আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় সফিস্ট এরিস্টটলের দর্শন। এরিস্টটল (প্রাচীন গ্রিক ভাষায় Ἀριστοτέλης আরিস্তোতেল্যাস্) (খ্রিষ্টপূর্ব ৩৮৪ – ৭ই মার্চ, খ্রিষ্টপূর্ব ৩২২) বিশ্ববিখ্যাত গ্রিক বিজ্ঞানী ও দার্শনিক। তাঁকে প্রাণিবিজ্ঞানের জনক বলা হয়। এছাড়া প্লেটোর সাথে যৌথভাবে তাঁকে “পশ্চিমা দর্শনের জনক” বলে অভিহিত করা হয়। এরিস্টটল সক্রেটিস ও প্লেটোর দর্শনসহ তার পূর্বের সময়ের বিদ্যমান বিভিন্ন দর্শনের জটিল ও সদৃশ সমন্বয় দেখান।
প্রাচীন গ্রিক দর্শনের আলোচনায় সোফিস্তেস (গ্রিক: σοφιστής) কথাটি দিয়ে খ্রিস্টপূর্ব ৫ম ও ৪র্থ শতকের সময়ে প্রাচীন গ্রিসের এমন এক ধরনের শিক্ষককে নির্দেশ করা হয়, যিনি এক বা একাধিক পাঠ্যবিষয়ের উপরে বিশেষজ্ঞ ছিলেন; বিষয়গুলির মধ্যে দর্শন, অলঙ্কারশাস্ত্র, সঙ্গীত, মল্লক্রীড়া ও গণিত উল্লেখ্য। তারা মূলত তরুণ রাষ্ট্রপরিচালক, কূটনীতিবিদ ও অভিজাত শ্রেণীর ব্যক্তিদেরকে “আরেতে” তথা সদগুণ বা উৎকৃষ্ট নৈতিক মূল্যবোধ শিক্ষা দিতেন। এদেরকে ইংরেজিতে সফিস্ট (Sophist) বলা হয়।
সফিস্ট এরিস্টটলের দর্শন
![এরিস্টটল [ Aristotle ]](/wp-content/uploads/2023/10/Aristotle-এরিস্টটল-1-224x300.jpg)
সফিস্ট এরিস্টটলের দর্শন
এ্যারিস্টটল প্লেটোর ছাত্র এবং শিষ্য হলেও, মৌলিক চিন্তার অধিকারী দার্শনিক ও বৈজ্ঞানিক হিসেবে তিনি খ্যাতিলাভ করেছেন। এ্যারিস্টটল খ্রিস্টপূর্ব ৩৮৪ অব্দে ঈজিয়ান উপসাগরের উত্তর-পশ্চিম উপকূলে অবস্থিত গ্রীক ঔপনিবেশিক নগরী স্ট্যাগিরা-তে জন্মগ্রহণ করেন। ১৭ বছর থেকে ৩৭ বছর বয়স পর্যন্ত তিনি এথেন্সে অবস্থিত প্লেটোর বিদ্যালয় ‘একাডেমি’-তে অধ্যয়ন করেন।
৩৭ বছর থেকে ৪৯ বছর বয়স পর্যন্ত তিনি বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ করেন এবং কিছুকাল ম্যাসিডোনিয়ার যুবরাজ আলেকজান্ডারকে শিক্ষাদানের কাজে নিয়োজিত থাকেন। জীবনের শেষ বার বছর তিনি এথেন্সে লাইসিয়াম (Lyceum) নামক বিদ্যালয় স্থাপন করেন এবং সেখানে বিদ্যাচর্চা ও গবেষণাকার্যে নিমগ্ন থাকেন। খ্রিস্টপূর্ব ৩২২ অব্দে তাঁর মৃত্যু হয়। এ্যারিস্টটলের দার্শনিক চিন্তাধারার শুরু হয়েছিল প্লেটোর দর্শনচিন্তাকে অবলম্বন করে।
প্লেটোর মৃত্যু পর্যন্ত এবং এ্যারিস্টটলের মধ্যবয়স পর্যন্ত এরিস্টটলের ওপর প্লেটোর দর্শনের প্রভাব স্থায়ী হয়েছিল। কিন্তু জীবনের শেষ ২৫ বছর তিনি নিজের উদ্ভাবিত একটি দর্শন ও জ্ঞানচর্চার পদ্ধতি অনুসরণ করেন। প্লেটো বাস্তব জগৎকে সামগ্রিকভাবে বিচার করতেন এবং তিনি যে জগৎ সম্পর্কে অনুসন্ধান করেছিলেন সেটি ছিল ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বস্তুর বাইরের ‘ভাব’ (idea) দ্বারা গঠিত কোনো এক জগৎ।
![এরিস্টটল [ Aristotle ]](/wp-content/uploads/2023/10/Aristotle-এরিস্টটল-5-300x295.jpg)
অপরপক্ষে এ্যারিস্টটল বাস্তব জগৎকে পদার্থবিদ্যা, প্রাণিবিদ্যা, নীতিশাস্ত্র, রাজনীতি এবং মনস্তত্ত্ব-এ কয়টি ক্ষেত্রে বিভক্ত করে বাস্তব জগৎকে বিচার-বিশ্লেষণের কাজে অগ্রসর হয়েছিলেন। বাস্তব জগতের গবেষণার প্রতিটি ক্ষেত্রে তাঁর অনুসৃত পদ্ধতির মূল কথা ছিল : উপাত্ত (data) বা ঘটনাবলীর পর্যবেক্ষণ।
জীবতাত্ত্বিক গবেষণার ক্ষেত্রে তিনি নিখুঁতভাবে উপাত্ত সংগ্রহের উদ্দেশ্যে প্রাণিদেহের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কেটে প্রাণিদেহের ভেতরের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতেন; এক্ষেত্রে আধুনিককালের পরীক্ষামূলক বৈজ্ঞানিক গবেষণার সাথে এ্যারিস্টটলের পদ্ধতির মিল আছে। এ্যারিস্টটলের গবেষণার উদ্দেশ্য ছিল, তাঁর অনুসন্ধানের অধীন উপাত্তসমূহের কোনো বিকৃতি না ঘটিয়ে তাদের সম্পর্কে একটা সাধারণ তত্ত্বের উদ্ভাবন করা।
প্রাণিবিদ্যাসংক্রান্ত গ্রন্থে তিনি লেখেন যে, কোনো বিষয়ে সত্য উদ্ঘাটনের প্রক্রিয়া হবেঃ ‘ঐ দলভুক্ত সমস্ত প্রাণীর সাধারণ গুণসমূহের বর্ণনা প্রদান এবং তারপর ঐ গুণসমূহের ব্যাখ্যা প্রদানের চেষ্টা করা। ত এ্যারিস্টটল অতি উচ্চ পর্যায়ের বৈজ্ঞানিক মানসিকতা অর্জন করেছিলেন। প্রথমত, তিনি ভিন্ন ভিন্ন ‘বিজ্ঞানের’ বা ‘গবেষণার বিষয়সমূহের’ মধ্যে পার্থক্যের সীমারেখা নিরূপণ করেছিলেন এবং তাদের ভিন্ন ভিন্ন নাম প্রদান করেছিলেন।
![এরিস্টটল [ Aristotle ]](/wp-content/uploads/2023/10/Aristotle-এরিস্টটল-4-300x177.jpg)
বিজ্ঞানের ঐ সব শাখা এখনো ঐ সব নামেই পরিচিত রয়েছে— যথা, পদার্থবিদ্যা, জীববিদ্যা প্রভৃতি। দ্বিতীয়ত তিনি তাঁর আলোচিত প্রতিটি বিষয়ে বৈজ্ঞানিক গবেষণার নিয়মাবলী সততার সাথে মেনে চলতেন। অবশ্য অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্যেই তাঁকে কাজ করতে হয়েছে— তাঁর কালে বৈজ্ঞানিক গবেষণার উপযোগী যন্ত্রপাতি বিশেষ কিছু ছিল না, এবং বৈজ্ঞানিক যুক্তি প্রক্রিয়াকেও তাঁকেই উদ্ভাবন বা আবিষ্কার করতে হয়েছে।
এ্যারিস্টটলের বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির সারসত্তা এবং তাঁর প্রদত্ত শিক্ষার ধারা অব্যাহত থাকলে তার ফলে গ্রীসে বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের প্রভূত বিকাশ ঘটতে পারত। প্রকৃতি বিষয়ে গবেষণার যৌক্তিকতা এবং একটি পরিকল্পনাও তিনি প্রদান করেছিলেন, কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত তাঁর শিক্ষার সারবস্তু এবং তাঁর প্রদর্শিত বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি তাঁর শিষ্যরা অনুসরণ করেননি।
এর একটা কারণ এ হতে পারে যে, খ্রিস্টপূর্ব ৩২৩ অব্দে আলেকজান্ডারের মৃত্যুর সংবাদ পেয়েই এ্যারিস্টটল যখন দ্রুত এথেন্স ত্যাগ করেন তখন তিনি তাঁর রচিত গ্রন্থসমূহও সাথে করে নিয়ে যান। খ্রিস্টপূর্ব ৩২২ অব্দে এথেন্স থেকে অনেক দূরে, এ্যারিস্টটলের মায়ের দেশে, ইওরিয়া দ্বীপে, যখন তাঁর মৃত্যু ঘটে তারপর থেকে দুশো বছর পর্যন্ত এ্যারিস্টটলের রচনাসমূহ লোকচক্ষুর অগোচরে বাক্সবন্দী হয়ে পড়ে ছিল।
এ্যারিস্টটলের শিষ্যরা এ সময়ে গুরুর গ্রন্থাবলীর সহায়তা থেকে বঞ্চিত হয়ে দ্রুত তাঁর বৈজ্ঞানিক কৌতূহল-সমৃদ্ধ প্রেরণার প্রভাবকে রক্ষা করতে অসমর্থ হয়ে পড়েন। এ্যারিস্টটলের অনুগামী পেরিপ্যাটেটিক গোষ্ঠী (এ্যারিস্টটল বাগানে হাঁটতে হাঁটতে ছাত্রদের শিক্ষা দিতেন বলে তাঁর অনুগামীদের পেরিপ্যাটেটিক নামে অভিহিত করা হয়; গ্রীক ভাষায় পেরিপেটোস শব্দের অর্থ হল পায়চারি করা) ক্রমশ একটি গোঁড়া মতবাদের অনুগামী হয়ে ওঠে।
দুশো বছর পরে যখন এ্যারিস্টটলের রচনাবলীকে পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হল তখন, আর তার মূল্য উপলব্ধি করা পণ্ডিতদের পক্ষে বা এ্যারিস্টলের অনুগামীদের পক্ষে সম্ভব হল না। এ্যারিস্টটলের শিক্ষাকে নতুন গবেষণার কাজে প্রয়োগ করার পরিবর্তে, তাঁর গ্রন্থাবলীকে জ্ঞানের চরম বিকাশ রূপে গণ্য করা হল। এ্যারিস্টটল তাঁর সাময়িক বা আপাত সিদ্ধান্তকে কখনো চূড়ান্ত সত্য বলে দাবি করতেন এমন মনে করার কোনো সঙ্গত কারণ নেই।

কিন্তু তাঁর অনুগামী এবং উত্তরসূরীরা এ্যারিস্টটলকে ‘সকল পণ্ডিতদের গুরু’ নামে অভিহিত করলেন এবং এ্যারিস্টটলের গ্রন্থাবলীতে বিধৃত সকল কথাকে পরিপূর্ণ জ্ঞানের চূড়ান্ত প্রকাশ বলে গণ্য করলেন। জ্ঞান অনুসন্ধানে প্রেরণাদানকারী হিসেবে এ্যারিস্টটলের মৃত্যু ঘটল; এরপর থেকে এ্যারিস্টটলকে চূড়ান্ত জ্ঞানের উৎস হিসেবেই গণ্য করা হল। এভাবে একজন মহান গবেষককে গবেষণা প্রক্রিয়ার প্রতিবন্ধক শক্তিতে পরিণত করা হল।
বহু শতাব্দী ধরে এ্যারিস্টটলকে এই দুর্ভাগ্যের বোঝা বহন করতে হল। বহু যুগ ধরে পেরিপ্যাটেটিক গোষ্ঠী এ্যারিস্টটলকে ‘জ্ঞানের আধার’ রূপে প্রচার করল। মধ্যযুগের ইউরোপে এ্যারিস্টটলকে খ্রিস্টীয় ধর্মযাজকরাও ‘জ্ঞানীদের গুরু’ হিসেবে গ্রহণ করে নিলেন। অবশেষে ষোল শতকে এ্যারিস্টটলের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে তবেই মাত্র আধুনিক বিজ্ঞান নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারল— অথচ প্রকৃতপক্ষে এ্যারিস্টটল ছিলেন সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক মনোভাবাপন্ন ব্যক্তিদের মধ্যে একজন।
এ্যারিস্টটলের বাস্তব তথ্যের প্রতি গভীর আস্থা ছিল এবং ঐ সব তথ্যকে তাদের গুণ অনুসারে শ্রেণীবদ্ধ করতে তিনি গভীরভাবে আগ্রহী ছিলেন। এ্যারিস্টটল যখন শেষ বয়সে বৈজ্ঞানিক মানসের অধিকারী হন, তখন তিনি প্লেটোর প্রচারিত ‘আইডিয়া’-র ধারণা পরিত্যাগ করেন।
এ্যারিস্টটলের কথা ছিল অনেকটা এ রকম— একটি বিশেষ জিনিস আর তার সার্বজনীন রূপের মধ্যে সম্পর্ক হচ্ছে এই যে, একই জাতীয় পদার্থ আমাদের ইন্দ্রিয়ে বারবার যে অনুভূতির সৃষ্টি করে সেটা প্রথমে স্মৃতির পর্যায়ে এবং পরে অভিজ্ঞতার পর্যায়ে উন্নীত হয় এবং এভাবেই ঐ সকল একজাতীয় পদার্থের সার্বজনীন রূপের ধারণা আমাদের মনে গড়ে ওঠে।
এ সকল ধারণা নির্মাণ করে আমরা আমাদের পক্ষে বোধগম্য একটা জগৎ গড়ে তুলি— এবং এটিই আমাদের জ্ঞানময় জগৎ, আর এ জগতের মধ্যেই আমরা যুক্তিতর্কে লিপ্ত হতে পারি এবং যথাযথ যুক্তি প্রক্রিয়া ব্যবহার করতে পারি। জ্ঞানের জগতে এ্যারিস্টটলের এটি একটি শ্রেষ্ঠ অবদান যে, তিনি এ সকল পদ্ধতি রচনা করেন এবং তিনিই প্রথম এ সকল বিধিনিয়ম প্রবর্তন করেন; এবং তিনিই যুক্তিবিজ্ঞানের আবিষ্কার করেন।
![এরিস্টটল [ Aristotle ]](/wp-content/uploads/2023/10/Aristotle-এরিস্টটল-2-300x157.jpg)
তাঁর আগেও যুক্তিতর্কের ব্যবহার প্রচলিত ছিল এবং প্লেটোর ‘কথোপকথন মূলক পুস্তকসমূহে যুক্তিবিদ্যার পদ্ধতি এবং নিয়মাবলীর দৃষ্টান্ত পাওয়া যায়। কিন্তু এ্যারিস্টটলই সর্বপ্রথম সুস্পষ্টভাবে এ সকল নিয়ম বিবৃত করেন এবং সিলোজিজম (ওহফফমথধ্রব) নামক ন্যায়শাস্ত্রের যুক্তিধারার আবিষ্কর্তা হিসেবে দর্শনচিন্তার ইতিহাসে তিনি একটি স্থায়ী আসনের দাবিদার (সিলোজিম যুক্তি প্রক্রিয়ায় দুটি তথ্য বা প্রতিজ্ঞা থেকে স্থিরীকৃত একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছার প্রক্রিয়া বর্ণিত হয়েছে)।
এ্যারিস্টটলের চিন্তাধারার মধ্যে যে সাধারণ দৃষ্টিভঙ্গি সর্বদা বিদ্যমান ছিল তা হল বিবর্তন বা পরিবর্তনের ধারণা। তিনি ধারণাকে ‘জেনেসিস’ (Genesis) নামে বর্ণনা করেছেন, বর্তমান কালে ইংরেজিতে যে শব্দের অর্থ হল উৎপত্তি। সব জিনিসেরই পরিবর্তন এবং বৃদ্ধি আছে— এ কথাটাই এ্যারিস্টটল বলতে চেয়েছেন। এ্যারিস্টটলের এ ধারণাটা পদার্থবিদ্যা (Physics) নামক গ্রন্থে বিশদভাবে বর্ণিত হয়েছে।
জীববিদ্যা বিষয়ে অনুসন্ধানের ফলে তাঁর মনে পরিবর্তন ও বিবর্তনের ধারণার সৃষ্টি হয়েছিল, অথবা সাধারণভাবে দার্শনিক অনুসন্ধানের ফলে তিনি পরিবর্তনের তত্ত্বে বিশ্বাসী হন এবং ঐ তত্ত্বের প্রয়োগ ক্ষেত্র খুঁজতে গিয়ে তিনি জীববিদ্যা অধ্যয়ন করেন— এ প্রশ্নের মীমাংসা করা কঠিন। তবে, জগতের পরিবর্তনশীলতা ও বিকাশ বা বৃদ্ধি সম্পর্কে এ্যারিস্টটলের যে সুনিশ্চিত বিশ্বাস ছিল, প্লেটোর চিন্তার সাথে এ্যারিস্টটলের চিন্তার পার্থক্যের মূল বিষয় ছিল সেটিই।
একটি জিনিস যে রূপ নিয়ে আমাদের সামনে উপস্থিত সেই স্থির রূপটিতেই (being, সত্তা) প্লেটোর আগ্রহ ছিল; একটি জিনিস ক্রমিক পরিবর্তনের মাধ্যমে একটা কিছুতে পরিণত হছে (becoming) -এ পরিবর্তনের প্রতি প্লেটোর আগ্রহ ছিল না। প্লেটোর মতে পরিবর্তনশীলতা হচ্ছে ভ্রান্ত ইন্দ্রিয়ের অনুভূতি দিয়ে গড়া মিথ্যা ও অস্থায়ী জগতের অংশ। প্লেটো এক স্থায়ী ও সত্য জগতের ব্যাখ্যা করতে চেয়েছিলেন গণিতের সত্যের ভিত্তিতে, আর তাঁর জগতের ভিত্তি ছিল গণিতের সংখ্যা।
তাই প্লেটোর জগৎ ছিল এক স্থির, অচল ও অপরিবর্তনশীল জগৎ। এ্যারিস্টটলের জগৎ কিন্তু সচল, অস্থির ও পরিবর্তনশীল। তাঁর জগতে সব বস্তুই বিকাশমান অবস্থায় আছে। তিনি বলতেন, প্রত্যেক জিনিসের ধর্মই হচ্ছে তার অন্তর্নিহিত সুপ্ত ক্ষমতা অনুযায়ী বিকাশ লাভ করা। এ্যারিস্টটল বলতেন, প্রত্যেক জিনিস তার সুপ্ত প্রকৃতি অনুযায়ী বিকাশ লাভ করে চূড়ান্ত পরিণতির দিকে এগিয়ে যায়; এবং এভাবে প্রত্যেক বস্তু যখন তার পূর্ণ বিকশিত রূপ প্রাপ্ত হয়, তখন সেটাকেই তার আসল প্রকৃতি বলে গণ্য করা চলে।
![এরিস্টটল [ Aristotle ]](/wp-content/uploads/2023/10/Aristotle-এরিস্টটল-3-300x200.jpg)
এ্যারিস্টটলের এই মতের পেছনে অবশ্য টেলিওলজি (teleology) বা উদ্দেশ্যবাদমূলক মতবাদ-এর অস্তিত্ব লক্ষ করা যায়। অর্থাৎ, এ্যারিস্টটল বলতে চাইছেন, পরিবর্তনটা ঘটে এ কারণে নয় যে, পরিবর্তনই জগতের নিয়ম; বরং তাঁর মতে জগতের প্রত্যেকটি জিনিস যাতে পূর্ব নির্ধারিত কোনো চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছতে পারে সে প্রয়োজনেই জগতে পরিবর্তন ঘটে।
এ্যারিস্টটল-এর এই উদ্দেশ্যবাদ বা টেলিওলজিকে অবশ্য আধুনিক বিজ্ঞান বর্জন করেছে। এ্যারিস্টটল নীতিশাস্ত্র এবং রাজনীতি সম্পর্কে যে সকল অভিমত ব্যক্ত করেছিলেন, পরবর্তীকালের চিন্তাধারাকে তা দীর্ঘকাল ধরে বিরামহীনভাবে প্রভাবিত করেছিল।
আরও দেখুন :