আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় পুরোপলীয় ও নবোপলীয় সংস্কৃতি
পুরোপলীয় ও নবোপলীয় সংস্কৃতি
পুরোপলীয় ও নবোপলীয় সংস্কৃতি
চীনে প্রাচীনতম মানুষের বা অর্ধমানবের ফসিল পাওয়া গেছে। পাঁচ লক্ষ বছর আগেকার খাড়া মানুষের ফসিল পাওয়া গেছে পিকিংয়ের কাছে। এ মানুষ প্রাচীনতম পুরোপলীয় (অর্থাৎ পুরানো পাথরের যুগের) সংস্কৃতির অধিকারী ছিল। চীনে ২০-২৫ হাজার বছর পুরানো আধুনিক মানুষের ফসিলও যৎসামান্য পরিমাণে পাওয়া গেছে। এতে প্রমাণ হয় যে, চীনে উচ্চতর-পুরোপলীয় সংস্কৃতির বিকাশ ঘটেছিল। বিশ্ব সংস্কৃতিতে অতি আদিমকালে যে বিকাশ ঘটেছিল তার ঢেউ চীনে এসে পৌঁছেছিল।
১৯৫০ সালের পর থেকে চীনে নবোপলীয় (অর্থাৎ নতুন পাথরের যুগের) সংস্কৃতির অনেক চিহ্ন পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ইয়াং শাও এবং লুং শান নামক স্থানের নবোপলীয় গ্রামের সংস্কৃতি। ২২০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে ইয়াং শাও সংস্কৃতির বিকাশ ঘটেছিল বলে পণ্ডিতরা মনে করেন। ইয়াং শাও সংস্কৃতির মানুষরা ছিল কৃষক এবং তারা কুকুর ও শূকরকে পোষ মানিয়েছিল। এরা চমৎকার মৃৎপাত্র তৈরি করতে পারত এবং লাল, কালো ও সাদা রঙে তাদের চিত্রিত করতে পারত।

তুর্কিস্তান ও পশ্চিম এশিয়াতে যেসব মাটির পাত্র পাওয়া গেছে, তার সাথে এ সকল ইয়াং শাও পাত্রের বিলক্ষণ মিল আছে। অথচ, পশ্চিম এশিয়াতে মৃৎশিল্পের ধারাবাহিক বিকাশের যেসব প্রমাণ পাওয়া যায় চীনে সে ধরনের প্রমাণের কোনো চিহ্নই পাওয়া যায় না। তাই বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে, চীনে ইয়াং শাও সংস্কৃতির প্রবর্তন ঘটেছিল পশ্চিম এশিয়ার অনুকরণে।
উল্লেখ করা যেতে পারে যে, পশ্চিম-এশিয়াতে সাধারণভাবে নবোপলীয় বিকাশের একের পর এক ধাপগুলির চিহ্ন চোখে পড়ে, কিন্তু চীনে পুরোপলীয় সমাজ থেকে নবোপলীয় সমাজে উত্তরণের ধাপগুলির কোনো চিহ্ন দেখা যায়। না। চীনে নবোপলীয় সংস্কৃতি যেন হঠাৎ উদিত হয়েছিল। এ রকম যখন হয় তখন ধরে নেয়া যেতে পারে যে, নতুন সংস্কৃতি সেখানে বাইরে থেকে আনীত হয়েছে।
তাই চীনের ক্ষেত্রে মনে করা যেতে পারে যে, পশ্চিম-এশিয়া বা ঐ ধরনের কোনো স্থান থেকে পূর্ণ বিকশিত নবোপলীয় সংস্কৃতি চীনে তৈরি অবস্থায় এসেছিল, চীনের মাটিতে স্বতন্ত্রভাবে তার উদয় হয়নি। লুং শানের নবোপলীয় কৃষিভিত্তিক গ্রাম-সংস্কৃতির বিকাশ ঘটেছিল 2000 খ্রিস্টপূর্বাব্দে। এরা কালো রঙের সুন্দর উজ্জ্বল ও পাতলা মাটির পাত্র তৈরি করতে পারত।
পণ্ডিতদের মতে, পশ্চিম-এশিয়া এ সংস্কৃতির উৎস। অবশ্য এ বিষয়ে পণ্ডিতদের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে। অনেক পণ্ডিত মনে করেন, চীনে নবোপলীয় ও পরবর্তী অন্যান্য সংস্কৃতির উদয় স্বতন্ত্রভাবে ও নিজস্ব উদ্যোগে ঘটেছিল।
আরও দেখুন :