গ্রীক দর্শনের পরিচয়

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় গ্রীক দর্শনের পরিচয়

গ্রীক দর্শনের পরিচয়

 

গ্রীক দর্শনের পরিচয়

 

গ্রীক দর্শনের পরিচয়

গ্রীক দর্শনের উৎপত্তি ঘটেছিল খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীতে, মাইলেসীয় দার্শনিকদের প্রচেষ্টার ফল হিসেবে। এই দার্শনিকরা ছিলেন মাইলেটাস্-এর অধিবাসী। মাইলেটাস্ ছিল এশিয়া-মাইনরের উপকূলে অবস্থিত এবং আয়োনিয়ার অন্তর্গত একটি নগররাষ্ট্র। এ দর্শনকে তাই মাইলেশীয় বা আয়োনীয় দর্শন নামে অভিহিত করা হয়। আয়োনীয় দৰ্শন ছিল বৈজ্ঞানিক ও বস্তুবাদী দর্শন। আয়োনীয় বিজ্ঞানও ছিল আধুনিক বিজ্ঞান ও দর্শনের আদি জননী।

আয়োনিয়াতে অতি প্রাচীনকালে বৈজ্ঞানিক চিন্তার উদয়ের বিশেষ কারণ আছে। মাইলেটাস ভৌগোলিকভাবে মিশর ও ব্যাবিলন এ দুই প্রাচীন সভ্যতার নিকটবর্তী হবার ফলে প্রাচীন কারিগরি ও বৈজ্ঞানিক জ্ঞান আহরণ করা আয়োনীয় পণ্ডিতদের পক্ষে সহজ হয়েছিল। অপরপক্ষে আয়োনিয়াতেই তিনশো বছর আগে হোমার যে সংস্কারহীন মানবতাবাদী মুক্ত চিন্তাধারার সৃষ্টি করেছিলেন সেটাই আয়োনীয় বিজ্ঞানের মানসভূমি সৃষ্টি করেছিল।

ষষ্ঠ শতাব্দীতে মাইলেটাস ছিল আয়োনিয়ার সর্বাপেক্ষা সমৃদ্ধ নগরী । ঐ সময়ে মাইলেটাস ছিল ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্পোৎপাদন ও উপনিবেশ বিস্তারে সবচেয়ে অগ্ৰণী । আয়োনিয়ার সমৃদ্ধির যুগে ব্যবসায়ী-কারিগর-বণিকরাই ছিল রাষ্ট্রীয় ও অর্থনৈতিক ক্ষমতার অধিকারী। তাই এ যুগে শ্রমের মর্যাদা ছিল, ব্যবহারিক কাজ ও আবিষ্কারের কদর ছিল। এ রকম অনুকূল সামাজিক পরিবেশে স্বভাবতই বৈজ্ঞানিক ও বস্তুবাদী বিজ্ঞান ও দর্শনের উদয় হয়েছিল।

যেমন, দার্শনিক ও গণিতবিদ থালেস জলপথে জাহাজ চলাচল বিঘ্নশূন্য করার জন্যে জ্যোতির্বিদ্যা ও গণিতের চর্চায় রত হন। এ্যানাক্সিম্যাণ্ডার নামে অপর এক দার্শনিক নাবিকদের সুবিধার জন্যে পৃথিবীর মানচিত্র অঙ্কন করেন। আয়োনীয় দার্শনিকদের মূল অনুসন্ধানের বিষয় ছিল প্রাকৃতিক জগতের চরিত্র নিরূপণ।

 

আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন
আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

তাঁরা বিশ্বাস করতেন যে, জগতের সবকিছুর মূলে আছে একটি আদি বস্তুঃ বিশ্বজগৎ, গ্রহনক্ষত্র, পশু-প্রাণী, মানুষ সবকিছু একটিমাত্র বস্তু থেকে গঠিত হয়েছে। আয়োনীয় দর্শনের প্রতিষ্ঠাতা থালেস বললেন, সব কিছুর সৃষ্টি হয়েছে পানি থেকে, সম্ভবত এ কারণে যে তিনি দেখেছিলেন, সব কিছুই সমুদ্রের পানিতে বিলীন হয় এবং পানি-মিশ্রিত কাদা ঘন হয়ে মাটিতে পরিণত হয়, ইত্যাদি। অপর এক আয়োনীয় দার্শনিক এ্যানাক্সিমেনিস বললেন, বাতাস দিয়েই সব কিছু তৈরি হয়েছে।

আয়োনীয় দার্শনিকদের এ সকল সিদ্ধান্ত ভ্রান্ত হলেও গুরুত্বহীন নয়। এই প্রথম মানুষ জগৎসৃষ্টির কল্পকাহিনী বাদ দিয়ে বাস্তব পরিবেশের ভিত্তিতে বস্তুভিত্তিক চিন্তার সাহায্যে জগৎকে ব্যাখ্যা করার প্রচেষ্টা নিল। থালেসকে তাই প্রথম বিজ্ঞানীরূপে গণ্য করা হয়। খৃষ্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দী শেষ হবার আগেই গ্রীক দর্শনে অধিবিদ্যক প্রবণতা দেখা দেয়। অর্থাৎ গ্রীক দর্শন এখন প্রাকৃতিক জগতের পরিচয় গ্রহণ বাদ রেখে সত্তার প্রকৃতি, সত্যের অর্থ ইত্যাদি সমস্যার সমাধানে নিমগ্ন হয়।

নতুন দর্শনের স্থাপয়িতা হলেন পিথাগোরাস ও তাঁর অনুসারীগণ। আয়োনিয়া অঞ্চল যখন পারসিক রাজশক্তি দখল করে নেয় তখন পিথাগোরাস ও অন্যান্য গ্রীক দার্শনিকরা ইটালি ও সিসিলিতে আশ্রয় গ্রহণ করেন। আয়োনীয় দর্শনেরও এখানেই সমাপ্তি ঘটে। অবশ্য আয়োনীয় দর্শনের রেশ আরো কিছুকাল টিকে ছিল। লিউসিপাস এবং ডিমোক্রিটাস নামে দুই দার্শনিক পরমাণু তত্ত্বের উদ্ভাবন করেন।

 

গ্রীক দর্শনের পরিচয়

 

তাঁরা বলেন যে, সমগ্র জগৎ শেষ বিচারে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পরমাণু নিয়ে গঠিত; এ পরমাণুসমূহ অক্ষয় ও অবিভাজ্য। অপর এক দার্শনিক হিরাক্লিটাস বলেন, জগতে চিরস্থায়ী বলে কিছু নেই, পরিবর্তনই একমাত্র চিরন্তন সত্য। সমস্ত জগৎ অবিরাম পরিবর্তিত হচ্ছে। ডেমোক্রিটাস আত্মার অমরতা অস্বীকার করেন।

আরও দেখুন :

Leave a Comment