বিয়ে হচ্ছে একটি ইতিহাস-নির্দিষ্ট সম্পর্ক

আজকের আলোচনার বিষয় বিয়ে হচ্ছে একটি ইতিহাস-নির্দিষ্ট সম্পর্ক – যা  বিয়ের ধারণা এবং সংজ্ঞা এর অর্ন্তভুক্ত, এই  নম্বর ইউনিটের ৩ নম্বর পাঠে আপনি পরিচিত হয়েছেন পারিবারিক সম্পর্ক হচ্ছে ইতিহাস-নির্দিষ্ট – এই তাত্ত্বিক প্রস্তাবনার আলোকে সংগঠিত সাম্প্রতিককালের কাজের ধারার সাথে।

আপনি এও জেনেছেন যে, ইদানিং কালে নৃবিজ্ঞানে ইতিহাস-নির্দিষ্ট কাজের উপর গুরুত্বারোপ করা হচ্ছে। পুনরাবৃত্তিমূলক হলেও বিষয়টি আবারও উল্লেখ করছি, বর্তমানের ইতিহাস-নির্দিষ্টতার ধারণা, ঊনবিংশ শতকের বিবর্তনবাদীদের ধারণা হতে ভিন্ন। তারা ধরে নিয়েছিলেন যে একটি রৈখিক বিশ্বব্যাপী ইতিহাস রচনা সম্ভব।

বিয়ে হচ্ছে একটি ইতিহাস-নির্দিষ্ট সম্পর্ক

 

বিয়ে হচ্ছে একটি ইতিহাস-নির্দিষ্ট সম্পর্ক

 

বিবর্তনবাদী চিন্তা যে বিশেষ সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছে সেগুলো আপনি ইতোমধ্যেই ৩ নম্বর ইউনিটের ২ নম্বর পাঠে জেনেছেন। হাল আমলের পারিবারিক সম্পর্ক প্রসঙ্গে যে ইতিহাস-নির্দিষ্ট গবেষণা কাজ হচ্ছে, তার একটি শক্তিশালী উদাহরণ আমরা পাই লিওনর ডেভিডফ এবং ক্যাথরিন হলের কাজে। এই দুই ইংরেজ নারীবাদীর লেখা ফ্যামিলি ফরচুনস্: মেন এ্যান্ড উইমেন অফ দি ইংলিশ মিডেল ক্লাস, ১৭৮০-১৮৫০ নামক গ্রন্থে।

বইটি বহু মহলে একটি দিক-নির্দেশনাকারী কাজ হিসেবে নন্দিত হয়েছে। যদিও তাঁরা দুইজন ইতিহাসবিদ, তাঁদের গবেষণা কাজ বহু নারীবাদী নৃবিজ্ঞানীদের উদ্বুদ্ধ করেছে (উদাহরণস্বরূপ, হিলারী স্ট্যান্ডিং, যার কাজ কেস স্টাডি আকারে আলোচিত হয়েছে ৩ নম্বর ইউনিটের ৩ নম্বর পাঠে)। খোদ নৃবিজ্ঞানে ইদানিং কালে ইতিহাসের প্রতি ঝুঁকে পড়ার প্রবণতা তৈরি হয়েছে। এই প্রেক্ষিতে তাঁদের কাজের প্রতি নৃবিজ্ঞানীদের আগ্রহের জন্ম হয়েছে।

 

আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন
আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

এই পাঠের বাকী অংশে রয়েছে দুটি কেস স্টাডি। কেস স্টাডি দুটি তৈরি করা হয়েছে ডেভিডফ এবং হলের ফ্যামিলি ফরচুনস্, এবং ক্যাথরিন হলের লিখিত হোওয়াইট, মেইল এ্যান্ড মিডেল ক্লাস। এক্সপে-ারেশানস্ ইন ফেমিনিজম এ্যান্ড হিস্টরি, এ দুটির ভিত্তিতে। প্রথম কেস স্টাডির প্রধান বিষয় হচ্ছে, ইংল্যান্ডের বুর্জোয়া শ্রেণীর লিঙ্গায়িত রূপ এবং কিভাবে ইভানজেলিকেল (Evangelical) ধর্মীয় মতবাদ এবং আন্দোলন বুর্জোয়া নারী-সত্তা গঠনে কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করে। দ্বিতীয় কেস স্টাডির বিষয় হচ্ছে পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় নারীর ‘গৃহিণী’ রূপে আবির্ভাব। ক্যাথরিন হল্ তাঁর বইয়ের একটি প্রবন্ধে গৃহিণীর ইতিহাস উদ্ঘাটন করেছেন এবং এই কেস স্টাডি তার উপর ভিত্তি করে রচিত হয়েছে।

ডেভিডফ এবং হলের একটি কেন্দ্রীয় তাত্ত্বিক প্রস্তাবনা হচ্ছে, শ্রেণীর গঠন লিঙ্গ-নিরপেক্ষ নয়। লিঙ্গ হচ্ছে সামাজিক সংগঠনের একটি মূলনীতি। এই মূলনীতির ভিত্তি হচ্ছে যৌন পার্থক্য (sexual difference), এবং এটি সামাজিকভাবে সংগঠিত। অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজ, মতাদর্শ যৌন পার্থক্যকে নির্মাণ করে; একে প্রতিষ্ঠিত করে। এ মূলনীতি সামাজিক এবং ঐতিহাসিক, এটি ঈশ্বর বা প্রকৃতি প্রদত্ত নয়।

ডেভিডফ এবং হল্ বলেন, পুঁজিবাদী ব্যবস্থার উৎপত্তি এবং সম্প্রসারণের প্রক্রিয়া ইংল্যান্ডের পূর্বতন (সামন্ততান্ত্রিক) লিঙ্গীয় পার্থক্যকে পুনর্গঠিত করে। শিল্প বিকাশের প্রক্রিয়ায় লিঙ্গীয় ভিন্নতার নতুন অর্থ তৈরি হয়: নারীত্বের অর্থ নির্মিত হয় “গৃহী” এবং “নির্ভরশীল” হিসেবে; কল-কারখানার মালিক হিসেবে পুরুষ নির্মিত হন “কর্তা”, এবং নির্ভরশীল নারীর (ও তাদের সন্তানদের) ‘রক্ষক’ ও ‘প্রতিপালক’ হিসেবে।

 

বিয়ে হচ্ছে একটি ইতিহাস-নির্দিষ্ট সম্পর্ক

 

নারী এবং পুরুষের সামাজিক ভূমিকার পুনঃসংজ্ঞায়ন ইংরেজ সমাজে বিয়ের অর্থ ও গুরুত্বকে পাল্টে দেয়। একই সাথে বিয়ের অর্থ, নারীত্ব ও পুরুষত্বের ধারণাকে মৌলিকভাবে বদলে দেয়। এই পরিবর্তনগুলো প্রথমে বুর্জোয়া শ্রেণীতে ঘটে; পরবর্তী পর্যায়ে, বুর্জোয়া শ্রেণীর শক্তিমত্তা বৃদ্ধির সাথে সাথে, বুর্জোয়া পারিবারিক মতাদর্শ এবং অনুশীলন সমগ্র সমাজে বিস্তৃত হয়ে পড়ে। বুর্জোয়া পারিবারিক জীবন সমাজের মানদন্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। 

 

বিয়ে হচ্ছে একটি ইতিহাস-নির্দিষ্ট সম্পর্ক

 

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment