উদ্যান কৃষি সমাজ 

আজকের আলোচনার বিষয় উদ্যান কৃষি সমাজ  – যা  প্রাক্ পুঁজিবাদী আর্থব্যবস্থা এর অর্ন্তভুক্ত,  কৃষিভিত্তিক সমাজ থেকে উদ্যান-কৃষি সমাজের মূল পার্থক্য হচ্ছে প্রযুক্তিতে। যদিও কখনো কখনো কৃষি বলতে সাধারণভাবে যে কোন ধরনের চাষকেই বোঝায় – এমনকি উদ্যান-কৃষিও, কিন্তু উদ্যান-কৃষিকে – | কৃষিভিত্তিক সমাজ থেকে আলাদা রাখা হয়ে থাকে। উদ্যান-কৃষির বৈশিষ্ট্য হ’ল: এই ব্যবস্থায় কোন জমি নিরন্তর কিংবা চিরস্থায়ী হিসেবে চাষাবাদে ব্যবহৃত হয় না। বরং, একবার চাষ হবার পর কিছুকাল তা অনাবাদী বা পতিত জমি হিসেবে ফেলে রাখা হবে।

উদ্যান কৃষি সমাজ

 

উদ্যান কৃষি সমাজ 

 

নৃবিজ্ঞানীরা এই বৈশিষ্ট্যকে গুরুত্ব দিয়ে দেখেছেন। | ফলে উদ্যান-কৃষির আরেকটি নাম হচ্ছে বিস্তৃত কৃষি বা extensive agriculture। সেক্ষেত্রে ‘কৃষিভিত্তিক সমাজের নামকরণ করা হয় নিবিড় কৃষি বা intensive agriculture। প্রযুক্তির ক্ষেত্রে আরেকটি পার্থক্য জোর দিয়ে বলা হয়ে থাকে। এই ধরনের খাদ্য উৎপাদন সমাজগুলোতে চাষাবাদের জন্য নিড়ানি এবং খোদন কাঠির মত যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। অর্থাৎ, কৃষিভিত্তিক সমাজে উৎপাদনের জন্য গৃহপালিত গবাদিপশু, সেচ কিংবা লাঙ্গলের উপর যে নির্ভরশীলতা তার থেকে এই সমাজ একেবারেই ভিন্ন।

 

আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন
আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

সাধারণভাবে নিবিড় কৃষির তুলনায় এই ব্যবস্থায় জমি প্রতি ফসলের পরিমাণ কম হয়ে থাকে। কিন্তু এ সকল সমাজের সদস্যদের খেয়ে পরে বাঁচার মত যথেষ্ট পরিমাণ খাবার তাঁরা উৎপাদন করেন বলে নৃবিজ্ঞানীদের বক্তব্য। তাঁরা নিজেদের খেয়ে বাঁচার মত পরিমাণ খাদ্যই সাধারণত উৎপাদন করেন, বাজারে বিক্রি করার মত বাড়তি উৎপাদন করেন না। ধারণা করা হয় যে, এ ধরনের সমাজে বর্গ মাইল প্রতি ১৫০ জনের মত মানুষজন থাকেন। তবে নিউ গিনিতে মিষ্টি আলুর উৎপাদন দিয়ে বর্গ মাইল প্রতি প্রায় ৫০০ লোকের খাদ্য সরবরাহ হয়ে থাকে।

শুকনো এলাকায় এরকম সমাজের নজির পাওয়া গেছে, যেমন: উত্তরপূর্ব আরিজোনার হোপি ইন্ডিয়ান। তবে গ্রীষ্মীয় বনভূমি অঞ্চলে এরকম সমাজ আরও বেশি দৃষ্টিগোচর হয়। যেমন: দক্ষিণপূর্ব এশিয়া, সাব-সাহারা আফ্রিকা, কিছু প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপ এবং দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের আমাজন বেসিন। উদ্যান-কৃষিতে চাষের একটা ধরন হচ্ছে সুইডেন (swidden) বা স্ল্যাশ এন্ড বার্ন ( slash and burn) পদ্ধতি। কোন একটা ভূমিখন্ডের গাছ কেটে পরিষ্কার করে ফেলা হয় এবং সেখানকার ঝোপঝাড়ে আগুন দেয়া হয়। পোড়া গাছগুলি জমিতে ফেলে রাখা হয় যাতে রোদে জমি শুকিয়ে না যায়। এই ছাই সার হিসেবে কাজ করে এবং জমিতে প্রাণসঞ্চার করে।

 

উদ্যান কৃষি সমাজ 

 

এর পরে এখানে চাষ করা হয়। কোন জমিতে কয়েক বছর চাষাবাদ করার পর আবার কয়েক বছর এইভাবে ফেলে রাখা হয়। বাংলাদেশের পার্বত্য এলাকায় জুমচাষ নামে যে চাষাবাদ প্রচলিত তাকেও এই ধরনের পদ্ধতি বলা হয়। একটা ব্যাপার মনে রাখা দরকার। তা হচ্ছে: এই ব্যবস্থায় মানুষের শ্রম খুবই অল্প ব্যবহৃত হয়। উদ্যান-কৃষি ব্যবস্থা ক্রমাগত কমে আসছে দুনিয়া ব্যাপী কৃষির বিস্তারের চাপে। বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় পলিসি এবং ভূমির মুনাফাকেন্দ্রিক ব্যবহার জুমচাষকে বিলোপ করছে।

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment