আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় রোমের গৃহযুদ্ধ এন্টনী ও অক্টেভিয়ান
রোমের গৃহযুদ্ধ এন্টনী ও অক্টেভিয়ান
রোমের গৃহযুদ্ধ এন্টনী ও অক্টেভিয়ান
সীজারের হত্যাকাণ্ড রোমকে আরেকবার গৃহযুদ্ধে নিক্ষেপ করে। সীজারকে হত্যা করে ব্রুটাস ও ক্যাসিয়াস রোমের ক্ষমতা দখলের চেষ্টা করেন। কিন্তু রোমের জনসাধারণ সীজারের মৃত্যুতে এতখানি শোকাভিভূত হয়ে পড়ে যে ব্রুটাস ও ক্যাসিয়াস ভীত হযে রোম ছেড়ে পালিয়ে যান। মার্ক এন্টনী বিপুলসংখ্যক জনসমর্থনের মাধ্যমে সীজারের স্থলে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন। কিন্তু অচিরেই তিনি আরেকজন প্রতিদ্বন্দ্বীর সাক্ষাৎ পান।
এ নতুন প্রতিদ্বন্দ্বী হলেন অক্টেভিয়ান— ইনি ছিলেন সীজারের নিকটতম আত্মীয় ওপালিত পুত্র, এঁকেই সীজার তাঁর উত্তরাধিকারী মনোনীত করে যান। অষ্টাদশ বছরের অক্টেভিয়ান অত্যন্ত বিচক্ষণ ও বুদ্ধিমান ছিলেন। এন্টনীর বিরুদ্ধে তিনি প্রথমেই যুদ্ধ ঘোষণা না করে বরং রোমের আরেকজন নেতা লেপিডাস-এর সাথে একত্রিত হয়ে এন্টনীর কাছে জোট গঠনের প্রস্তাব দিলেন। খ্রিস্ট পূর্ব ৪৭ অব্দে এন্টনী, অক্টেভিয়ান ও লেপিডাস দ্বিতীয় ট্রায়ামভায়রেট গঠন করলেন।
বিশাল রোমান সাম্রাজ্য এ তিনজন নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নিলেন। এন্টনীকে দেয়া হল পূর্বাঞ্চলের প্রদেশগুলির ভার, অক্টেভিয়া পেলেন পশ্চিমাঞ্চলের কর্তৃত্ব এবং আফ্রিকার অংশ দেয়া হল লেপিডাসকে। ট্রয়ামভায়রেট-এর প্রথম কাজ হল জুলিয়াস সীজারের হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত ব্যক্তিদের খুঁজে বের করে শাস্তি দেয়া। হত্যাকাণ্ডের প্রধান নায়ক ব্রুটাস ও ক্যাসিয়াসকে শাস্তিদানের উদ্দেশ্যে এন্টনী ও অক্টেভিয়ান একত্রে পূর্বদিকে অভিযানে বহির্গত হলেন।

তাঁরা আড্রিয়াটিক সাগর অতিক্রম করে থ্রেস-এ পৌঁছালেন। সেখানে তাঁরা ব্রুটাস ও ক্যাসিয়াস-এর দেখা পেলেন। ফিলিপির যুদ্ধে ব্রুটাস ও ক্যাসিয়াসকে তাঁরা পরাজিত করলেন। যুদ্ধে পরাজিত হয়ে ব্রুটাস ও ক্যাসিয়াস উভয়েই আত্মহত্যা করেন। ফিলিপির যুদ্ধে সাফল্য লাভের পর অক্টেভিয়ান রোমে ফিরে এলেন। এন্টনী গ্রীস ও এশিয়া মাইনরের দিকে অগ্রসর হলেন সেখানকার অবস্থাকে সম্পূর্ণভাবে আয়ত্তে আনার উদ্দেশ্যে।
মিশরে উপস্থিত হয়ে তিনি ক্লিওপেট্রার সাক্ষাৎ পেলেন। প্রাচ্যের সুন্দরীর রূপে মুগ্ধ হয়ে এন্টনী নিজ কর্তব্য সম্পূর্ণরূপে বিস্মৃত হলেন। দিনের পর দিন মিশরের রাজপ্রাসাদের বিলাস ব্যসনের মধ্যে এন্টনীর দিন কাটতে লাগল । এদিকে এন্টনীর শত্রুরা রোমে প্রচার করতে লাগল, এন্টনী আলেকজান্দ্রিয়াকেই রোমান সাম্রাজ্যের রাজধানীতে পরিণত করতে চান। অক্টেভিয়ান এ সুযোগের অপেক্ষাতেই ছিলেন।
তিনি সিনেটকে নির্দেশ দিলেন এন্টনীকে প্রাচ্যের শাসনকর্তার পদ থেকে বিচ্যুত করতে। অক্টেভিয়ান অতঃপর এন্টনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। এন্টনীও যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হলেন। মিশরের সৈন্যবাহিনী এন্টনীকে সম্পূর্ণভাবে সহায়তা করল। গ্রীসের পশ্চিম তীরে এক্টিয়াম নামক স্থানে উভয়ের মধ্যে বিরাট নৌ-যুদ্ধ সংঘটিত হয়। যুদ্ধে বিপর্যয়ের সম্ভাবনা দেখে ক্লিওপেট্রা তাঁর যুদ্ধজাহাজ নিয়ে পলায়ন করলেন। এন্টনী যুদ্ধক্ষেত্র ত্যাগ করে ক্লিওপেট্রার সাথে পালিয়ে গেলেন।
পরাজিত ও বিধ্বস্ত মিশরীয় নৌবাহিনীর অবশিষ্টাংশ অক্টেভিয়ান-এর নিকট আত্মসমর্পণ করল। পরাজয়ের সংবাদে এন্টনী ও ক্লিওপেট্রা উভয়েই আত্মহত্যা করলেন। মিশর এখন থেকে রোমান সাম্রাজ্যভুক্ত হল। অক্টেভিয়ান-এর শেষ প্রতিদ্বন্দ্বীর মৃত্যুর সাথে সাথে রোমের গৃহযুদ্ধেরও সমাপ্তি ঘটে।
আরও দেখুন :