অন-একরৈখিক বংশধারা

আজকের আলোচনার বিষয় অন-একরৈখিক বংশধারা – যা সামাজিক কাঠামো ও জ্ঞাতিত্ব এর অর্ন্তভুক্ত, অনুষঙ্গিক বংশধারা: বংশধারা হলো প্রজন্মের ধারা। পূর্ববর্তী প্রজন্মের সাথে বর্তমান প্রজন্মের সম্পর্ক চিহ্নিত হয় এর মাধ্যমে। এটি নির্ধারিত হয় ব্যক্তি বা ইগোর মাতা বা পিতার সাপেক্ষে। মায়ের দিক থেকে নির্ধারিত হলে মাতৃসূত্রীয় এবং বাবার দিক থেকে হলে পিতৃসূত্রীয় বংশধারা। যেকোন একদিক থেকে নির্ধারিত হয় বলে একে “Unilineal Descent System” বা “একরৈখিক বংশধারা” বলা হয়। ফোর্টেস এর উপর জোর দিয়েছিলেন।

ফোর্টেস জ্ঞাতি সম্পর্ককে সমাজের মূল উপাদান হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন। তার মতে রাজনৈতিক ও ধর্মীয় পরিচয় পরিবর্তনের সুযোগ থাকলেও জ্ঞাতি বা বংশ পরিচয় অপরিবর্তনীয় এবং অনিবার্য। যেকারণে এটি অন্য যেকোন প্রতিষ্ঠান থেকে স্বতন্ত্র ভাবে বিরাজ করে। নিজের মাঠকর্মের উপাত্তের আলোকে তিনি দেখিয়েছেন আফ্রিকার যেসব অঞ্চলে রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান অনুপস্থিত সেখানে একরৈখিক বংশধারার নীতি সমাজ কাঠামোতে ধারাবাহিকভাবে কার্যকর থাকে।

অনুষঙ্গিক বংশধারা নীতি বলতে নৃবিজ্ঞানীগণ বোঝেন সেইসব গোষ্ঠী যাদের বংশীয় পরিচয় সমানভাবে নির্ধারিত হয়ে থাকে পুরুষ এবং নারীর মাধ্যমে অথবা দুটোর সংমিশ্রনের মাধ্যমে।

 

অন-একরৈখিক বংশধারা

 

অন-একরৈখিক বংশধারা

 

আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন
আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

একরৈখিক সূত্রিতা এবং অন-একরৈখিক সূত্রিতা – এ দুটোর মধ্যে পার্থক্য থাকলেও মিলও রয়েছে এই অর্থে যে, বংশীয় পরিচয় নির্ধারিত হয়ে থাকে পূর্বসূত্রিতার মাধ্যমে। অনুষঙ্গিক নীতির ভিত্তিতে সংগঠিত বংশীয় দল হচ্ছে সেটি যার সদস্য নির্ধারিত হতে পারে পূর্বপুরুষ অথবা পূর্বনারীর মাধ্যমে,

 

অন-একরৈখিক বংশধারা

 

একাদিক্রমে পুরুষ অথবা নারী সূত্রিতার মাধ্যমে, অথবা এ দুটো সূত্রিতার বিভিন্ন ধরনের সমন্বয়ের মাধ্যমে। অন্য কথায়, পূর্বসূরী যেমন হতে পারেন নারী কিংবা পুরুষ, আবার একই সাথে, সেই পূর্বসূরীর সাথে সূত্রিতার সম্পর্ক একান্তভাবে নারী বা পুরুষের মাধ্যমে নয়।

 

Complementary Filiation

Complementary Filiation হলো ব্যক্তির বংশধারা গোষ্ঠীর বিপরীত ধারার সাথে সম্পর্কিত অধিকার, বাধ্যবধকতা এবং অনুভূতির সমাহার। অর্থাৎ, পিতৃসূত্রীয় বংশধারার সাপেক্ষে মাতৃসূত্রীয় ধারা হল ব্যক্তির Complementary Filiation । যে সমস্ত সমাজে একরৈখিক বংশধারা অনুসরন করা হয়, সেসব সমাজে বিপরীত দিকের আত্নীয়দেরও স্বীকৃতি দেওয়া হয়; যদিও তারা আনুষ্ঠানিকভাবে বংশধারা গোষ্ঠীর সদস্য নয়। যেমন কোন ট্রাইবের মধ্যে যদি পিতৃসূত্রীয় সমাজ থাকে, তবে বিশেষ করে মায়ের ভাই তথা মামা কিংবা নানা-নানীর সাথে গুরুত্বপূর্ণ সামাজিকভাবে স্বীকৃত সম্পর্ক দেখা যায়। একইভাবে মাতৃসূত্রীয় সমাজে চাচা কিংবা দাদা-দাদীর সাথে এমন সম্পর্ক বিরাজ করে।

এক্ষেত্রে দেখা যায় ব্যক্তি তার নিজের বংশধারা থেকে যে ধরণের সম্পদ ও পদমর্যাদা পায়, তার Complementary Filiation থেকে ভিন্ন ধরণের সম্পদ ও পদমর্যাদা লাভ করবে। পিতৃসূত্রীয় সমাজে ব্যক্তি পিতার দিক থেকে স্থাবর সম্পদ, সম্মান ও পদমর্যাদা লাভ করে থাকে; অন্যদিকে মায়ের দিক থেকে সে বিভিন্ন ঐতিহ্যগত হাতিয়ার বা অলংকারাদি পেয়ে থাকে।

Descent বা বংশ জোড় দেয় ব্যক্তির সাথে পূর্বপুরুষের সম্পর্ককে। Complementary Filiation গুরত্ব দেয় আত্মীয়তার সামাজিক বন্ধনকে। এই ব্যাপারটির গুরত্ব ভালোভাবেই পরিলক্ষিত হয় ট্যালেন্সিদের সমাজে। মেয়ার ফোর্টেস দেখান, স্বার্থ,অধিকার, বিশ্বস্ততা প্রভৃতি আসলে পরিপূরকভাবে মাতৃ ও পিতৃসূত্রে বিরাজ করে। গোষ্ঠীগুলোর যৌথতার পেছনে কেবলমাত্র বংশধারার নীতি নয়, Complementary Filiation-ও ভূমিকা রাখে।

ক্রিয়াবাদ ফোর্টেসের সময়েই গুরুত্ব হারাতে শুরু করে। তা সত্ত্বেও ফোর্টেস ক্রিয়াবাদে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। তার Complementary Filiation তত্ত্বের পূর্বে ক্রিয়াবাদ কেবল আনুষ্ঠানিক বংশধারা নিয়েই কাজ করতো। মনে করা হতো প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের উত্তরাধিকারই জ্ঞাতির ক্রিয়া। ফলে জ্ঞাতিসম্পর্ককে কেবলমাত্র একটা সামাজিক সংগঠনের একক ধরা হতো। ফোর্টেসই প্রথম জ্ঞাতি সম্পর্কের বিপরীত দিকটি উন্মোচন করেন।

 

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment