নৃবিজ্ঞান ও ইতিহাস

নৃবিজ্ঞান ও ইতিহাস নিয়ে আজকের আলোচনা। এই পাঠটি “নৃবিজ্ঞান পরিচিতি” বিষয়ের “নৃবিজ্ঞান ও অন্যান্য জ্ঞানকান্ড” বিভাগের একটি পাঠ। ইতিহাস বলতে আমরা সাধারণভাবে বুঝে থাকি অতীতের ঘটনাবলীর বিবরণ। স্কুল পর্যায়ে ইতিহাস পড়তে গিয়ে আপনাকে নিশ্চয় বিভিন্ন রাজা-বাদশাহদের নাম ও সন তারিখ মুখস্থ করতে হয়েছে, জানতে হয়েছে বিভিন্ন যুদ্ধ-বিগ্রহ ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলী সম্পর্কে।

নৃবিজ্ঞান ও ইতিহাস

নৃবিজ্ঞান ও ইতিহাস | নৃবিজ্ঞান ও অন্যান্য জ্ঞানকান্ড | নৃবিজ্ঞান পরিচিতি

 

এও আপনি ইতোমধ্যে জেনেছেন যে ঊনবিংশ শতাব্দীতে নৃবিজ্ঞানীরাও মানুষের সামাজিক-সাংস্কৃতিক বিবর্তনের ইতিহাস জানতে আগ্রহী ছিলেন। ইতিহাসবিদদের সাথে এক্ষেত্রে নৃবিজ্ঞানীদের মূল পার্থক্য হল, নৃবিজ্ঞানীরা যে ধরনের ইতিহাসের ব্যাপারে আগ্রহী ছিলেন, সেখানে হাজার হাজার বা লক্ষাধিক বছরের প্রক্রিয়াগুলো সম্পর্কে সাধারণভাবে জানতে চাওয়া হয়েছে, যেখানে সুনির্দিষ্ট কোন দিন তারিখ নাম জানার উপায় বা প্রয়োজন কোনটাই ছিল না।

নানান কারণে অবশ্য এ ধরনের বিবর্তনের ইতিহাস অনুসন্ধান থেকে নৃবিজ্ঞানীরা সরে এসেছিলেন বিংশ শতাব্দীর গোড়া নাগাদ, এবং মনোনিবেশ করেছিলেন বিভিন্ন ‘অসাক্ষর’ (non-literate) সমাজ নৃবিজ্ঞানীদের পর্যবেক্ষণ কালে কি অবস্থায় ছিল, তা জানার উপর। এ ধরনের সমাজে যেহেতু প্রচলিত অর্থে কোন ঐতিহাসিক দলিলপত্র ছিল না, ইতিহাসবিদরা সচরাচর তাদের প্রতি কোন মনোযোগ দেখান নি, এবং দীর্ঘদিন যাবত অধিকাংশ নৃবিজ্ঞানীও মনে করেছেন যে তাঁদের গবেষণায় ইতিহাস বিষয়টা ততটা প্রাসঙ্গিক ছিল না।

বিগত দুই তিন দশকের মধ্যে অবশ্য নৃবিজ্ঞান ও ইতিহাসের মধ্যে নূতন নূতন যোগসূত্র স্থাপিত হয়েছে। নৃবিজ্ঞানীরা ক্রমশঃ উপলব্ধি করতে পেরেছেন যে, যে ধরনের সমাজগুলো নিয়ে তাঁরা সচরাচর গবেষণা করেছেন, সেগুলিকে ইতিহাসবিহীন বা ইতিহাস-বহির্ভূত হিসাবে দেখার পেছনে কোন যুক্তি ছিল না।

ফলে নৃবিজ্ঞানীরা যেখানে অতীতে ক্ষুদ্র আয়তনের এক একটা সমাজকে এক একটা দ্বীপের মত করে দেখেছেন, সেখানে এখন চেষ্টা চলছে এ ধরনের সমাজকে ঔপনিবেশিকতাসহ বৃহত্তর পরিসরে ইতিহাসের বিভিন্ন ঘটনাবলীর প্রেক্ষিতে নূতন করে জানার। তাছাড়া এ ধরনের সমাজের সদস্যরা ইতিহাসকে কিভাবে দেখে, ইতিহাসে তাদের ভূমিকা কি, এ জাতীয় বিষয়ও এখন নৃবৈজ্ঞানিক গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ স্থান করে নিয়েছে।

অন্যদিকে প্রথাগত ইতিহাস চর্চায়ও নৃবিজ্ঞানের কিছু কিছু ঐতিহ্য অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। রাজা-বাদশা কেন্দ্রিক ইতিহাস অধ্যয়ন থেকে সরে এসে অনেক ইতিহাসবিদ সামাজিক সাংস্কৃতিক ইতিহাস অধ্যয়নে মনোযোগী হয়েছেন। সাধারণ মানুষ বা প্রথাগত ইতিহাসে উপেক্ষিত কৃষক, নারী, আদিবাসী প্রভৃতি “নিম্নবর্গের’ মানুষদের ইতিহাস অনুসন্ধানের গুরুত্ব ক্রমশঃ ব্যাপক স্বীকৃতি পাচ্ছে। নৃবিজ্ঞানীরা যেমন তাঁদের গবেষণায় মৌখিক উৎস থেকে প্রাপ্ত বিভিন্ন তথ্যকে গুরুত্ব দেন, তেমনি অনেক ইতিহাসবিদও এখন মৌখিক ইতিহাসকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেন।

নৃবিজ্ঞানের সংস্কৃতির ধারণা, স্থানিক প্রেক্ষাপটকে গুরুত্ব দেওয়ার ঐতিহ্য প্রভৃতিও অনেক ইতিহাসবিদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ বিবেচিত হয়েছে। এভাবে বিভিন্ন পর্যায়ে নৃবিজ্ঞান ও ইতিহাসের মিথস্ক্রিয়ায় জ্ঞানচর্চার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য কিছু নূতন ধারা ও দৃষ্টিভঙ্গী সংযোজিত হয়েছে।

 

নৃবিজ্ঞান ও ইতিহাস | নৃবিজ্ঞান ও অন্যান্য জ্ঞানকান্ড | নৃবিজ্ঞান পরিচিতি

 

নৃবিজ্ঞান ও মনোবিজ্ঞান:

মনোবিজ্ঞানে ব্যক্তির মনোজাগতিক কাঠামো, ক্রিয়াকলাপ প্রভৃতি বিষয় অধ্যয়ন করা হয়। তবে শিল্পায়িত পশ্চিমা সমাজের প্রেক্ষিতে, যেখানে মনোবিজ্ঞানের সূচনা, ব্যক্তির মনোজাগতিক প্রবণতা ও ‘ব্যক্তিত্ব’ বিকাশের প্রক্রিয়া সম্পর্কে যেসব অনুমান প্রচলিত, সেগুলো সব ধরনের সমাজে প্রযোজ্য কিনা, এ প্রশ্ন থেকে যায়। নৃবিজ্ঞানীরা এ বিষয়ে অপশ্চিমা সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটে অনুসন্ধান চালিয়েছেন।

আমেরিকায় ‘সংস্কৃতি ও ব্যক্তিত্ব’ অধ্যয়নের একটি ধারা চালু ছিল সাংস্কৃতিক নৃবিজ্ঞানের আওতায়। এ ধারার আর একজন বিখ্যাত নৃবিজ্ঞানী ছিলেন মার্গারেট মীড, যিনি তাঁর Coming of Age in Samoa (১৯২৮) গ্রন্থে দেখাতে চেয়েছিলেন যে, মার্কিন প্রেক্ষাপটে বয়োসন্ধিকালে যে ধরনের মনস্তাত্ত্বিক সংকট দেখা যায়, তা আসলে সাংস্কৃতিকভাবে নির্ধারিত, বাড়ন্ত কিশোর-কিশোরীদের দৈহিক পরিবর্তনের কোন প্রত্যক্ষ বা অনিবার্য ফলাফল নয়। তাঁর পর্যবেক্ষণ অনুসারে সামোয়াতে কৈশোর ছিল অপেক্ষাকৃত একটি সহজ সময়, যা মার্কিন দৃষ্টান্তের বিপরীত।

একই ধারার অন্য একজন নৃবিজ্ঞানী রস্থ বেনেডিক্ট তাঁর Patterns of Culture (১৯৩৪) নামক গ্রন্থে এই বক্তব্য তুলে ধরেছিলেন যে, সমাজভেদে সমাজের সদস্যদের ‘ব্যক্তিত্ব’ দু’একটি প্রধান সাংস্কৃতিক ছাঁচ অনুযায়ী গড়ে ওঠে। যেমন, তাঁর মতে, উত্তর আমেরিকার উত্তর- পশ্চিমাঞ্চলীয় উপকূল এলাকায় বসবাসরত কোয়াকিউটল জনগোষ্ঠীর মধ্যে সবক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি করার প্রবণতাসম্পন্ন ব্যক্তিত্বের প্রাধান্য ছিল। পক্ষান্তরে আদিবাসী জুনিদের মধ্যে দেখা যেত শান্ত-সৌম্য বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন ব্যক্তিত্ব।

একই ধারায় পরবর্তীতে জাপানী, রুশ প্রভৃতি জনগোষ্ঠীর ‘জাতীয় চরিত্র’ অধ্যয়নের চেষ্টা করা হয়েছিল, যেখানে ফ্রয়েডীয় তত্ত্ব ব্যবহার করে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করা হয়েছিল কিভাবে একেকটা সমাজে প্রচলিত শিশু-পরিচর্যার ধরন বিশেষ ধরনের ‘জাতীয় চরিত্র’ গড়ে তোলে। প্রশ্নসাপেক্ষ পদ্ধতিতে পরিচালিত এ ধরনের গবেষণার নির্ভরযোগ্যতা নিয়ে সন্দেহের যথেষ্ট অবকাশ ছিল, কাজেই আজকাল অনুরূপ গবেষণা তেমন একটা হয় না।

মনস্তাত্ত্বিক বিষয়াবলীর তুলনামূলক অধ্যয়নের ক্ষেত্রে ব্রিটিশ নৃবিজ্ঞানী ম্যালিনোস্কিও কিছু অবদান রেখেছিলেন। তাঁর গবেষণায় একটা বহুল-পরিচিত ফ্রয়েডীয় ধারণার সীমাবদ্ধতা তুলে ধরা হয়েছিল। ফ্রয়েডের মতে পুরুষ শিশুরা বেড়ে ওঠার এক পর্যায়ে মাকে একান্ত নিজের করে পেতে চায় এবং পিতাকে প্রতিপক্ষ ভাবতে শুরু করে, যা ‘ইডিপাস কমপ্লেক্স’ (Oedipus complex) নামে অভিহিত।

কিন্তু ম্যালিনোস্কিও ট্রবিরিয়ান্ড দ্বীপপুঞ্জে সম্পাদিত তাঁর মাঠকর্মের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে বলেন যে, সেখানে এ ধরনের কোন প্রবণতা ছিল না। ট্রব্রিরিয়ান্ডবাসীদের সমাজ ব্যবস্থা অনুযায়ী মেয়েরা বিয়ের পরেও স্বগৃহেই অবস্থান করত, যেখানে তাদের সন্তানরা বাস করত ও বেড়ে উঠত। ‘বাবা’র পরিবর্তে শিশুদের তত্ত্বাবধান ও শাসনের দায়িত্ব বর্তাত ‘মামা’দের উপর।

ফলে এ সমাজে ‘মামা-ভাগ্নে’ সম্পর্কটা মোটেও মধুর হাসি ঠাট্টার ছিল না। পক্ষান্তরে পিতা-পুত্র সম্পর্কটা ছিল অনেক সহজ, যাতে ‘ইডিপাস কমপ্লেক্স” ছিল অনুপস্থিত। স্পষ্টতই, সামাজিক-সাংস্কৃতিক নৃবিজ্ঞানীদের এ ধরনের গবেষণা মনোবৈজ্ঞানিক ধ্যানধারণাসমূহকে বিভিন্ন ধরনের সমাজের প্রেক্ষিতে তুলনামূলক দৃষ্টিভঙ্গীতে বিচার করার একটি প্রয়োজনীয় ভিত্তি রচনা করেছে।

 

নৃবিজ্ঞান ও ইতিহাস | নৃবিজ্ঞান ও অন্যান্য জ্ঞানকান্ড | নৃবিজ্ঞান পরিচিতি

 

নৃবি-জ্ঞান ও মানবিক শাস্ত্রসমূহ (Humanities):

উপরে উল্লিখিত জ্ঞানকান্ডসমূহ ছাড়াও অন্যান্য জ্ঞানকান্ডের সাথেও নৃবি-জ্ঞানের বহুমাত্রিক সম্পর্ক রয়েছে। যেমন, ‘মানবিক’ শাস্ত্র বলে যেগুলো পরিচিত, চারুকলা, সাহিত্য, নাট্যতত্ত্ব ইত্যাদি, সেগুলোর সাথেও নৃবি-জ্ঞানের বিভিন্ন যোগসূত্র দেখা গেছে। অতীতে নৃবি-জ্ঞানীরা তথাকথিত আদিম সংস্কৃতিসমূহের প্রেক্ষিতে এ সমস্ত বিষয়ে তুলনামূলক দৃষ্টিভঙ্গী জুগিয়েছেন। সংস্কৃতির যে বিস্তৃততর সংজ্ঞা নৃবি-জ্ঞানীরা ব্যবহার করেছেন, তা শিল্প-সাহিত্য-সঙ্গীত-নৃত্য-নাটক প্রভৃতি বিষয়কে বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে দেখতে সহায়তা

করেছে। অর্থাৎ শুধু এসব বিষয় নিয়েই যে সংস্কৃতি নয়, বরং সংস্কৃতির সামগ্রিক রূপ যে সমাজের সকল ধরনের মানুষের প্রাত্যহিক জীবনযাত্রার মধ্যেই নিহিত রয়েছে, নৃবি-জ্ঞানীদের এই দৃষ্টিভঙ্গী নিঃসন্দেহে মানবিক শাস্ত্রসমূহের চর্চায় নূতন মাত্রা যোগ করতে সহায়তা করেছে।

অন্যদিকে শিল্প-সাহিত্যের জগতে উত্তর-আধুনিকতাবাদের যে ঢেউ সাম্প্রতিক দশকগুলোতে উঠেছে, তা নৃবি-জ্ঞানেও এসে লেগেছে। যেমন, সাহিত্য সমালোচনার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত বিভিন্ন সমকালীন তত্ত্ব ও পদ্ধতি ব্যবহার করে নৃবি-জ্ঞানের অনেক ধ্রুপদী গ্রন্থকে এখন ‘বিনির্মাণ” (deconstruct) করা হচ্ছে।

নৃবি-জ্ঞানীরা যে সব এথনোগ্রাফি রচনা করেছেন, সেগুলোকে এক একটা সংস্কৃতির বিবরণ হিসাবে গণ্য করা হত। কিন্তু এরকম কোন বিবরণই কখনও পূর্ণাঙ্গ হতে পারে না। কাজেই সংস্কৃতির লিখিত বিবরণ তুলে ধরার ক্ষেত্রে নৃবি-জ্ঞানীরা কোন উদ্দেশ্যে কি ধরনের রচনাশৈলী অনুসরণ করেছেন, কতটুকু তাঁরা তুলে ধরেছেন এবং কেন, কি তাঁরা তুলে ধরেন নি, কোন ধরনের পাঠকের জন্য তাঁরা এসব গ্রন্থ রচনা করেছেন, ইত্যাদি প্রশ্নের আলোকে নৃবৈজ্ঞানিক সাহিত্যের পুনঃপরীক্ষণের কাজ চলছে।

স্পষ্টতই, নৃবি-জ্ঞানের সাথে অন্যান্য জ্ঞানকান্ডের বহুমাত্রিক সম্পর্ক রয়েছে, যার অংশবিশেষ মাত্র উপরে আলোচনা করা হল। অন্য সকল জ্ঞানকান্ডের মতই নৃবি-জ্ঞান চর্চার বিভিন্ন ধারাও বিভিন্ন পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে চলছে। এক্ষেত্রে কখনো নৃবি-জ্ঞান অন্যান্য জ্ঞানকান্ড দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে, আবার কখনো অন্যান্য জ্ঞানকান্ডকে করেছে প্রভাবিত।

 

নৃবিজ্ঞান ও ইতিহাস | নৃবিজ্ঞান ও অন্যান্য জ্ঞানকান্ড | নৃবিজ্ঞান পরিচিতি

 

সারাংশ:

সামাজিক বিজ্ঞানসমূহের মধ্যে তিনটি সুপরিচিত ও প্রতিষ্ঠিত জ্ঞানকান্ড হল সমাজবিজ্ঞান, অর্থনীতি ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান, যেগুলির সাথে ঐতিহ্যগতভাবে নৃবি-জ্ঞানের পার্থক্য গড়ে উঠেছে এক ধরনের বিদ্যাজাগতিক শ্রমবিভাজনের ভিত্তিতে। নৃবি-জ্ঞানীরা সমাজের সংগঠন দেখতে গিয়ে জ্ঞাতিসম্পর্ক, বিয়ে ও বংশধারার প্রতি প্রচুর মনোযোগ দিয়েছেন, কারণ সরল বা আদিম বলে বিবেচিত যে ধরনের সমাজ সম্পর্কে নৃবি-জ্ঞানীরা প্রত্যক্ষ জ্ঞান লাভে সচেষ্ট ছিলেন।

এ ধরনের সমাজে বিত্ত, ক্ষমতা বা মর্যাদার তারতম্যের ভিত্তিতে প্রকট কোন সামাজিক অসমতা নৃবি-জ্ঞানীরা দেখেন নি, ফলে সামাজিক স্তরবিন্যাস, শ্রেণী ইত্যাদি বিষয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা বিশ্লেষণে তাঁদের সচরাচর যেতে হয় নি। পক্ষান্তরে জ্ঞাতিসম্পর্কের মত বিষয়ের তুলনায় শেষোক্ত বিষয়াদি নিয়ে সমাজবিজ্ঞানীদের অনেক বেশী মাথা ঘামাতে হয়েছে। নৃবৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে অপেক্ষাকৃত সরল ধরনের সমাজের প্রেক্ষিতে অর্থনৈতিক বা রাজনৈতিক হিসাবে আলাদা করে শনাক্ত করা যায়, এমন কর্মকান্ড বা প্রতিষ্ঠানও বিরল।

এ ধরনের সমাজে ‘বাজার ব্যবস্থা” বলে কিছু ছিল না বা থাকলেও সেটাই অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের মূল নির্ধারক ছিল না। ফলে যেখানে অর্থনীতিবিদরা ব্যস্ত থেকেছেন বাজার ব্যবস্থার গতিপ্রকৃতি বোঝার কাজে, সেখানে নৃবি-জ্ঞানীদের অনেকে দেখতে চেয়েছেন বাজার ব্যবহার অনুপস্থিতিতে বা এর বাইরে বিভিন্ন সামাজিক সম্পর্কের সূত্র ধরে কিভাবে অর্থনৈতিক লেনদেন সম্পন্ন হয়।

একইভাবে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের নজরের কেন্দ্রবিন্দু রাষ্ট্র। একইভাবে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের নজরের কেন্দ্রবিন্দু রাষ্ট্র, সেখানে নৃবি-জ্ঞানীরা এমন সমাজের কথা বলেন যাদের মধ্যে রাষ্ট্রব্যবস্থা বা ক্ষমতার কোন কেন্দ্রীভূত রূপ ছিল না। বিগত দুই তিন দশকের মধ্যে অবশ্য নৃবি-জ্ঞান ও ইতিহাসের মধ্যে নূতন নূতন যোগসূত্র স্থাপিত হয়েছে।

নৃবি-জ্ঞানীরা ক্রমশঃ উপলব্ধি করতে পেরেছেন যে, যে ধরনের সমাজগুলো নিয়ে তাঁরা সচরাচর গবেষণা করেছেন, সেগুলিকে ইতিহাসবিহীন বা ইতিহাস- বহির্ভূত হিসাবে দেখার পেছনে কোন যুক্তি ছিল না। নৃবি-জ্ঞানের সংস্কৃতির ধারণা, স্থানিক প্রেক্ষাপটকে গুরুত্ব দেওয়ার ঐতিহ্য প্রভৃতিও অনেক ইতিহাসবিদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ বিবেচিত হয়েছে।

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment