কেস স্টাডি ২: ইরোকোওয়া মাতৃসূত্রীয় বংশধারা

আজকের আলোচনার বিষয় কেস স্টাডি ২: ইরোকোওয়া মাতৃসূত্রীয় বংশধারা – যা সামাজিক কাঠামো ও জ্ঞাতিত্ব এর অর্ন্তভুক্ত, উত্তর আমেরিকার (বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) উত্তরপূর্ব অঞ্চলের বাসিন্দা ইরোকোয়া মিত্রসংঘ । এই সংঘে আছে ৫টি জাতি – ওনোনডাগা, মোহ, সেনেকা, ওনাইডা, ক্যায়ুগা- যাদের সংস্কৃতিতে রয়েছে মিল।

ইরোকওয়া জ্ঞাতি দলের কেন্দ্রে রয়েছে গৃহস্থালী: মাতৃসূত্রিতার ভিত্তিতে সম্পর্কিত একাধিক অণু পরিবারের বসবাসস্থল হচ্ছে গৃহস্থালী। এই পরিব্যাপ্ত পরিবারের নারীকুল যৌথভাবে কৃষি যন্ত্রপাতি এবং উদ্যানের দেখভালের দায়িত্বে, তারা একত্রে ভুট্টা এবং অন্যান্য মুখ্য ফসল চাষ করে থাকেন। পুরুষেরা শিকার করেন এবং মাছ ধরেন। গৃহস্থালী নিয়ন্ত্রণ করেন বয়োজ্যেষ্ঠ নারীরা; জড়ায়ুভিত্তিক বসবাসের নীতির কারণে পুরুষেরা হচ্ছেন বহিরাগত। তাদের বংশ পরিচয় নির্ধারিত হয় তাদের মা, এবং তার বংশ পরিচয়ের মাধ্যমে।

কেস স্টাডি ২: ইরোকোওয়া মাতৃসূত্রীয় বংশধারা

 

কেস স্টাডি ২: ইরোকোওয়া মাতৃসূত্রীয় বংশধারা

 

মাতৃসূত্রে । সম্পর্কিত এক গুচ্ছ গৃহস্থালী মিলে গঠিত হয় একটি মাতৃসূত্রীয় গোষ্ঠী। প্রায় সকল অথবা অধিকাংশ গোষ্ঠীর রয়েছে পুরুষ দলপতি। বয়োজ্যেষ্ঠ নারীরা পুরুষ দলপতি বাছাই করেন। মাতৃসূত্রীয় কিছু গোষ্ঠী মিলে গঠিত হয় একটি মাতৃসূত্রীয় বংশ। বংশের সদস্যদের মধ্যে বিবাহ নিষিদ্ধ। প্রতিটি (উপ]জাতি-তে থাকে ৮টি বংশ। নির্দিষ্ট কোন একটি মাতৃসূত্রীয় গোষ্ঠী বলতে যেই বিশেষ মাতৃসূত্রীয় গৃহস্থালীগুলোকে বোঝায়, তাঁরা গ্রামের যে কোন একটি অংশে বসবাস করেন। কোন একটি গ্রামে একাধিক মাতৃসূত্রীয় গোষ্ঠী বসবাস করে। মাতৃসূত্রীয় বংশগুলো যূথবদ্ধ । একই মাতৃসূত্রীয় বংশের সদস্য হলে দুর্দিনে কিংবা সংঘাতের মুহূর্তে সকলে এককাট্টা হয়ে পারস্পরিক সাহায্য প্রদানে বাধ্য ।

 

আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন
আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

যেমন গৃহস্থালী, তেমনি রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক অঙ্গনেও দেখা যায় ইরাকওয়া নারীদের সমাদর। পাঁচ উপজাতির সম্মিলনে গঠিত ইরোকওয়া মিত্রসংঘ শাসনের দায়িত্বে রয়েছেন ৫০ জন সাচেম-এর একটি পরিষদ। সাচেমরা হচ্ছেন পুরুষ দলপতি; শান্তি-রক্ষা এবং বহিদলের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখা তাঁদের কাজ। সাচেমের পদ উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত।

ইরোকোয়া মিত্রসংঘের সাচেম পরিষদের সদস্যরা নিজ-নিজ উপজাতিকে প্রতিনিধিত্ব করেন; আবার প্রতিটি উপজাতির অভ্যন্তরে আছে ছোট সাচেম পরিষদ, এই পরিষদের সদস্যরা তাদের নিজ নিজ মাতৃবংশকে প্রতিনিধিত্ব করেন। মাতৃসূত্রিতার ভিত্তিতে সাচেম নিযুক্ত হন। যদি কোন সাচেম মারা যান তাহলে বংশের বয়োজ্যেষ্ঠ নারীরা মিলে নতুন সাচেম নিযুক্ত করেন। যদি নতুন সাচেম অল্পবয়স্ক হন তাহলে একজন বয়োজ্যেষ্ঠ নারী তার দায়িত্ব পালন করে থাকেন। সকল সাচেম পদের মান-মর্যাদা এক নয়। কিছূ সাচেম পদ গুরুত্বপূর্ণ, যেমন ওনোনডাগা উপজাতির ৩টি সাচেম পদ ।

 

কেস স্টাডি ২: ইরোকোওয়া মাতৃসূত্রীয় বংশধারা

 

শ্রাদ্ধ এবং মৃত্যু শোক আয়োজন নারীদের কাজ। ইরোকওয়াদের মাঝে দলপতির পদ সংরক্ষিত হয় প্রতীকী অর্থে কেল্ট দ্বারা। এই বেল্ট বংশের বয়োজ্যেষ্ঠ নারীদের হাতে থাকে। পারিষদের সিদ্ধান্ত নারীরা প্রভাবিত করতে পারেন বংশের সাচেমের সাথে সরাসরি কথাবার্তা বলে অথবা অপ্রত্যক্ষভাবে জনমত গড়ে তোলার মাধ্যমে। সিদ্ধান্ত যেহেতু ঐকমত্যের ভিত্তিতে গৃহীত হয় সেহেতু নারী মুরুব্বীদের অপছন্দের কোন সিদ্ধান্ত পাশ করানো মুশকিল। যুদ্ধ পরিচালনার কোন সিদ্ধান্ত নারী মুরুব্বীদের অপছন্দের হলে তারা সৈনিকদের খাবার রসদ (ভুট্টা) দিতে অস্বীকৃতি জানাতে পারতেন।

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment