আদিম সমাজের আগুন ও রান্না

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় আদিম সমাজের আগুন ও রান্না। কুড়ি লাখ বছর বা তার চেয়েও বেশি আগে আদিম মানুষ গুহায় বাস করতো৷ কিন্তু তাদের খাবার দাবার কেমন ছিল? এসব নিয়ে অনেকের আগ্রহ আছে। নৃবিজ্ঞানের আজকের পাঠে সেসব নিয়ে আলোচনা।

আদিম সমাজের আগুন ও রান্না

 

আদিম সমাজের আগুন ও রান্না

 

আদিম সমাজের আগুন ও রান্না

আগুনের ব্যবহার আদিম মানুষের এক বড় আবিষ্কার। আগ্নেয়গিরি বা জ্বলন্ত প্রাকৃতিক গ্যাস বা দাবাগ্নি থেকেই হয়তো মানুষ প্রথম আগুন আহরণ করেছিল। আগুনের ব্যবহার আয়ত্ত করার পরও বহুকাল পর্যন্ত অবশ্য মানুষ নিজের হাতে আগুন জ্বালাতে শেখেনি। প্রথমদিকে মানুষ আগুন দিয়ে শীত নিবারণ করত এবং পশুদের হাত থেকে আত্মরক্ষা করত।

কালক্রমে মানুষ চকমকি পাথর ঠুকে এবং আরও পরে কাঠে কাঠ, ঘষে আগুন জ্বালাতে শেখে। তা ছাড়া আদিম শিকারী মানুষ আগুনের সাহায্যে রান্না করতেও শেখে। রান্নার প্রক্রিয়া মানুষকে শুধু সুস্বাদু এবং তৃপ্তিকর খাদ্যই দেয়নি, অনেক যুগান্তকারী আবিষ্কারের সূচনাও করেছিল। পাথরের হাতকুড়াল, বল্লম, তীর, ধনুক প্রভৃতি হাতিয়ার যেমন সর্বপ্রথম পদার্থবিদ্যা এবং বলবিদ্যার ভিত্তি রচনা করেছিল, আগুন এবং রন্ধনবিদ্যা তেমনি রসায়নবিদ্যার সূত্রপাত ঘটেছিল।

রান্না আসলে একটা রাসায়নিক প্রক্রিয়া। আবার কাঠিতে মাংস গেঁথে আগুনে পোড়ানো এবং শক্ত ফলমূল পোড়ানো খুব কঠিন নয়। কিন্তু পানিতে খাবার সিদ্ধ করা একটা কঠিন সমস্যা এবং এ সমস্যার সমাধান করতে গিয়েই অনেক নতুন জিনিসের আবিষ্কার হল। প্রথম প্রথম চামড়ার পাত্র বা পানি নিরোধক বাঁশ-বেতের ঝুড়িতে গরম পাথর ফেলে পানি ফুটানোর চমৎকার পদ্ধতির আবিষ্কার হয়।

 

আদিম সমাজের আগুন ও রান্না

 

কালক্রমে মানুষ আবিষ্কার করে যে বাঁশ বা বেতের ঝুড়ি মাটি দিয়ে লেপে সেটা আগুনে পোড়ালে তা পানি নিরোধক পাত্রে পরিণত হয়। ক্রমশ মানুষ আরও শিখল যে বেতের ঝুড়িটা আসলে অপ্রয়োজনীয়, কাদা মাটির পাত্র আগুনে পোড়ালে তাতে পানি রাখা, সিদ্ধ করা, রান্না করা— সবই সম্ভব হয়। এ ভাবেই মধ্যোপলীয় যুগে বা নবোপলীয় যুগের শুরুতে মাটির পাত্র আবিষ্কৃত হয়।

 

আদিম যুগের গুহাবাসীদের খাদ্যাভাস নিয়ে গবেষনা (DW Report):

আদিম যুগের গুহাবাসীদের খাবার অভ্যাস বা কী ধরনের খাবার থেকে তাঁরা পুষ্টি পেতেন, সে সব কিছু সম্পর্কে জানার জন্যই বিজ্ঞানীদের এই গবেষণা৷ তবে এছাড়াও বিজ্ঞানীদের কিন্তু আরেকটি উদ্দেশ্য আছে এই গবেষণার পেছনে৷ আর সেটি হচ্ছে, শিকার করার পরে কী ভাবে মানুষ সেই খাবার খেতেন, সে কথাও এবার জানতে চান বিজ্ঞানীরা৷ কারণ, সেই কথা জানতে পারলে হয়তো আধুনিক যুগের খাবারে পুষ্টির পরিমাণ আরো বাড়ানো যেতো বা খাবারের পুষ্টি অটুট রাখা যেতো৷

২৫ লাখ বছর আগে থেকে প্রায় ১২ হাজার বছর আগে পর্যন্ত, অর্থাৎ প্রস্তরযুগে, আমাদের পূর্বপুরুষদের খাবারের অভ্যাস নিয়ে অনেক ধরনের ধারণা প্রচলিত আছে৷ এ পর্যন্ত মূলত ভাবা হতো যে, সেই সময় আমাদের পূর্বপুরুষরা সব্জি, ফলমুল, বাদাম, নানা রকম শেকড়বাকর এবং মাংস খেয়ে বেঁচে থাকতেন৷

প্রায় ১০ হাজার বছর আগে ছিল কৃষিকাজের একেবারে প্রাথমিক যুগ৷ সেই সময় কিন্তু আলু, রুটি বা দুধ – মানে যেগুলোকে আমরা প্রধান খাবার বলে মনে করি, এই ধরনের খাবার-দাবারের প্রচলন ছিল না৷ তাহলে এখন আমরা যা খাই, সেই অভ্যাসই অটুটু রাখবো না কী আমাদের পূর্ব পুরুষদের খাবারের অভ্যাসে ফিরে যাবো? মজার বিষয় হচ্ছে, এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই প্রখ্যাত কোম্পানি ইউনলিভার, নৃতত্ত্ব, খাদ্যবিজ্ঞান এবং উদ্ভিদবিজ্ঞানের বিশেষজ্ঞদের একসঙ্গে কাজের জন্যে এনেছে৷

ইউনিলিভারের গবেষণার দায়িত্বে রয়েছেন ড. মার্ক বেরী৷ তিনি বলেন, সেই সময় অর্থাৎ প্রস্তরযুগের খাদ্য অভ্যাস থেকে উদ্দিপনা নিয়েই বর্তমান যুগের মানুষের জন্যে একটি স্বাস্থ্যকর খাবার সৃষ্টি করাই, এই গবেষণার লক্ষ্য৷ ড.বেরী বলেন, প্রস্তরযুগের খাদ্যাভ্যাসের মেন্যুতে উল্লেখযোগ্য খাবার ছিল প্রচুর পরিমাণে লতা-গুল্ম বা শাক-সব্জি৷ আমরা চেষ্টা করি দিনে অন্তত পাঁচ ভাগ ফল এবং সব্জি খেতে, কিন্তু প্রস্তরযুগের আদিম মানুষরা খেতেন, দিনে ২০ থেকে ২৫ ভাগ নিরামিষ খাবার৷

তাহলে প্রচলিত ধারণা অনুয়ায়ী, প্রস্তরযুগের মানুষ মাংসাশী ছিলেন না৷ তাঁরা সর্বভুক ছিলেন৷ খেতেন সবকিছু, ভালোবাসতেন সবুজ৷

Leave a Comment