আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় গ্রীসীয় হোমারীয় যুগ। ধ্রুপদি কিংবদন্তি অনুযায়ী, হোমার ছিলেন এক প্রাচীন গ্রিক মহাকাব্যিক কবি। তিনি ইলিয়াড ও ওডিসি মহাকাব্য এবং হোমারীয় স্তোত্রাবলির রচয়িতা। হোমারের মহাকাব্যগুলো থেকেই পাশ্চাত্য সাহিত্যধারাটির সূচনা হয়েছিল। কথাসাহিত্য ও সাহিত্যের সাধারণ ইতিহাসে এই দুই মহাকাব্যের প্রভাব অপরিসীম।
গ্রীসীয় হোমারীয় যুগ

গ্রীসীয় হোমারীয় যুগ
১২০০ থেকে ৮০০ খ্রিঃ পূঃ পর্যন্ত কালের গ্রীসের ইতিহাস ‘হোমারীয় যুগ” নামে পরিচিত। খ্রিস্টপূর্ব নবম বা অষ্টম শতাব্দীর গ্রীসীয় মহাকবি হোমারের রচিত দুই সুবিখ্যাত মহাকাব্য ‘ইলিয়াড’ এবং ‘ওডিসি’তে ঐ যুগের গ্রীসের সমাজ ও জীবনযাত্রার পরিচয় পাওয়া যায়। এ কারণেই ঐ যুগের নামকরণ হয়েছে ‘হোমারীয় যুগ’। গ্রীসে হোমারীয় যুগের সমাজ গড়ে উঠেছিল ডোরিয়ান আক্রমণে মাইসিনীয় সভ্যতার পতন ঘটার পর।
গ্রীকরা কিভাবে ট্রয় বা ইলিয়ন নগর জয় করেছিল সে কাহিনী বর্ণিত হয়েছে ইলিয়াড মহাকাব্যে। আর ট্রয়ের যুদ্ধের পর গ্রীক সেনাপতি ওডিসিয়াস কিভাবে বিভিন্ন বিচিত্র অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে স্বদেশে ফিরলেন তার বর্ণনা আছে ওডিসি মহাকাব্যে।
হোমারীয় যুগে একিয়ান, ডোরিয়ান ও আয়োনীয় সব গ্রীকদের সংস্কৃতি প্রায় একই রকম ছিল। এবং এ সংস্কৃতি ছিল আদিম ধরনের। ডোরিয়ান আক্রমণে একিয়ান তথা মাইসিনীয় সভ্যতার পতন ঘটায় সমাজব্যবস্থার সাময়িক অবনতি ঘটেছিল। হোমারের কাব্য থেকে আমরা জানতে পারি যে, তৎকালীন গ্রীসের মানুষ কৃষি ও পশুপালনেই প্রধানত নিয়োজিত ছিল। এ সকল আদিম গ্রামসমাজগোষ্ঠীর ভিত্তিতেই সংগঠিত হত।
এটা স্বাভাবিক, কারণ ডোরিয়ানরা ছিল বর্বরসমাজের মানুষ। ডোরিয়ান আক্রমণের ফলে ব্যবসা-বাণিজ্য ধ্বংস হয়েছিল এবং নাগরিক সভ্যতার পতন ঘটেছিল। হোমারীয় যুগকে তাই গ্রীক ইতিহাসের অন্ধকার যুগও বলা হয়। এ যুগের গ্রীকরা লিপি এবং লেখন পদ্ধতির সাথে পরিচিত হয়নি। অবশ্য একিয়ানরা একটি লেখন পদ্ধতি আয়ত্ত করেছিল; কিন্তু সেটা তারা স্পষ্টতই ক্রীটীয়দের কাছ থেকে পেয়েছিল এবং ডোরিয়ান আক্রমণে তা’ লুপ্তও হয়ে গিয়েছিল।

সাধারণভাবে বলা চলে, হোমারীয় যুগের গ্রীকসমাজ লেখন পদ্ধতির সাথে অপরিচিত ছিল। অবশ্য হোমারীয় যুগের গ্রীক সমাজ যে পুরোপুরি আদিম নতুন পাথরের যুগের সমাজে পর্যবসিত হয়েছিল, তা’ বলা চলে না। ব্রোঞ্জ যুগের ঈজিয়ান অঞ্চলের কৃষকদের মধ্যে প্রচলিত আঙুর ও জলপাইয়ের চাষের রেওয়াজ অন্ধকার যুগেও লোপ পায়নি। মাইসিনীয় যুগের মাটির পাত্র নির্মাণের কৌশল এবং ক্রীটের ধাতুশিল্পের জ্ঞানও গ্রীসীয়দের মধ্যে অব্যাহত ছিল।
ক্রীটীয় এবং ফিনিশীয়দের কাছ থেকে গ্রীসীয়রা নৌবিদ্যায়ও পারদর্শিতা অর্জন করেছিল। ১০০০ থেকে ৭০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের মধ্যে গ্রীসীয়রা ফিনিশীয়দের কাছ থেকে বর্ণমালাভিত্তিক লিপি এবং লেখন পদ্ধতিও আয়ত্ত করে। লৌহযুগের গ্রীকদের তাই সম্পূর্ণ বর্বর অবস্থা থেকে কোনো অলৌকিক উপায়ে নতুন যুগের বিজ্ঞান, কলাকৌশল, অর্থনীতি ইত্যাদি গড়ে তুলতে হয়নি।
ক্রীটীয় এবং মাইসিনীয় সভ্যতার মাধ্যমে ব্রোঞ্জ যুগের সভ্যতার সকল মূল অবদানসমূহ পরবর্তীকালের গ্রীসীয় সমাজের হাতে পৌঁছেছিল। এ সকল কারিগরি শিল্প ও উৎপাদন পদ্ধতির ভিত্তিতে খ্রিস্টপূর্ব অষ্টম শতাব্দীর পরে গ্রীসে নতুন সমাজ গড়ে উঠেছিল।
আরও দেখুন :