দৈহিক নৃবিজ্ঞান

আজকের আলোচনার বিষয় দৈহিক নৃবিজ্ঞান। এই পাঠটি “নৃবিজ্ঞান পরিচিতি” বিষয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ পাঠ। দৈহিক নৃবিজ্ঞান মূলত মানুষের মানুষের দৈহিক দিক বা ফিজিক্যাল ফিচার সম্পর্কে আলোচনা করে। মানুষের দৈহিক অর্থাৎ আকার-আকৃতি, বৈশিষ্ট্য, প্রাণী হিসেবে মানুষের পৃথিবীতে – উৎপত্তি, বিবর্তন। আলোচনা করে মানুষের আদিম ও আধুনিক রূপ নিয়ে।

দৈহিক নৃবিজ্ঞান

দৈহিক নৃবিজ্ঞান
দৈহিক নৃবিজ্ঞান

 

দৈহিক নৃবিজ্ঞানের সারাংশ:

দৈহিক নৃবিজ্ঞানে যেসব বিষয় অধ্যয়ন করা হয় সেগুলির মধ্যে রয়েছে একটি এরজাতি হিসাবে মানুষের উৎপতি ও বিবতর্নের ইতিহাস, জৈবিক বে বিচারে মানুষের নিকটতম প্রানীদের সাথে মানুষের মিল ও আমিল, এবং দৈহিক ও অন্যান্য  জৈবিক বৈশিষ্ট্যের  প্রেক্ষিতে মানবজাতির মধ্যেকার বৈচিত্র্য।

দৈহিক নৃবিজ্ঞান

দৈহিক-নৃবিজ্ঞানে সমকালীন বিভিন্ন মানবগোষ্ঠীর মধ্যেকার দৈহিক পার্থক্য ও সম্পর্ক নিয়েও গবেষণা করা হয়। এ ধরনের গবেষণায় দীর্ঘকাল যাবত বাহি্যক উপরই নজর কেন্দ্রীভূত ছিল। গায়ের রং চুলের ধরন, চোখ-মুখের গড়ন প্রভৃতির ভিভিতে মানবজাতিকে বিভিন্ন race বা নরবর্ণে বিভক্ত করার রেওয়াজ ছিল।

 

 

প্রকৃতপক্ষে নরবণর্র সজ্ঞা ও শোণীকরণ নিয়ে দৈহিক  নৃবিজ্ঞান  কখনো কোন সবর্জনস্কীকৃত মতামত ছিল না। অধিকন্ত সাম্প্রাতিককালের দৈহিক  নৃবিজ্ঞানীদের  অধিকাংশই নরবর্ণে্র ধারণাকে বিজ্ঞান- সম্মত নয় বলে বাতিল করে দিয়েছেন।

 

দৈহিক নৃবিজ্ঞান

 

সমকালীন দৈহিক  নৃবিজ্ঞানের নরবণর্র ধারণা কাযর্ত পরিত্যক্ত হয়ে যাওয়ার একটা প্রধান কারণ হল, যেভাবেই নরবণর্র সংজ্ঞা ও শ্রেণীকরণ দাঁড় করানো হোক না কেন, বাস্তবে এক নরবণের্র সাথে আরেক নরবণর্র কোন সুস্পষ্ট সীমারেখা চিহি্ত করা যায় না।

 

বতর্মানে দৈহিক-নৃবিজ্ঞান বা বাহ্যিক দৈহিক বেশিষ্টের চাইতে মানবজাতির অন্তনির্হিত জেনেটিক (genetic অথাৎ জিন- সংক্রান্ত) বৈচিত্র্য অধ্যয়নের উপর অধিকতর জোর দেওয়া হয়। এ ধরনের পারিবতর্নের আলোকে ইদানীং দৈহিক হাবিজ্ঞানের হলে জৈবিক নৃবিজ্ঞান (biological anthropology) পরিচয়টাই অনেকের কাছে অধিকতর গ্রহণীয় হয়ে উঠেছে ।

 

দৈহিক নৃবিজ্ঞান:

দৈহিক নৃবিজ্ঞানের সারাংশ: মানুষের দৈহিক দিক সম্পর্কে নৃ-বিজ্ঞানের যে শাখা বিস্তারিত আলােচনা করে তাকে দৈহিক নৃ-বিজ্ঞান বলা হয়। এই শাখা মানুষের দৈহিক আকার-আকৃতি, বৈশিষ্ট্য এবং প্রাণী হিসেবে মানুষের পৃথিবীতে উৎপত্তি, বিবর্তন তথা আদিম ও আধুনিক মানুষের বিভিন্ন প্রকরণ সম্পর্কে আলােচনা করে। মানুষের ক্রমবিকাশের ধারা নির্ণয় করতে দৈহিক নৃ-বিজ্ঞান- অস্থি, কংকাল, মাথা, দেহের গঠন প্রণালি ইত্যাদি নিয়ে গবেষণা করে।

এছাড়া মানুষ পূর্বে কী ছিল, বিবর্তনের মাধ্যমে সে কীরূপ ধারণ করেছে- তা তুলনামূলক পদ্ধতির মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা করে জীব জগতের মানুষের স্থান কোথায় তা নির্ণয় করে। এভাবে মানুষের বিবর্তনের হারানাে সূত্র (Missing link) খুঁজে পেতে চেষ্টা করে।

দৈহিক নৃবিজ্ঞানে যেসব বিষয় অধ্যয়ন করা হয় সেগুলির মধ্যে রয়েছে একটি প্রজাতি হিসাবে মানুষের উৎপত্তি ও বিবর্তনের ইতিহাস, জৈবিক বৈশিষ্ট্যের বিচারে মানুষের নিকটতম প্রাণীদের সাথে মানুষের মিল ও অমিল, এবং দৈহিক ও অন্যান্য জৈবিক বৈশিষ্ট্যের প্রেক্ষিতে মানবজাতির মধ্যেকার বৈচিত্র্য। বিষয়বস্তুর কারণে জীববিজ্ঞানের মৌলিক অনেক বিষয়ে জ্ঞান থাকতে হয় দৈহিক নৃবিজ্ঞানীদের। সেসাথে মানব সন্তার জৈবিক ও সাংস্কৃতিক উভয় মাত্রার পারস্পরিক সম্পর্ককে নিয়ত বিবেচনায় রাখার তাগিদে নৃবিজ্ঞানের অন্যান্য শাখার বিভিন্ন প্রত্যয় ও তত্ত সম্পর্কেও সম্যক জ্ঞান রাখতে হয় তাদের।

চার্লস ডারউইন যখন উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে এই তত দেন যে প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে ক্রমরূপান্তরের মাধ্যমে পৃথিবীতে জীবজগতের বিভিন্ন প্রজাতির আবির্ভাব ঘটেছে, তখন ধমীয়ি ব্যাখ্যার বাইরে মানুষের উৎপত্তি সম্পর্কে বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধিসার একটা দিকনির্দেশনা পাওয়া গিয়েছিল।

ততদিনে ভূত্তকের বিভিন্ন গভীর স্তর থেকে বিলুপ্ত অনেক প্রাণী ও উভিদের জীবাশ্মের সন্ধান মিলতে শুরু করেছিল, যেগুলির মধ্যে প্রাগৈতিহাসিক যুগের মানুষ ও মানব-সদৃশ প্রাণীদের নমুনাও যুক্ত হচ্ছিল (জীবাশ্ন বা fossil হল লক্ষ-কোটি বছর আগেকার কোন প্রাণী বা উভিদের দেহাবশেষ, যা বিভিন্ন প্রাকৃতিক কারণে শিলীভূত রূপে ভূত্তকের বিশেষ কোন স্তরে সংরক্ষিত থেকে গেছে)। একটা সময়ে এই ধারণা ব্যাপকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় যে, জীবজগতের অন্যান্য প্রজাতির মত মানুষও বিবর্তনের মাধ্যমেই আজকের রূপে এসে উপনীত হয়েছে।

দৈহিক নৃবিজ্ঞান
দৈহিক নৃবিজ্ঞান

দৈহিক নৃবিজ্ঞানীদের মধ্যে যারা মানব বা মানবসদৃশ প্রাণীদের জীবাশব নিয়ে কাজ করেন, তাদের লক্ষ্য হল প্রাপ্ত নমুনাসমূহের ভিত্তিতে মানব বিবর্তনের ইতিহাসের একটা চিত্র দাড় করানো। তাদের গবেষণার ভিত্তিতে বলা যায়, আজ থেকে আনুমানিক বিশ থেকে চল্লিশ লক্ষ বছর আগে পৃথিবীতে মানবসদৃশ কিছু প্রাণীর বিচরণ ছিল যেগুলোর মগজের গড় আয়তন মানুষের চাইতে শিম্পাজী-গরিলাদের মত প্রাণীর কাছাকাছি হলেও অন্যান্য দিক থেকে তারা মানুষের মতই ছিল: যেমন তারা দু’পায়ের উপর ভর করে খাড়া হয়ে চলাফেরা করত, এবং খুব সরল ধরনের পাথরের হাতিয়ার ব্যবহার করত।

এই প্রাণীদের নাম দেওয়া হয়েছে অস্ট্রালোপিথেকাস (australopithecus ল্যাটিন ভাষায় australo – বলতে দক্ষিণাঞ্চলীয় এবং pithecus বলতে ৪১০ শ্রেণীর বানর অর্থাৎ শিম্পাজি, গরিলা প্রভৃতি লাঙ্গুলবিহীন বানরদের বোঝায়। অস্ট্রালোপিথেকাসদের প্রথম নমুনা পাওয়া গিয়েছিল আফ্রিকা মহাদেশের দক্ষিণ ভাগে, তাই এই নাম করণ)। ধারণা করা হয়, অস্ট্রালোপিথেকাস বর্গের প্রাণীদেরই কোন শাখা থেকে আধুনিক মানুষের পূর্বসূরী প্রজাতিসমূহের উৎপত্তি ঘটেছে। অস্ট্রালোপিথেকাসদের চাইতে বেশী আয়তনের মস্তিষ্কসম্পন্ন আদি-মানবদের উৎপত্তি ঘটে আনুমানিক দশ থেকে বিশ লক্ষ বছর আগে।

এদের মধ্যে হোমো ইরেকটাস নামে অভিহিত (homo sapiens গ্রীক শব্দ homo অর্থ মানুষ) প্রজাতির আদি-মানবদের জীবাশ্ব পাওয়া গেছে আফ্রিকা, ইউরোপ ও এশিয়ার বিভিন্ন জায়গায়। জাভা মানব, পিকিং মানব প্রভৃতি নামে খ্যাত জীবাশ্বুসমূহ হল এই বর্ণের আদি-মানবদের।

দৈহিক নৃবিজ্ঞান
দৈহিক নৃবিজ্ঞান

ক্রম-বিবর্তনের মাধ্যমে হোমো ইরেকটাস মানবদের থেকেই হোমো সেপিয়েন্স (homo sapiens) নামে অভিহিত আধুনিক মানব প্রজাতির আবির্ভাব ঘটে আনুমানিক চল্লিশ হাজার থেকে সোয়া লক্ষ বছর আগে। নিয়ানডার্থাল নামে অভিহিত আধুনিক মানব প্রজাতির একটি শাখা বিলুপ্ত হয়ে গেছে বলে অনেকে মনে করেন, এবং তাদের থেকে আলাদা করার জন্য homo sapiens sapiens নামের একটি ভিন্ন শাখার অস্তিত ধরে নেওয়া হয়, যেটা বর্তমানে পৃথিবীর বুকে টিকে আছে।

তবে দৈহিক নৃবিজ্ঞানীদের কারো কারো মতে নিয়ানডার্থাল ধারার মানুষরা একেবারে বিনুপ্ত হয়ে যায় নি, বরং তারা মানব প্রজাতির অন্য শাখার সাথে মিশে বর্তমান যুগের মানুষদের উদ্ভবে ভূমিকা রেখেছে। যাই হোক, জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বর্তমান যুগের সকল মানুষই একটি একক প্রজাতির অন্তর্গত, এবং সে হিসাবে সকল মানুষের রয়েছে কিছু অভিন্ন বৈশিষ্ট্য, যেগুলির উপর দৈহিক নৃবিজ্ঞান আলোকপাত করে।

একটি প্রজাতি হিসাবে মানুষের বিশিষ্টতা বুঝতে গিয়ে দৈহিক নৃবিজ্ঞানীদের অনেকে জীববৈজ্ঞানিক বিচারে মানুষের নিকটতম সমকালীন প্রজাতিদের নিয়েও গবেষণা করেন। প্রাণীবিজ্ঞানীদের শ্রেণীকরণ অনুসারে মানুষ ‘প্রাইমেট” বর্গভুক্ত একটি প্রাণী, যে বর্গের অন্তর্গত বিভিন্ন প্রজাতির বানর, ৪ বা “বনমানুষ” অর্থাৎ লেজবিহীন বানর, যথা: শিম্পাজী, গরিলা, ওরাঙ উটান, ও গিবন বা উন্লুক, যেগুলো প্রাণীজগতে মানুষের নিকটতম আত্মীয়) এবং লেমুর, ট্রি শ্রু ইত্যাদি আরো কিছু প্রাণী।

অন্যান্য প্রাইমেটদের সাথে মানুষের দৈহিক ও শারীরবৃত্তীয় সাদৃশ্য এবং বৈসাদৃশ্যসমূহের তুলনামূলক অধ্যয়ন করা হয় প্রাণী হিসাবে মানুষের বৈশিষ্ট্য অনুধাবনের লক্ষ্যে। সেসাথে বানর ও “বনমানুষ’দের সামাজিক আচরণ অধ্যয়নের মাধ্যমেও বোঝার চেষ্টা করা হয় প্রাগৈতাসিক মানুষের সামাজিক সংগঠন কেমন হয়ে থাকতে পারে, এবং কোন্‌ কোন ক্ষেত্রে মানব আচরণ এই সব প্রাণীদের সাথে তুলনীয় বা তাদের থেকে পৃথক।

দৈহিক নৃবিজ্ঞান
দৈহিক নৃবিজ্ঞান

দৈহিক নৃবিজ্ঞানে সমকালীন বিভিন্ন মানবগোষ্ঠীর মধ্যেকার দৈহিক পার্থক্য ও সম্পর্ক নিয়েও গবেষণা করা হয়। এ ধরনের গবেষণায় দীর্ঘকাল যাবত বাহ্যিক বৈশিষ্ট্যসমূহের উপরই নজর কেন্দ্রীভূত ছিল। গায়ের রৎ চুলের ধরন, চোখ-মুখের গড়ন প্রভৃতির ভিত্তিতে মানবজাতিকে বিভিন্ন 18০6 বা নরবর্ণে বিভক্ত করার রেওয়াজ ছিল (18০6-এর বাংলা প্রতিশব্দ হিসাবে “মহাজাতি’ শব্দটিও বাংলায় প্রচলিত রয়েছে, বিশেষ করে রুশ ভাষা থেকে বাংলায় অনূদিত মিখাইল নেস্তুর্বের এজাতি, জাতি ও প্রগতি শীর্ষক একটি গ্রন্থে, যা বাংলাদেশের সাধারণ পাঠকদের জন্য সহজলভ্য ছিল)।

আপনারা মঙ্গোলীয়, ককেশীয়, নিগ্রোয়েড প্রভৃতি শব্দের সাথে নিশ্চয় পরিচিত আছেন, এবং কোন্‌ নরবর্ণভূক্ত মানুষের চেহারা বা অন্যান্য দৈহিক বৈশিষ্ট্য কেমন, এ সম্পর্কে আপনাদের কিছু ধারণা হয়তবা আছে। এগুলি হল একটি বহুল-প্রচলিত শ্রেণীকরণ অনুসারে প্রধান কয়েকটি নরবর্ণর নাম। এই শ্রেণীকরণে অনেকসময় অস্ট্রালয়েড নামে আরেকটি প্রধান নরবর্ণকে শনাক্ত করা হয়, অস্ট্রেলিয়া মহাদেশের আদিবাসী জনগোষ্ঠীরা যেটার অন্তর্গত। তবে প্রকৃতপক্ষে নরবর্ণর সংজ্ঞা ও শ্রেণীকরণ নিয়ে দৈহিক নৃবিজ্ঞানে কখনো কোন সর্বজনম্বীকৃত মতামত ছিল না।

অধিকন্তু সাম্প্রতিককালে দৈহিক নৃবিজ্ঞানীদের অধিকাংশই নরবর্ণর ধারণাকে বিজ্ঞান-সম্মত নয় বলে বাতিল করে দিয়েছেন। সমকালীন দৈহিক নৃবিজ্ঞানে নরবর্ণর ধারণা কার্যত পরিত্যক্ত হয়ে যাওয়ার একটা প্রধান কারণ হল, যেভাবেই নরবর্ণর সংজ্ঞা ও শ্রেণীকরণ দীড় করানো হোক না কেন, বাস্তবে এক নরবর্ণর সাথে আরেক নরবর্ণর কোন সুস্পষ্ট সীমারেখা চিহ্নিত করা যায় না।

এমন কোন মানবগোষ্ঠী খুঁজে পাওয়া মুশকিল যার প্রত্যেক সদস্যের মধ্যেই সকল ক্ষেত্রে অভিন্ন দৈহিক বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। বরং, যেভাবেই নরবর্ণর সংজ্ঞা ও শ্রেণীবিন্যাস নির্ধারণ করা হোক না কেন, অনেক জনগোষ্ঠীর দেখা মিলবে যাদের মধ্যে একাধিক নরবর্ণর বৈশিষ্ট্য বিভিন্ন মাত্রায় ছড়িয়ে আছে। এসব জনগোষ্ঠীকে মিশ্র” বলে চিহ্নিত করা হলেও প্রশ্ন থেকে যায়, কারণ মানব ইতিহাসে কখনো পৃথক পৃথক বিশুদ্ধ নরবর্ণ ছিল, এমন কোন স্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

দৈহিক নৃবিজ্ঞান
দৈহিক নৃবিজ্ঞান

নরবর্ণর ধারণা ব্যবহারের ক্ষেত্রে এসব পদ্ধতিগত সমস্যার পাশাপাশি আরেকটি বিপজ্জনক প্রবণতাও দেখা গেছে, সেটা হল, বিগত শতান্দীগুলোতে পশ্চিমা অনেক দেশেই নরবর্ণর ধারণার সাথে বর্ণবাদী চিন্তাচেতনা ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে গিয়েছিল, যেখানে বিভিন্ন বাহ্যিক দৈহিক বৈশিষ্ট্যের তারতম্যের ভিক্তিতে জাতিগত শেষ্ঠতু বা নিকৃষ্টতার ধারণা ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করা হত। এ ধরনের চিন্তাধারার পরিণতি কত মারাত্বক হতে পারে, তার প্রমাণ পাওয়া গিয়েছিল হিটলারের নাৎসী বাহিনী যখন জার্মান জাতিকে “শুদ্ধ’ করার নামে লক্ষ লক্ষ ইহুদী ও জিপসীকে হত্যা করে।

বর্তমানে দৈহিক নৃবিজ্ঞানে বাহ্যিক দৈহিক বৈশিষ্ট্যের চাইতে মানবজাতির অন্তর্নিহিত জেনেটিক (genetic অর্থাৎ জিন-সংক্রান্ত) বৈচিত্র্য অধ্যয়নের উপর অধিকতর জোর দেওয়া হয়। পৃথিবীতে বর্তমানে বসবাসরত জনগোষ্ঠীসমূহের মধ্যে বিভিন্ন জেনেটিক বৈশিষ্ট্য কিভাবে বন্টিত, এবং জেনেটিক পার্থক্যগুলো কি কারণে বা কি প্রক্রিয়ায় উদ্ভূত হয়ে থাকতে পারে, এসব প্রশ্নের উত্তর খোজার কাজে অনেক দৈহিক নৃবিজ্ঞানীও শামিল রয়েছেন। আর এ ধরনের পরিবর্তনের আলোকে ইদানীং দৈহিক নৃবিজ্ঞানের স্থলে জৈবিক নৃবিজ্ঞান (biological anthropology) পরিচয়টাই অনেকের কাছে অধিকতর গ্রহণীয় হয়ে উঠেছে।

যাই হোক, মানব বৈচিত্র্যের জৈবিক উপাদানসমূহ অধ্যয়নের ক্ষেত্রে দৈহিক/জৈবিক নৃবিজ্ঞানীদের নজর বাহ্যিক বা অবাহ্যিক যে ধরনের পার্থক্যের উপরই কেন্দ্রীভূত হোক না কেন, এসব পার্থক্যের মধ্য দিয়েও একই প্রজাতির সদস্য হিসাবে পৃথিবীর সকল মানুষ যেসব অভিন্ন বৈশিষ্ট্যের অধিকারী সেগুলির উপর আলোকপাত করাও তাদের অন্যতম লক্ষ্য থাকে। এভাবে তারা মানব অস্তিতকে পূর্ণাঙ্গভাবে অনুধাবনে সহায়তা করেন।

 

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment