আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় আলেকজান্ডারের আক্রমণ। আলেকজান্ডারের ভারত আক্রমণ ভারতের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এর ফলে উপমহাদেশের সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিজয়ী গ্রিকদের সভ্যতা, সংস্কৃতি ও চিন্তাভাবনার সাথে পরিচিত হয়ে ওঠার সুযোগ পায়। উত্তর-পশ্চিম উপমহাদেশ ও মগধের সাথে রেশম, মশলা ও সোনাকে কেন্দ্র করে গ্রিক তথা ইউরোপের বাণিজ্যের বিকাশ ঘটে। শিল্প, সংস্কৃতি, লিখন-পদ্ধতি, শাসন ব্যবস্থা, যুদ্ধরীতি, প্রভৃতি নানা বিষয়ে এই অভিযানের প্রভাব ছিল সুদূরপ্রসারী।
পারস্য বিজয়ের পর শুরু হয় ম্যাসিডনের তরুণ রাজা আলেকজান্ডারের ভারত আগ্রাসন। খ্রিস্টপূর্ব ৩৩১ অব্দে তিনি পারস্য সাম্রাজ্য আক্রমণ করেন। ও সে দেশ বিজয় সম্পূর্ণ করে সাম্রাজ্যের পূর্বদিকে অগ্রসর হন। সে সময় সিন্ধু নদ অর্থাৎ ভারতীয় উপমহাদেশের পশ্চিম সীমান্ত পর্যন্ত পারস্য সাম্রাজ্যের সীমানা বিস্তৃত ছিল।
আলেকজান্ডারের আক্রমণ
আলেকজাণ্ডারের আক্রমণ
খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতাব্দীতে গ্রীসের ম্যাসিডন রাজ্যের রাজা ফিলিপের পুত্র আলেকজাণ্ডার এশিয়া অভিযানে বহির্গত হন। কয়েক বছরের মধ্যে তিনি পশ্চিম এশিয়া ও বিশাল পারস্য সাম্রাজ্য দখল করে হিন্দুকুশ পর্বত অতিক্রম করে ভারতে প্রবেশ করেন। তৎকালীন উত্তর-পশ্চিম ভারতের ছোট ছোট রাজ্যগুলির অনৈক্য তাঁর অভিযান সহজতর করে তোলে। এর মধ্যে তক্ষশীলা রাজ্যের রাজা অম্ভি আলেকজাণ্ডার-এর সাথে রীতিমতো সহযোগিতা করেন।
একমাত্র ঝিলাম ও চেনাব নদীর মধ্যবর্তী রাজ্যের রাজা পুরু তাঁর সাধ্যমতো আলেকজাণ্ডারকে বাধা দিতে চেষ্টা করেন। যুদ্ধে তিনি পরাজিত হলেও তাঁর সাহস ও বীরত্বে মুগ্ধ হয়ে আলেকজাণ্ডার পুরুর রাজত্ব তাঁকে ফিরিয়ে দেন এবং তাঁর সাথে সন্ধি করেন।
পূর্বদিকে আরও অগ্রসর হওয়ার ইচ্ছা আলেকজাণ্ডারের থাকলেও সৈন্যদের অনিচ্ছা ও অসহযোগিতার দরুন তাঁকে ফিরে যেতে হয়। দেশে ফেরার পথে ব্যবিলনে তাঁর মৃত্যু ঘটে— মাত্র বত্রিশ বছর বয়সে, ৩২৩ খ্রিস্ট পূর্বাব্দে।

আলেকজাণ্ডারের ভারত আক্রমণের তেমন কোনো সুদূর প্রসারী ফলাফল প্রত্যক্ষ করা যায়নি। তাঁর সাম্রাজ্য তাঁর মৃত্যুর পর প্রধান সেনাপতিদের মধ্যে বিভক্ত হয়ে যায়। ভারতের অংশটুকু সেনাপতি সেলুকাসের ভাগে পড়ল। অল্প কিছুদিন পরে সেটুকু তাঁর হাতছাড়া হয়ে যায়। আলেকজাণ্ডারের ভারত আক্রমণের রাজনৈতিক প্রভাব এত কম ছিল যে, প্রাচীন ভারতের ইতিহাস ও সাহিত্যের কোথাও এ বিষয়ের সামান্যতম উল্লেখও পাওয়া যায়নি।
তবে পরোক্ষভাবে এর প্রভাব যে কিছু ছিল তা অস্বীকার করার উপায় নেই।
প্রথমত, এর দ্বারা প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য দেশের মধ্যে যাতায়াত ও বাণিজ্যের পথ প্রশস্ত হয়।
দ্বিতীয়ত, গ্রীক ও ভারতীয় সংস্কৃতির সংমিশ্রণে গান্ধারশিল্পের উৎপত্তি ও প্রসার ঘটে। শেষত, গ্রীক আক্রমণের দরুন উত্তর-পশ্চিম ভারতের রাজ্যগুলি যে শক্তিহীন হয়ে পড়ে, তার ফলে চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের পক্ষে সমগ্র উত্তর ভারতে একটি বিশাল সাম্রাজ্য গড়ে তোলা সম্ভব হয়।
আরও দেখুন :