কেস স্টাডি : মাতৃসূত্রীয় আশান্টি জাতি

আজকের আলোচনার বিষয় কেস স্টাডি : মাতৃসূত্রীয় আশান্টি জাতি -তত্ত্ব অধ্যায়ের সারাংশ – যা পরিবার ও গৃহস্থালী এর অর্ন্তভুক্ত, আশান্টি সমাজের গৃহস্থালী সদস্য সাধারণত হন: একজন নারী, তার ভাই, তার পুত্র এবং কন্যা, এবং তার কন্যার সন্তানেরা। এই নারীর স্বামী বসবাস করেন তার নিজ গৃহস্থালীতে। স্বামীর গৃহস্থালীর অন্যান্য সদস্যরা হচ্ছেন: তার বোন, হয়ত তাদেরই আরেক ভাই, তার বোনের সন্তানেরা এবং তার কন্যার সন্তানসকল। স্বামী ও স্ত্রীর গৃহস্থালী কাছাকাছি অবস্থিত, এতে সহবাস এবং অন্যান্য সম্পর্ক বজায় রাখা সম্ভব হয়ে ওঠে। সাধারণত প্রায় ৮০ শতাংশ বিয়ে একই গ্রামে ঘটে থাকে।

স্বামী তার স্ত্রীর গৃহস্থালীতে নিয়মিত আসা যাওয়া করেন, এবং সেখানে রাত্রি যাপন করেন। সহবাসের সম্পর্ক বাদে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঘটে আর্থিক বিনিময়। স্ত্রী নিয়মিত তার স্বামীর জন্য রান্না করে। আশান্টি গ্রামের চিরাচরিত দৃশ্য হচ্ছে: প্রতি সন্ধ্যায় পুটলি হাতে ছোট ছোট মেয়েদের দেখা যায়। গ্রামের কন্যারা নিজ নিজ পিতার জন্য মায়ের হাতে রান্না করা খাবার নিয়ে যায়।

 

কেস স্টাডি : মাতৃসূত্রীয় আশান্টি জাতি
কেস স্টাডি : মাতৃসূত্রীয় আশান্টি জাতি

 

কেস স্টাডি : মাতৃসূত্রীয় আশান্টি জাতি

স্বামীর দায়িত্ব হচ্ছে স্ত্রী ও তাদের সন্তানদের খাওয়া-পরা সরবরাহ করা। যদি তিনি এই দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হন, তাহলে তার স্ত্রী বিবাহ বিচ্ছেদের দাবি জানাতে পারেন। পক্ষান্তরে, স্ত্রী যদি স্বামীর জন্য খাবার রান্না না করেন অথবা তার সাথে সহবাসে রাজী না হন তাহলে স্বামীও তালাক চাইতে পারেন। এর থেকে বোঝা যায় যে বিয়ের সম্পর্ক স্বামী এবং স্ত্রী, দুজনকেই দেয় কিছু আর্থিক অধিকার এবং দায়িত্ব।

কিন্তু বিয়ের চাইতেও শক্তিশালী অর্থনৈতিক একক হচ্ছে মাতৃসূত্রীয় গৃহস্থালী। একজন পুরুষ কখনোই চাষবাসের জন্য তাঁর ছেলেদের থেকে শ্রম দাবি করতে পারেন না। ঋণগ্রন্ত হয়ে পড়লে, ঋণ পরিশোধের জন্য পিতা হিসেবে তিনি তাদের সাহায্য চাইতে পারেন না। যদি কখনও এ ধরনের সাহায্য তাঁর প্রয়োজন হয় তাহলে তিনি একমাত্র তার ভগ্নীপুত্রের শরণাপন্ন হতে পারেন যাঁদের সাথে তিনি একত্রে বসবাস করেন।

 

আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন
আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

এ অব্দি আলোচনা থেকে দুটি বিষয় স্পষ্ট। একটি স্বতন্ত্র জ্ঞানকান্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাবার পর প্রাথমিক পর্যায়ের নৃবিজ্ঞান, জ্ঞাতিত্বের বহিগৃহী (extra-domestic) দিকের উপর বেশি গুরুত্বারোপ করেছিল। অর্থাৎ, “আদিম” সমাজের বৃহত্তর পরিসরে জ্ঞাতিত্ব কি কার্য সম্পাদন করে থাকে, এর গুরুত্ব এবং অর্থ কি, এ সকল বিষয় নৃবিজ্ঞানীদের মনোযোগের জায়গা ছিল।

বংশধারা এবং মৈত্রীবন্ধন তত্ত্ব এই সময়কালের সৃষ্টি। পরবর্তী পর্যায়ে, ১৯৬০ এবং ১৯৭০-এর দশকে, পরিবার এবং গৃহস্থালী – এসব বিষয়ে নৃবিজ্ঞানীরা নজর দেন। পরিবারকে সংজ্ঞায়িত করা হয় রক্ত ও বিবাহ-সূত্রে সৃষ্ট জ্ঞাতি দল হিসেবে। পাশ্চাত্য নৃবিজ্ঞানীরা ধরে নেন মূল পরিবার হচ্ছে স্বামী ও স্ত্রী দ্বারা গঠিত পরিবার। সামাজিক সংগঠনের মূল চাবিকাঠি হচ্ছে বিবাহিত দম্পতি এবং তাদের নিজ (বা পালিত) সন্তান।

কিন্তু ধীরে- ধীরে আরেকটি বিষয় স্পষ্ট হয়ে উঠে যে, পাশ্চাত্য নৃবিজ্ঞানীরা তাঁদের নিজ সমাজের ভাবনা-চিন্তা থেকে মুক্ত নন। শুধু তাই নয়, তাঁরা নিজ সমাজের ধ্যান-ধারণা (পরিবার গঠিত হয় বিয়ের মাধ্যমে, স্বামী ও স্ত্রীর একত্রে বসবাস স্বাভাবিক ও কাম্য) অন্যান্য সমাজে রপ্তানি করেন। এই উপলব্ধি থেকে সৃষ্ট নৃবিজ্ঞানের জ্ঞানজাগতিক সংকটের মীমাংসার চেষ্টা চলে।

 

কেস স্টাডি : মাতৃসূত্রীয় আশান্টি জাতি

 

কিছু নৃবিজ্ঞানী প্রস্তাব করেন যে, পরিবার এবং গৃহস্থালী, সর্বকাল ও সর্বস্থানের জন্য সত্য, এটি ধরে নেয়া ঠিক হবে না। পাশ্চাত্য সমাজে পরিবার যে কার্য সম্পাদন করে থাকে, হয়ত অপাশ্চাত্যের কোন সমাজে অন্য কোন জ্ঞাতিদল সেই কার্য পালন করে থাকে। তাঁরা সাংস্কৃতিক নির্দিষ্টতার উপর জোর দেন। অপর কিছু নৃবিজ্ঞানী এ ধরনের নৃবৈজ্ঞানিক তত্ত্বকে পাশ্চাত্য সমাজের বুদ্ধিবৃত্তিক বিস্তারের তৎপরতা হিসেবে দেখেন। তাঁরা বলেন, এই তত্ত্বগুলো সূক্ষ্মভাবে পাশ্চাত্য সমাজের প্রতিষ্ঠান এবং মূল্যবোধকে স্বাভাবিকত্বের মানদন্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে। এই কারণে, তাঁরা মনে করেন ভবিষ্যতের নৃবিজ্ঞান গড়ে ওঠা উচিত পাশ্চাত্য আধিপত্য এবং অপাশ্চাত্য অধস্তনতার সম্পর্ককে ঘিরে।

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment