আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় এন্টোনিন রাজবংশ
এন্টোনিন রাজবংশ
এন্টোনিন রাজবংশ
দ্বিতীয় শতাব্দীতে রোম এন্টোনিন রাজবংশ দ্বারা শাসিত হয়। ডোমিটিয়ানের মৃত্যুর পর সিনেট নার্ভা নামক একজন সাধারণ নাগরিককে রোমের সিংহাসনে বসায়। সম্রাট নার্ভা (৯৬ খ্রিঃ-৯৮ খ্রিঃ) ডোমিটিয়ান কর্তৃক নির্বাসিতদের দেশে ফিরে আসার অনুমতি দেন এবং জনগণের উপর আরোপিত অনেক কর মওকুফ করে দেন।
নার্ভার মৃত্যুর পর তাঁর পালিত পুত্র ট্রেজান রোমের সম্রাট হন (৯৮ খ্রিঃ-১১৭ খ্রিঃ) টেজানের সময় রাজ্যের সীমা ডেসিয়া, আর্মেনিয়া, আরব ও মেসোপটেমিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। রোম সাম্রাজ্যের সর্বোচ্চ বিস্তার ট্রেজানের সময়েই ঘটেছিল। ট্রেজান-এর পরবর্তী শাসক ছিলেন হেড্রিয়ান (শাসনকাল ১১৭ খ্রিঃ-১৩৮ খ্রিঃ)। হেন্ড্রিয়ানের পরে সম্রাট হয়েছিলেন যথাক্রমে এন্টোনিনাস পায়াস্ (১৩৮ খ্রিঃ-১৬১ খ্রিঃ পর্যন্ত) এবং মার্কাস্ অরেলিয়াস (১৬১ খ্রিঃ-১৮০ খ্রিঃ পর্যন্ত)।
মার্কাস অরেলিয়াস-এর শাসনকালেই বর্বর জার্মান জাতি সর্বপ্রথম রোম সাম্রাজ্যের সীমান্তে আক্রমণ চালায়। দ্বিতীয় শতাব্দীতে রোম সাম্রাজ্যের সর্বোচ্চ বিস্তার ঘটে। উত্তরে স্কটল্যাণ্ড থেকে দক্ষিণে নীলনদ পর্যন্ত এবং পাশ্চিমে আটলান্টিকের উপকূল থেকে পূর্বে পারস্য উপসাগরের সীমা পর্যন্ত এ সাম্রাজ্য বিস্তৃত ছিল। দাসভিত্তিক সমাজ ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থার চূড়ান্ত রূপ আমরা দেখতে পাই এ শতাব্দীতে।
দেশের প্রায় সমগ্র ভূসম্পদ ও কারিগরি শিল্পকে কেন্দ্র করে এ অর্থনীতি গড়ে উঠেছিল ব্যাপক দাশশ্রমের ভিত্তিতে। বহির্বাণিজ্যের যথেষ্ট প্রসার ঘটে। ফলে দাস-মালিকগণ তাদের ক্রীতদাসদের অমানুষিক শ্রমে নিয়োজিত করে সর্বোচ্চ মুনাফা আদায় করতে থাকে। শোষণ ও নির্যাতনের পরিমাণ এত অধিক মাত্রায় বেড়ে গিয়েছিল যে, ক্রীতদাসদের পক্ষে তা সহ্যের সীমা অতিক্রম করে গিয়েছিল। ক্রীতদাসরাও এখন হিংস্র জীবে পরিণত হয়ে পড়ে।

সামান্য কারণে তাদের জেলে অটকে রাখা, চাবুক মারা ও একেবারে মেরে ফেলা ছিল নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। ক্রীতদাসদের সর্বক্ষণ ভয় ও ভীতি দেখিয়ে কাজ আদায় করতে হত এবং এভাবে তাদের শ্রমকে নিয়োজিত করে রোমের দাসমালিকগণ মুনাফার পাহাড় গড়ে তোলে। রোমান সাম্রাজ্যের এই সমৃদ্ধি শুধুমাত্র রোম বা তার আশেপাশেই সীমাবদ্ধ ছিল না, সমগ্র ইতালি উপদ্বীপ,গল,স্পেন ও প্রাচ্যের দূর-দূরান্তে এ সমৃদ্ধি ছড়িয়ে পড়েছিল।
এশিয়া মাইনর ও সিরিয়ার উপকূল ধরে অনেকগুলি বাণিজ্য বন্দর গড়ে ওঠে এবং এগুলির মাধ্যমে ভারত, চীন ও পূর্বের দেশগুলির সাথে রোমের বাণিজ্য সম্পর্ক স্থাপিত হয়। এ সমৃদ্ধি রোমে উচ্চশ্রেণীর নাগরিকদের জীবনযাত্রার মানকে বহুগুণ উন্নীত করে। রোমের সম্রাট, অমাত্য, পাত্রমিত্র, সেনাধ্যক্ষগণ, প্রাদেশিক শাসকগণ, উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মচারী, পুরোহিতবৃন্দ, ধনী ব্যবসায়ী ও দাস-মালিকগণ চরম বিলাসিতায় আকন্ঠ নিমজ্জিত হয়ে এক পরম সুখের জীবন যাপন করছিলেন।
এদের সুখের উপকরণ যোগাতে গিয়ে রোমান সাম্রাজ্যের অধিকাংশ কৃষককে ভূমিহীন সর্বহারায় এবং ক্রমে ক্রমে ঋণদাস ও পরে ক্রীতদাসে পরিণত হতে হয়। লক্ষ লক্ষ ক্রীতদাসকে অমানুষিক শ্রমে জীবনীশক্তি ক্ষয় করে ক্রমশ নিঃশেষ হয়ে যেতে হয়। আর রোমান সাম্রাজ্যের অগণিত সাধারণ নাগরিককে বিপুল করভারে নিষ্পেষিত হয়ে সর্বস্ব হারাতে হয়।
এর পরিণামস্বরূপ দেখা দেয় প্রচণ্ড অরাজকতা— সামরিক বাহিনীর স্বেচ্ছাচারিতা, ঘন ঘন দাসবিদ্রোহ ও সর্বশেষে বহিঃশত্রুর আক্রমণ। রোমের সাম্রাজ্যবাদী নীতি ও ক্রীতদাসপ্রথার পরিণাম এমন ভয়াবহভাবে দেখা দিল, যা সমগ্র রোমান সাম্রাজ্য তার সর্বশক্তি দিয়েও প্রতিরোধ করতে সক্ষম হল না ।
আরও দেখুন :