গ্রীসীয় এথেন্স

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় গ্রীসীয় এথেন্স

গ্রীসীয় এথেন্স

 

গ্রীসীয় এথেন্স

 

গ্রীসীয় এথেন্স

মধ্য গ্রীসের এ্যাটিকা নামক স্থানে এক পার্বত্য এবং অনুর্বর ভূমিতে এথেন্স নগররাষ্ট্র গড়ে উঠেছিল। এথেন্সের ইতিহাস ছিল শুরু থেকেই স্পার্টা থেকে সম্পূর্ণ পৃথক ধরনের। এ্যাটিকায় গ্রীকদের প্রবেশ ঘটেছিল ধীরে ধীরে এবং শান্তিপূর্ণভাবেই। ফলে এখানে কোনো যুদ্ধবাজ শাসকগোষ্ঠীর উদয় ঘটেনি। তা ছাড়া এ্যাটিকায় কৃষির বিকাশের বিশেষ সম্ভাবনা ছিল না, ফলে এখানে শুধুমাত্র ভূমিদাসদের শোষণের ওপর নির্ভর করার সুযোগ ঘটেনি স্পার্টার মতো।

এ্যাটিকার প্রধান সম্পদ ছিল খনিজ, ধাতু ইত্যাদি, আর ছিল ভাল ভাল বন্দর ও পোতাশ্রয়। কৃষিসম্পদের মধ্যে ছিল জলপাই আর আঙুরের বাগান। এথেন্সে তাই শিল্পবাণিজ্য এবং নাগরিক সংস্কৃতি গড়ে উঠেছিল। ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারের সাথে সাথে এথেন্স বাইরে থেকে খাদ্যশস্য আমদানি করতে বাধ্য হয়েছিল, কারণ এ্যাটিকায় পর্যাপ্ত পরিমাণ শস্য উৎপাদন করা সম্ভব ছিল না।

খ্রিস্টপূর্ব অষ্টম শতাব্দীর মাঝামাঝি পর্যন্ত আর সব গ্রীক নগররাষ্ট্রের মতো এথেন্সেও একজন রাজা রাজ্যশাসন করতেন। এরপর রাজতন্ত্রের পরিবর্তে এথেন্সে অভিজাত পরিষদের শাসন প্রবর্তিত হয়। অভিজাতদের দ্বারা নির্বাচিত নয় জনের একটি পরিষদ তখন থেকে শাসনকাজ চালাতেন। এ সময়ে গ্রীসে আঙুর ও জলপাইয়ের চাষ প্রবর্তিত হবার ফলে ধনী অভিজাতদের হাতে সম্পদ পুঞ্জীভূত হয়েছিল।

আঙুর-জলপাইয়ের চাষে লাভ করতে দীর্ঘ সময়ের দরকার হয়। তাই গরিব চাষীরা এ ব্যবসায়ে টিকতে পারেনি। তার ওপর বিদেশ থেকে আমদানি করা খাদ্যশস্যের দাম খুব বেশি হবার ফলে গরিব চাষীরা ধনী ভূস্বামীদের কাছে প্রথমে জমিজমা, তারপর স্ত্রী-পুত্র এবং সবশেষে নিজেদের বন্ধক রাখতে বাধ্য হয়। শেষ পর্যন্ত ঋণের দায়ে এসব গরিব চাষী ঋণদাসে পরিণত হয়। এ সময়ে এথেন্সের স্বাধীন নাগরিকদের তিন শ্রেণীতে ভাগ করা চলত।

প্রথম শ্রেণীতে ছিলো ধনী অভিজাত মানুষঃ এঁরা পূর্ণ রাজনৈতিক ও নাগরিক অধিকার ভোগ করতেন। দ্বিতীয় শ্রেণীতে ছিল জনসাধারণ অর্থাৎ কৃষক, কারিগর, ব্যবসায়ী, বণিক, নাবিক প্রভৃতি। এদের নাগরিক অধিকার থাকলেও রাজনৈতিক অধিকার ছিল না। তৃতীয় শ্রেণীতে ছিল ভিনদেশ থেকে আগত মানুষরা। এরা সাধারণত শিল্প-উৎপাদন এবং ব্যবসায়ে নিয়োজিত থাকত। এদের কোন নাগরিক বা রাজনৈতিক অধিকার ছিল না।

 

আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন
আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

স্বাধীন নাগরিক ছাড়াও এথেন্সে বহুসংখ্যক দাস ছিল। দাসরা মানুষ হিসেবেই গণ্য হত নাঙ দাসরা ছিল তাদের মনিবের সম্পত্তি।
এথেন্সে খ্রিস্টপূর্ব সপ্তম শতাব্দীর শেষভাগে ব্যাপকসংখ্যক কৃষক-কারিগর নিঃস্ব হয়ে পড়লে রাজনৈতিক অসন্তোষ ও বিরোধ বাড়তে থাকে এবং সারা দেশে বিপ্লবের সম্ভাবনা দেখা দেয়। গরিব কৃষকরা জমি ফেরত পাওয়ার এবং ঋণদাসত্ব বাতিলের দাবি করে।

এ অবস্থায় সব দল মিলে ৫৯৪ খ্রিস্টপূর্বাব্দে ‘সোলোন’ নামক একজন জনপ্রিয় নেতাকে প্রয়োজনীয় সংস্কার সাধনের ক্ষমতা দেয়। সকলেই বুঝতে পেরেছিল যে, ব্যাপক সংস্কার ছাড়া ঐ সমাজর পক্ষে আর টিকে থাকা সম্ভব নয়। ঋণের জন্যে স্বাধীন গ্রীক নাগরিককে দাসে পরিণত করার ফলে ঋণদাস এবং ক্রীতদাসদের একযোগে বিদ্রোহ করার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল। এ ছাড়া শহরের মধ্যবিত্ত শ্রেণীও রাজনৈতিক অধিকার দাবি করছিল।

সোলোন এথেন্সের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থার অনেকগুলো ব্যাপক সংস্কার সাধন করেন। তিনি সমস্ত বন্ধকী ঋণ বাতিল করে দেন, ঋণদাসদের মুক্ত ঘোষণা করেন এবং ঋণের দায়ে দাস বানানোর প্রথাকে নিষিদ্ধ করেন। তিনি এথেন্সের নাগরিকদের সম্পত্তির পরিমাণ অনুসারে চার শ্রেণীতে ভাগ করেন। এর ফলে অভিজাতদের বংশানুক্রমিক আধিপত্য খর্ব হয়। নিম্নশ্রেণী থেকে উদ্ভূত নব্য-ধনিকরাও এখন থেকে সুবিধাভোগী শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত হয়।

সোলোন ৪০০ জন সদস্যের একটি নতুন পরিষদ প্রবর্তন করেন। এটি ক্রমে অভিজাত পরিষদকে অধিকারচ্যুত করেছিল। নাগরিকদের সাধারণ পরিষদের অধিকারও সেলোন বৃদ্ধি করেন। জনসাধারণ কর্তৃক নির্বাচিত একটি সুপ্রীম কোর্টেরও প্রবর্তন করেছিলেন তিনি। যেসব বিদেশীরা এথেন্সে স্থায়ীভাবে বাস স্থাপন করেছিল, তাদেরও নাগরিক বলে গণ্য করা হয়। সোলোনের সংস্কারের ফলে এথেনীয় রাষ্ট্রব্যবস্থা সাধারণভাবে গণতন্ত্রের পথে অগ্রসর হয়েছিল।

সোলোনের সংস্কারের ফলে অভিজাত শ্রেণী অনেক অধিকার হারিয়েছিল, আবার জনসাধারণও পুরো অধিকার পায়নি। দুই দলই তাই অসন্তুষ্ট ছিল। এ অসন্তোষের সুযোগ নিয়ে একজন স্বৈরাচারী ‘টায়রান্ট’ শাসক এথেন্সের ক্ষমতা দখল করে। কিন্তু কিছুকাল পরে স্বৈরাচারের অবসান ঘটিয়ে এথেন্সে আবার গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা হয়। এবার ৫১০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে ক্লিসথেনিস নামক একজন জনপ্রিয় নেতা নতুন কতগুলো ব্যপক গণতান্ত্রিক সংস্কার প্রবর্তন করেন।

 

গ্রীসীয় এথেন্স

 

তিনি রাজ্যের সব স্বাধীন অধিবাসীদের পূর্ণ নাগরিক অধিকার দেন। তিনি নতুন একটি ৫০০ জন সদস্যের পরিষদ প্রবর্তন করেন। ক্লিথেনিসের সংস্কারের ফলে অভিজাত শ্রেণীর বংশানুক্রমিক অধিকার এবং রাজনৈতিক আধিপত্য চূড়ান্তভাবে খর্বিত হয় এবং গণতন্ত্রের অধিকতর বিকাশের ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত হয়। পরবর্তীকালে পেরিক্লিসের সময়ে (৪৬১-৪২৯ খ্রিঃ পূঃ) এথেন্সে গণতন্ত্রের চরম বিকাশ ঘটেছিল।

আরও দেখুন :

Leave a Comment