পর সংবাদপত্রই জাতিকে স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য উদ্বুদ্ধ করতে প্রধান ভূমিকা গ্রহণ করেছিল। বস্তুত, দেশের মধ্যে জনমত গঠনে সংবাদপত্রের ভূমিকা এতই গুরুত্বপূর্ণ যে, সংবাদপত্রকে রাষ্ট্রের চতুর্থ অঙ্গ বলা হয়। এ ছাড়া সংবাদ পত্রে প্রকাশিত বিজ্ঞাপনসমূহ আঞ্জ সমাজকে সাহায্য করছে শিল্পসমূহের মাল বিক্রি করা থেকে আরম্ভ করে ছেলেমেয়ের বিয়ে দেওয়া পর্যন্ত ব্যাপারে।

ছাপা বই সবচেয়ে বেশী সাহায্য করেছিল শিক্ষার প্রসারে। ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথম পাদে কলকাতা শহর মুদ্রণের পীঠস্থান হয়ে দাঁড়িয়েছিল। মুদ্রা যন্ত্র স্থাপনের পূর্বে লোকের বিদ্যাবুদ্ধি যা কিছু হাতে লেখা পুঁথির মধ্যে ও বিশেষ গোষ্ঠীর মধ্যে নিবন্ধ ছিল। এরূপ ক্ষেত্রে বিদ্যার প্রসার যে এক অতি সঙ্কীর্ণ গণ্ডীর মধ্যে আবদ্ধ থাকত, সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। সমাজের ওপর ছাপাখানার প্রভাব পড়েছিল এখানেই। ছাপাখানা মুদ্রিত বইয়ের সাহায্যে জ্ঞান ও বিদ্যাশিক্ষাকে সর্বজনীন বা democratized করে তুলেছিল।

শিক্ষা বিস্তারের ফলে লোকে যখন ইংরেজি ভাষা আয়ত্ত করল, তখন তারা পাশ্চাত্ত্য দেশের চিন্তাধারার সঙ্গে পরিচিত হল। এই পরিচিতিই তাদের সমাজ, সাহিত্য ও রাজনীতির ক্ষেত্রে নতুন নতুন দিগন্তের দিকে ঠেলে নিয়ে গেল। এই নতুন নতুন দিগন্তের ওপরই ঊনবিংশ শতাব্দীর নবজাগৃতি প্রতিষ্ঠিত হল । মানুষের মন নতুন আলোকের সন্ধান পেল। মানুষ যুক্তিনিষ্ঠ হল। সেই যুক্তিনিষ্ঠতাই সমাজসংস্কারকদের অনুপ্রাণিত করল সামাজিক অপপ্রথাসমূহ দূর করতে।

সেজন্যই সনাতনীদের ছাপাথানার ওপর এক প্রচণ্ড রাগ হয়েছিল। কিন্তু ছাপাখানা থেকে যখন হুড়হুড় করে বই ও সংবাদপত্র বেরুতে লাগল ও দেশের জনসাধারণ তা কিনে পড়তে লাগল, তখন তার স্রোতে ছাপা-বই-বিরোধী সনাতনীরাই ভেসে গেল। বস্তুত ছাপা বই না থাকলে, এদেশে শিক্ষার প্রসার সুগম হত না, ও নবজাগৃতিরও আগমন ঘটত না।

এদিকে গণশিক্ষার প্রসার সাধনে সহায়তা করেছিল বটতলার প্রকাশন সংস্থাসমূহ। বটতলার অবদান অনেক। প্রথম সস্তাদামে বই বিক্রি। দ্বিতীয়, হিন্দু-মুসলমান ঐক্য সাধন। তৃতীয়, সংসাহিত্য (যেমন, রামায়ণ, মহাভারত, শ্রীমদ্ভাগবত, কবিকঙ্কণ চণ্ডী, মনসার ভাসান, লক্ষ্মীচরি প্রভৃতি) ও শিশু পাঠ্য বই ( যথা শিশুবোধক, বর্ণপরিচয়, ধারাপাত ইত্যাদি ) প্রচার। চতুর্থ, গ্রাম-গঞ্জে বই পৌঁছে দেবার জন্য ফিরিওয়ালার প্রবর্তন। (বটতলা সম্বন্ধে লেখকের ‘বাংলা মুদ্রণের দুশো বছর’ দ্রঃ)।

আরও পড়ুন:

Leave a Comment