জৈবিক বিবর্তনবাদ এবং সামাজিক-সাংস্কৃতিক বিবর্তনবাদ

আজকের আলোচনার বিষয় জৈবিক বিবর্তনবাদ এবং সামাজিক-সাংস্কৃতিক বিবর্তনবাদ – যা পরিবারের উৎপত্তি এবং বিকাশ তত্ত্ব এর অর্ন্তভুক্ত, বিবর্তনবাদী তত্ত্ব মতে, একটি প্রজাতি অথবা একটি বিশিষ্ট জীবের জনসমষ্টি কাঠামোগতভাবে ক্রম পরিবর্তিত হয়। প্রতিবেশের সাথে আন্তঃক্রিয়ার মাধ্যমে এই কাঠামোগত পরিবর্তন ঘটে থাকে।

বংশ- পরম্পরা এবং প্রতিবেশ, কোনটার ভূমিকা কতখানি, এ নিয়ে বিবর্তনবাদে বিভিন্ন তাত্ত্বিক ধারা রয়েছে। এসত্ত্বেও, মোটের উপর বিবর্তনবাদ ধরে নেয় যে, বিবর্তনের সামগ্রিক ধারা হচ্ছে প্রতিবেশের সাথে জীবের অধিকতর উপযোগী হয়ে ওঠা। এবং বিবর্তনবাদীরা ধরে নেন, একটি নির্দিষ্ট প্রতিবেশের উপযোগী হয়ে ওঠার সাথে-সাথে প্রতিটি প্রজাতি অধিকতর জটিল, পৃথকীকৃত, এবং বিচিত্র হয়ে উঠে। চার্লস ডারউইনের নাম বিবর্তনবাদের সাথে ওতপ্রোতভাবে যুক্ত যদিও বিবর্তনবাদী চিন্তাভাবনা পাশ্চাত্য ঐতিহ্যে অনেক পুরানো। ডারউইনের বিবর্তনের ধারণা এবং স্পেনসারের বিবর্তনের ধারণা – এ দুটোর – ভিন্নতার প্রসঙ্গে আসা যাক।

 

জৈবিক বিবর্তনবাদ এবং সামাজিক-সাংস্কৃতিক বিবর্তনবাদ

 

জৈবিক বিবর্তনবাদ এবং সামাজিক-সাংস্কৃতিক বিবর্তনবাদ

প্রাকৃতিক বিজ্ঞানী হিসেবে ডারউইন বিবর্তনের জৈবিকতার প্রতি মনোনিবেশ করেছিলেন। ডারউইনের দৃষ্টিতে, বিবর্তনের মূলনীতি ছিলো প্রাকৃতিক নির্বাচন: বেশি উপযোগী প্রজাতির টিকে থাকা। প্রাকৃতিক নির্বাচনের প্রক্রিয়া আকস্মিক: বিচিত্রতার উদ্ভব ঘটে এলোমেলোভাবে। অর্থাৎ, নতুন প্রজাতি জন্ম লাভ করে, তার মধ্যে যে কোন একটি আরো উপযোগী হওয়ার কারণে টিকে যায়। এই প্রক্রিয়ার নির্দিষ্ট গতিপথ নেই।

ডারউইনের দ্য ওরিজিন অফ দ্য স্পিশিস (১৮৫৯) গ্রন্থটি প্রকাশিত হওয়ার পূর্বে বৃটিশ সামাজিক তাত্ত্বিক হারবার্ট স্পেনসার ( ১৮২০-১৯০৩) প্রস্তাব করেছিলেন যে, অজৈবিক, জৈবিক এবং অতি জৈবিক সকল ক্ষেত্রেই – বিবর্তন ঘটে থাকে। শুধু তাই নয়, বিবর্তনের মাধ্যমে সম্পূরক এবং সরল – – আকৃতি হয়ে ওঠে বহুরূপী, পৃথকীকৃত এবং জটিল। দ্য ওরিজিন অফ দ্য স্পিশিস প্রকাশিত হবার পর স্পেনসার ডারউইনের চিন্তাভাবনা গ্রহণ করে “যোগ্যতমের টিকে থাকা” – এই ধারণাটির জন্ম দেন । সামাজিক বিজ্ঞানে বিবর্তনবাদের ধারণার প্রসার ঘটে প্রধানত স্পেনসারের চিন্তাভাবনার মাধ্যমে। এবং ডারউইন যেহেতু বিবর্তনবাদ বিষয়ে সবচাইতে সুসংহত তত্ত্ব দাঁড় করান সে কারণে এই তাত্ত্বিক ধারা “সামাজিক ডারউইনিজম” নামে পরিচিত।

সামাজিক ডারউইনিজমের প্রধান দুটি পূর্বানুমান লক্ষ্যণীয়। প্রথমটি হলো, জীবের মতন সমাজও বিভিন্ন অংশ বা উপাদানে গঠিত। স্পেনসারের বক্তব্য হচ্ছে, জীবন্ত প্রাণীর মত সামাজিক গঠনও সরল, সমরূপ, অপৃথকীকৃত কাঠামো হতে আরো জটিল এবং অভ্যন্তরীণ ভাবে পৃথকীকৃত গঠন ধারণ করে। এই উপাদানগুলো যেমন বাড়ে, কমে, আবার তেমনি হয়ে ওঠে পৃথকীকৃত। সরলাকৃতির হোক কি জটিলাকৃতির, উপাদানগুলো কাজ করে সমন্বিতভাবে।

 

আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন
আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

সরল সমাজ ধীরে-ধীরে জটিল হয়ে ওঠে, এবং এটি একটি প্রক্রিয়া। সরল অবস্থায় সমাজের থাকে অল্প অঙ্গসংগঠন। এগুলো পৃথকীকৃত নয়। যেমন ধরুন, গৃহস্থালী। আদিম সমাজে, গৃহস্থালী সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক – বিভিন্ন ধরনের কাজ সম্পাদন করে থাকে। যারা একসাথে বসবাস করে, তারা তাদের আহারের চাহিদা পূরণ করে শিকার করে, কিংবা মাছ ধরে, অথবা ফল-মূল সংগ্রহ করে। এ ধরনের সমাজে ন্যূনতম একটি শ্রম বিভাজন কাজ করতে পারে: পুরুষরা পশু শিকার করে, নারীরা ফল-মূল সংগ্রহ করে। কিন্তু মূল বিষয় হচ্ছে, সামাজিক একক (জ্ঞাতিভিত্তিক গৃহস্থালী) আবার একই সথে অর্থনৈতিক এককও (সংগ্রহের মাধ্যমে খাদ্য উৎপাদন করে)।

সমাজ জটিল হয়ে পড়ার অর্থ হচ্ছে, এর অঙ্গসংঙ্গঠন বৃদ্ধি পায়, কাজও হয়ে উঠে আরো জটিল, বিবিধ। সভ্যতার বিকাশের সাথে নগর-অঞ্চল গড়ে উঠে। গৃহস্থালী পৃথকীকৃত হয়ে যায়: দেখা দেয় দুই ধরনের গৃহস্থালী: গ্রামের কৃষক গৃহস্থালী এবং নগরাঞ্চলের গৃহস্থালী। নগরাঞ্চলের গৃহস্থালী শস্য উৎপাদন করে না। এই গৃহস্থালীর সদস্যরা হয়ত করেন ব্যবসা-বাণিজ্য, কিংবা দেশের রাজনীতি পরিচালনা। তাদের খাদ্য চাহিদা পূরণ করে গ্রামের কৃষক গৃহস্থালী।

 

জৈবিক বিবর্তনবাদ এবং সামাজিক-সাংস্কৃতিক বিবর্তনবাদ

 

সামাজিক ডারউনিজমের দ্বিতীয় পূর্বানুমান প্রাকৃতিক নির্বাচনের মূলনীতিকে ঘিরে। যোগ্যতমের টিকে থাকার ধারণাকে স্পেনসার এবং তার অনুসারীরা প্রয়োগ করেন মনুষ্য সমাজের ক্ষেত্রে। গরিব, অসুস্থ এবং কম যোগ্য মানুষজন বিবেচিত হন “অযোগ্য” হিসেবে। এই দৃষ্টিতে ধরে নেয়া হয়, সমাজের স্বাভাবিক প্রগতির উদ্দেশ্যে, “অযোগ্য”দের বিলুপ্ত হতে দেয়া উচিত।

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment