রোমান সভ্যতার দর্শন

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় রোমান সভ্যতার দর্শন

রোমান সভ্যতার দর্শন

 

রোমান সভ্যতার দর্শন

 

রোমান সভ্যতার দর্শন

রোমানযুগের দর্শনের উপর গ্রীক প্রভাব সুপরিস্ফুট। গ্রীকদের এপিকিউরিয়ান ও স্টয়িক মতবাদ রোমানদের উচ্চশ্রেণীর নাগরিকদের উপর বিশেষ প্রভাব বিস্তার করেছিল। লুক্রেটিয়াস (৯৮-৫৫ খ্রিঃ পূঃ) ছিলেন এপিকিউরিয়ান মতবাদের প্রধান প্রবক্তা। On The Nature of Things বা ‘পদার্থের প্রকৃতি সম্পর্কে’ নামক বিখ্যাত কাব্যের রচয়িতা লুক্রেটিয়াসের মতে বিশ্বপ্রকৃতির প্রধান উদ্দেশ্য হল মানুষকে অতি প্রাকৃতিক শক্তির ভয় থেকে মুক্ত করা, কেননা এটাই আত্মার মঙ্গলের পথে প্রধান বাধা।

এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ড কতকগুলি আকস্মিকভাবে মিলিত অণুর সমষ্টি। লুক্রেটিয়াস দেবদেবীর অস্তিত্বে বিশ্বাস করলেও, তাঁর মতে এঁরা নিরবচ্ছিন্ন শান্তিতে নিমগ্ন, মানুষের ভাল-মন্দ বা পৃথিবীর নিয়ম-কানুনের উপর এঁদের কোনো হাত নেই। বিশ্বজগতের প্রতিটি বস্তু বস্তুতান্ত্রিক নিয়মে চলছে, এমনকি মানুষ ও তার কার্যকলাপ, তার অভ্যাস, রুচি, বিশ্বাস সবকিছুই এই নিয়মের অধীনে।

যেহেতু মানুষের মনও এই বস্তুতে তৈরি কাজেই মৃত্যুর সাথে সাথেই তার সম্পূর্ণ বিনাশ ঘটে। আত্মা বলে কিছুই নেই, কাজেই মৃত্যুর পরে স্বর্গে বা নরকে মানুষকে পুরস্কার বা পাপের শাস্তি ভোগ করতে হবে না। লুক্রেটিয়াসের কাব্যে এপিকিউরাস ও ডেমোক্রিটাস-এর পরমাণুতত্ত্বের প্রকাশ ঘটেছিল। গ্রীকদের স্টয়িক মতবাদ রোমানদের উপরও বিশেষ প্রভাব বিস্তার করেছিল। বিখ্যাত রোমান সিনেটর ও বক্তা সিসেরো এই মতবাদের প্রধান প্রবক্তা।

 

আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন
আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

তাঁর বিখ্যাত রচনা On Duty এবং Tusculan Disputations জেনোর মতবাদের প্রধান প্রতিফলন। তাঁর মতে, সদগুণই মানুষের সুখের মূল উৎস। একজন আদর্শ মানুষ সুখ ও দুঃখের ঊর্ধ্বে থেকে শুধুমাত্র যুক্তির দ্বারা পরিচালিত হবে। পূর্ববর্তী স্ময়িক দার্শনিকদের থেকে এক ধাপ অগ্রসর হয়ে সিসেরো বলেছেন, রাষ্ট্রের কাজ হচ্ছে ব্যক্তিস্বার্থ রক্ষা করা। তিনি রাষ্ট্রীয় বিধান ও আইনের ঊর্ধ্বে এমন একটি ন্যায়নীতির প্রয়োজন উল্লেখ করেছেন যা মানুষের দ্বারা তৈরি হবে না বরং প্রাকৃতিক নিয়ম ও যুক্তিই হবে যার উৎস।

সিসেরোর এই মতবাদ পরবর্তীকালে রোমান আইন প্রণয়নের মূল ভিত্তি রচনা করেছিল। পরবর্তীকালে স্টয়িক মতবাদ আরও জনপ্রিয়তা অর্জন করে। রোমানদের প্রাচীন মূল্যবোধ ও ধ্যান-ধারণার সাথে এর বিশেষ মিল এই জনপ্রিয়তার মূল কারণ। পরবর্তী যুগের রোমান স্টয়িক মতবাদ জেনো বা তাঁর অনুসারীদের মতবাদ থেকে অনেক দূরে সরে যায়। রোমের স্বৈরতন্ত্রের যুগে সেনেকা, এপিকটেটাস ও সম্রাট মার্কাস অরেলিয়াস ছিলেন স্টয়িক মতবাদের প্রধান প্রবক্তা।

তাঁদের সবার মতে, প্রাকৃতিক নিয়মের সম্পূর্ণ বশবর্তী হয়েই প্রকৃত সুখ অনুভব করা যায়। সেনেকা ও এপিকটেটাস তাঁদের মতবাদকে একেবারে ধর্মের পর্যায়ে উপনীত করেছিলেন। তাঁদের মতে, বিশ্বজগৎ একজন সর্বশক্তিমানের নির্দেশে এর মূল লক্ষ্যের দিকে পরিচালিত। মার্কাস অরেলিয়াসের মতবাদ ছিল নৈরাশ্যজনক।

 

রোমান সভ্যতার দর্শন

 

তাঁর মতে, মানুষ দুর্ভাগ্যকে সাথে নিয়ে জন্মেছে, কাজেই কিছুতেই সে শান্তির লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারছে না। তাঁর মতে, তবুও মানুষকে ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে হবে, কেননা পঙ্কিলতার স্রোতে গা ভাসিয়ে বা অধৈর্য হয়ে প্রতিবাদে ভেঙে পরা— কোনটাই সমাধান নয় ।

আরও দেখুন :

Leave a Comment