জাদুর কার্যকারিতা

আজকের আলোচনার বিষয় জাদুর কার্যকারিতা – যা জাদু ও বিজ্ঞানের সম্পর্ক এর অর্ন্তভুক্ত, জাদু শুধু তথাকথিত আদিম বা অশিক্ষিত মানুষদের মধ্যেই দেখা যায় না। একটু খেয়াল করলেই দেখা যাবে, আধুনিক শিক্ষিত মানুষদের মধ্যেও এমন অনেক বিশ্বাস ও আচার অনুষ্ঠান প্রচলিত যেগুলোকে জাদু-ধর্মী বলে শনাক্ত করা সম্ভব। যেমন, বিশেষ কোন জার্সি গায়ে মাঠে নামলে খেলায় ভাল করা সম্ভব, এ ধরনের বিশ্বাস ক্রীড়াজগতে দুর্লভ নয়।

বহুকাল আগে থেকেই জাদুর বিরুদ্ধে ধর্ম- সংস্কারকদের অনেকে শুদ্ধি অভিযান চালিয়েছেন, কিন্তু বিশ্বের প্রায় সকল ধর্মের অনুসরীদের মধ্যেই বিভিন্ন মাত্রায় জাদুর উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। অর্থাৎ বিশ্লেষণের সুবিধার্থে ফ্রেজার প্রণীত জাদু ও ধর্মের ধারণাগত পার্থক্যকে অনুসরণ করা হলেও বাস্তবে এ দু’টির মধ্যে সহাবস্থান লক্ষ্য করা যায়। যে গ্রামবাসীরা ব্যাঙের বিয়ের আয়োজন করে, তারাই হয়ত বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা বা মোনাজাতেও শরীক হতে পারে।

জাদুর কার্যকারিতা

 

জাদুর কার্যকারিতা

জাদুর যদি কোনই কার্যকারিতা না থাকে, যদি ফ্রেজারের বিশ্লেষণ অনুসারে জাদুর ব্যর্থতা থেকে ধর্ম ও বিজ্ঞানের জন্ম হয়ে থাকে, তাহলে বহু সমাজেই জাদু এতদিনে প্রায় পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়ে যেত। তথাপি তা ঘটে নি কেন? ক্রিয়াবাদীরা উক্ত প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছেন একটু ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে। যেমন, ম্যালিনোস্কি দেখিয়েছেন যে, ট্রবিরিয়ান্ড দ্বীপবাসীরা সেসব কর্মকান্ডেই জাদুর আশ্রয় নিয়ে থাকে যেগুলোতে ফলাফলের ব্যাপারে কখনো নিশ্চিত হওয়া যায় না। ফসল ফলানোর জন্য প্রযুক্তিগতভাবে যা যা করা সম্ভব, সবকিছু করা হলেও নানা কারণে ফসল হানি ঘটতে পারে। বা আন্তঃদ্বীপ যাত্রায় সবচাইতে দক্ষ নৌচালকও দুর্ঘটনায় পতিত হতে পারে।

 

আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন
আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

এসব ক্ষেত্রে জাদু-নির্ভর আচার অনুষ্ঠান উদ্বেগ নিরসনে ভূমিকা রাখে বলে ম্যালিনোস্কি মনে করেন। বিভিন্ন কর্মকান্ডে ভয়-ভীতি ও উৎকণ্ঠা কাটিয়ে আত্মবিশ্বাস অর্জনে যদি জাদু ভূমিকা রাখে, সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্মকান্ডে সাফল্যের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এই অর্থে জাদুর অবশ্যই কিছু কার্যকারিতা রয়েছে।

যারা জাদু-ধর্মী আচার অনুষ্ঠান পালন করে, তাদের বাস্তব অভিজ্ঞতাও অনেক ক্ষেত্রেই জাদুর কার্যকারিতা সম্পর্কে বিশ্বাস রাখতে সহায়তা করে। যেমন, ব্যাঙের বিয়ে সম্পন্ন করার পর সত্যি সত্যিই বৃষ্টি নেমেছে, এমন সাক্ষ্য দেওয়ার লোক খুঁজে পাওয়া কঠিন নয়।

ব্যাঙের বিয়ের জন্য ব্যাঙ খুঁজে পাওয়ার দরকার রয়েছে। এখন, যদি দীর্ঘ অনাবৃষ্টির কারণে মাঠ ঘাট শুকিয়ে যায়, সেক্ষেত্রে ব্যাঙ খুঁজে পাওয়া একেবারে সহজ হবে না। বিষয়টা এমন হওয়া অসম্ভব নয় যে, বৃষ্টির আভাস পেলে ব্যাঙেরা বেরিয়ে পড়ে, এবং এই পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতেই বহু আগে হয়ত ‘ব্যাঙের বিয়ে’ অনুষ্ঠানের রীতি গড়ে ওঠে। তবে এ ধরনের অনুষ্ঠানের পেছনে প্রকৃতির পর্যবেক্ষণ থেকে লব্ধ যে ধরনের জ্ঞানই থেকে থাকুক না কেন, অন্য একটি পর্যায়ে সেগুলির কার্যকারিতা রয়েছে।

 

জাদুর কার্যকারিতা

 

কৃষি-নির্ভর সমাজে যথাসময়ে বৃষ্টি না হওয়াটা সবার জন্য উদ্বেগের কারণ হতে পারে, সম্ভাব্য বিপর্যয়ের আশঙ্কায় সমাজের সদস্যদের মধ্যে ব্যক্তি-কেন্দ্রিক চিন্তার প্রবণতা বেড়ে যেতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে সবাই মিলে দল বেঁধে ব্যাঙের বিয়ের আয়োজন করুক আর বৃষ্টির জন্য সমবেত মোনাজাত বা প্রার্থনার আয়োজন করুক, তাতে সবাই মিলে সংকটের বোধকে সামাল দিতে পারে, সমাজে যৌথতার বন্ধন দৃঢ় হয়। বিজ্ঞানের প্রসার সত্ত্বেও জাদু ও ধর্মের অব্যাহত আবেদনের পেছনে এ ধরনের মনস্তাত্ত্বিক ও সমাজতাত্ত্বিক ব্যাখ্যা দেওয়া সম্ভব।

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment