গ্রীসীয় বিজ্ঞান

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় গ্রীসীয় বিজ্ঞান

গ্রীসীয় বিজ্ঞান

 

গ্রীসীয় বিজ্ঞান

 

গ্রীসীয় বিজ্ঞান

সাধারণভাবে গ্রীক বিজ্ঞানের যে সুনাম আছে, বিজ্ঞানের সে অগ্রগতি অবশ্য হেলেনিক যুগে ঘটেনি। যে সকল বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার গ্রীক যুগে ঘটেছিল বলে সাধারণভাবে ধারণা করা হয়, সেগুলোর অধিকাংশই হেলেনিস্টিক বা আলেকজান্দ্রীয় যুগে ঘটেছিল। যেমন, আর্কিমিডিস ছিলেন আলেকজান্দ্রীয় যুগের বিজ্ঞানী, তবে হেলেনিক যুগেও গণিত, জীববিজ্ঞান ও চিকিৎসাবিজ্ঞানে কিছু কিছু অগ্রগতি সাধিত হয়েছিল।

গ্রীক গণিতের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন সম্ভবত থালেস। তাঁর আবিষ্কৃত কয়েকটি উপপাদ্য পরে ইউক্লিডের জ্যামিতি গ্রন্থে স্থান পেয়েছিল। পিথাগোরাস ও তাঁর সম্প্রদায় অনেকগুলো জ্যামিতিক আবিষ্কার এবং সংখ্যাতত্ত্বের আবিষ্কার করেন। পিথাগোরাসের উপপাদ্য নামে পরিচিত গুরুত্বপূর্ণ জ্যামিতিক প্রতিজ্ঞাটি সম্ভবত পিথাগোরাস স্বয়ং আবিষ্কার করেন, তবে জ্যামিতিকে একটি বিজ্ঞানরূপে প্রথম গড়ে তোলেন কিওসের হিপোক্রেটিস (ইনি চিকিৎসক হিপোক্রেটিস নন)।

এ যুগের আরেকজন বিখ্যাত গণিতবিদ ও জ্যোতির্বিদ হলেন ইউডক্সাস্ (৪০৮-৩৫৫ খ্রিঃ পূ)। জীববিজ্ঞান সম্পর্কে প্রথম আগ্রহী হন দার্শনিক এ্যনাক্সিম্যান্ডার। তিনি প্রাণিজগতের এক প্রাথমিক ধরনের বিবর্তনের তত্ত্বের অবতারণা করেন। তাঁর মতে আদিমতম প্রাণী পানিতে বাস করত। পরিবেশের পরিবর্তনের ফলে পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়াতে গিয়ে প্রাণীদের দেহে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আসে।

 

আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন
আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

এভাবে বিবর্তনের মধ্যে দিয়ে শেষ পর্যায়ে মানুষের উদয় হয়। অবশ্য জীববিজ্ঞানে প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতারূপে গণ্য করা হয় এ্যারিস্টটলকে। নিজস্ব পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে তিনি অনেক তথ্য আবিষ্কার করেন। তবে তিনি অনেক ভ্রান্ত মতও পোষণ করতেন। যেমন, বিবর্তনের তত্ত্বে সাধারণভাবে আস্থা থাকলেও তিনি মনে করতেন, কোনো কোনো কীট-পতঙ্গ আপনা থেকেই জন্মলাভ করে।

গ্রীক চিকিৎসাবিজ্ঞানের অগ্রণী ছিলেন এম্‌পেডোক্লিস ও আল্‌ মাওন । এপোডোক্লিস আবিষ্কার করেছিলেন যে, প্রাণিদেহে রক্ত দেহ থেকে হৃৎপিণ্ডের দিকে এবং হৃৎপিণ্ড থেকে দেহের দিকে প্রবাহিত হয়। আল্‌মাওন প্রাণিদেহ ব্যবচ্ছেদ করে চোখের নার্ভ আবিষ্কার করেন এবং জানতে পারেন যে মস্তিষ্কই স্নায়ুতন্ত্রের মূল কেন্দ্ৰ। তবে চিকিৎসাবিজ্ঞানে সবচেয়ে বড় অবদান ছিল কস নগরীর হিপোক্রেটিস-এর।

হিপোক্রেটিসের প্রধান অবদান হল তিনি রোগের অতিপ্রাকৃত ব্যাখ্যাকে দূর করে ঘোষণা করেন যে, প্রত্যেক রোগের একটি প্রাকৃতিক কারণ আছে। শুধু এ কারণেই হিপোক্রেটিস চিকিৎসা- বিজ্ঞানের জনক রূপে গণ্য হওয়ার যোগ্য। হিপোক্রেটিস তাঁর ছাত্রদের সব সময় বলতেন, ‘প্রত্যেক রোগের একটি প্রাকৃতিক কারণ আছে, প্রাকৃতিক কারণ ছাড়া কখনও কিছু ঘটে না।’

 

গ্রীসীয় বিজ্ঞান

 

রোগে যে একটি সংকটের পর্যায় আছে হিপোক্রেটিস তা আবিষ্কার করেন এবং অস্ত্রোপচার ও শল্য চিকিৎসার উন্নতি সাধন করেন। তাঁর প্রধান ত্রুটি হল, রক্তে পিত্ত, শ্লেষ্মা প্রভৃতির আধিক্যের কারণে রোগের উৎপত্তি হয়— এ ভ্রান্ত তত্ত্বে আস্থা স্থাপন। এ তত্ত্ব থেকেই পরবর্তীকালে রক্তক্ষরণ ঘটিয়ে রোগ নিরাময়ের ভয়াবহ পদ্ধতি প্রচলিত হয়েছিল।

আরও দেখুন :

Leave a Comment