আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় গ্রীসীয় ভৌগোলিক পরিবেশ
গ্রীসীয় ভৌগোলিক পরিবেশ
গ্রীসীয় ভৌগোলিক পরিবেশ
গ্রীসীয় সভ্যতার বিকাশের কাহিনী বুঝতে হলে তার ভৌগোলিক পরিবেশ জানা দরকার। প্রাচীন গ্রীস ভূখণ্ড ছিল বলকান উপদ্বীপের দক্ষিণাংশ জুড়ে বিস্তৃত। পার্বত্যভূমি, স্বল্প বৃষ্টিপাত ও ভগ্ন উপকূল রেখা এর প্রধান বৈশিষ্ট্য। গ্রীসে বৃষ্টিপাত কম— কেবল শীতকালে মাস দুই বৃষ্টি হয়, বাকি সারাবছর আকাশ মেঘমুক্ত থাকে। গ্রীষ্মকালের আবহাওয়া শুষ্ক ও গরম। প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য অনুসারে গ্রীসকে তিনভাগে ভাগ করা চলে॥ দক্ষিণ, মধ্য ও উত্তর গ্রীস।
প্রাচীন গ্রীস ও তার উপনিবেশ সমূহ
দক্ষিণ গ্রীস বা পেলোপনেসাস্ ছিল অবশিষ্ট গ্রীসের ভূভাগ থেকে সুগভীর উপসাগর দ্বারা বিচ্ছিন্ন, কেবল একটি যোজক দ্বারা এটি মধ্যগ্রীসের সাথে যুক্ত। মধ্য ও উত্তর গ্রীস পাহাড় দ্বারা বিভিন্ন অংশে বিভক্ত। মধ্য থেকে উত্তর গ্রীসে একমাত্র থার্মোপাইলি গিরিপথ দিয়ে যাওয়া চলত। পর্বতগুলো খুব উঁচু ছিল না, কিন্তু এগুলো ছিল খাড়া খাড়া এবং এগুলো দেয়ালের মতো উঠে বিভিন্ন সমতলভূমিকে পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছিল।
এ সকল বিচ্ছিন্ন অংশগুলোই ব্যাপকসংখ্যক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র স্বতন্ত্র নগররাষ্ট্রের আধারে পরিণত হয়েছিল; প্রত্যেক নগররাষ্ট্রের জীবনযাত্রা ছিল অন্যদের থেকে বিচ্ছিন্ন এবং প্রত্যেকের নিজস্ব আইন, সংবিধান ও সেনাবাহিনী ছিল। গ্রীসীয়রা প্রত্যেকে যার যার নগররাষ্ট্রের প্রতি অনুগত ছিল এবং তাদের মধ্যে আঞ্চলিক দেশপ্রেমের মনোভাব খুব প্রবল ছিল।
প্রাচ্য সভ্যতাসমূহের বিকাশে নদীর যেমন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল গ্রীসের ক্ষেত্রে তেমন হয়নি। সমগ্র বলকান উপদ্বীপে একটাও বড় নদী ছিল না। অপর পক্ষে গ্রীসীয় সমাজের বিকাশে সমুদ্রের প্রভাব ছিল অপরিসীম। গ্রীসের তিন দিকের উপকূল আড্রিয়াটিক সাগর, ভূমধ্যসাগর ও ঈজিয়ান সাগর দ্বারা বিধৌত। এ সকল সাগর দেশের গভীর অভ্যন্তরে প্রবেশ করেছে, যে কারণে গ্রীস ভূখণ্ডের কোনো অংশই সমুদ্র থেকে চল্লিশ মাইলের বেশি দূরবর্তী নয়।

ভগ্ন উপকূলরেখার জন্যে বহুসংখ্যক বন্দর স্থাপন সম্ভব হয়েছে। তদুপরি, এশিয়া মাইনরের নৈকট্য এবং ঈজিয়ানবক্ষে অসংখ্য দ্বীপমালার অস্তিত্ব গ্রীসীয়দের সমুদ্রযাত্রা ও বাণিজ্যে উৎসাহী করে তুলেছিল। ঈজিয়ান দ্বীপমালা গ্রীস ও এশিয়া মাইনরকে এমনভাবে যুক্ত করেছিল যে, গ্রীসীয় নাবিকগণ মাটিকে চোখের আড়াল না করে, শুধু চোখের নজর দ্বারা চালিত হয়ে ছোট ছোট জাহাজ নিয়ে এশিয়া মাইনর বা কৃষ্ণসাগর উপকূলে পৌঁছাতে পারত।
প্রাচীন গ্রীস খনিজসম্পদে সমৃদ্ধ ছিল—ল্যাকোনিয়াতে (পেলোপনেসাস্-এ) ছিল লোহা, এ্যাটিকাতে (মধ্য গ্রীসে) ছিল রূপা, থ্রেস-এ (ঈজিয়ানদের উত্তর উপকূলে) ছিল সোনা। এ ছাড়া ছিল কাদা-মাটি, বাড়ি বানানোর মতো পাথর আর মার্বেল পাথর। গ্রীসের জমি সাধারণভাবে ছিল অনুর্বর, কেবল মাঝে মাঝে কৃষির উপযুক্ত উর্বর সমভূমি ছিল, যথা— দক্ষিণে ল্যাকোনিয়া ও মেসেনিয়াতে, মধ্যগ্রীসে বিওথিয়াতে এবং উত্তরে থেসালীতে।
অনুর্বর জমি ও খনিজসম্পদের প্রাচুর্য ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ও কারিগরি শিল্পের বিকাশের সহায়ক হয়েছিল। তবে, উল্লেখ করা যেতে পারে, বিশ্ব-পর্যায়ে মানবসভ্যতা ও সংস্কৃতি একটা নির্দিষ্ট স্তরে পৌঁছানোর পরই কেবল এ সকল সুযোগের সদ্ব্যবহার সম্ভব হয়েছিল।
আরও দেখুন :