ইয়াপ্ সমাজে জ্ঞাতিত্ব

আজকের আলোচনার বিষয় ইয়াপ্ সমাজে জ্ঞাতিত্ব – যা  সাম্প্রতিককালের জ্ঞাতিত্ব অধ্যয়ন এর অর্ন্তভুক্ত, মার্কিন নৃবিজ্ঞানী ডেভিড শ্লাইডার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্ট ক্যারোলায়না দ্বীপে ইয়াপ্ নামক আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মধ্যে কাজ করেছেন। ইয়াপ্রা কেবলমাত্র আচার-অনুষ্ঠান পালনের সময় জ্ঞাতি সম্বোধন ব্যবহার করেন। এ বাদে, বাকী সময়ে তারা একে অপরকে নাম ধরে ডাকেন, এমন কি বাবা, মাকেও। কিন্তু একজন ইয়াপ্-এর কাছে যদি জানতে চাওয়া হয় যে নারী তাকে গর্ভে ধারণ করেছে, অথবা যে পুরুষ তার জনক, তাদের কি নামে সে সম্বোধন করে, তখন সেই ইয়াপট্ি উত্তর দেবেন, সিটিনিঙ্গেন এবং সিটামাঙ্গেন।

তিনি আরও বলবেন যে, যারা ওর সিটিনিঙ্গেন এবং সিটামাঙ্গেন ও নিজে তাদের ফাক। শুধুমাত্র তার বাবা নয়, তার বাবার ভাইয়েরা এবং তাদের চাচাত ভাইয়েরাও তার সিটামাঙ্গেন। সিটিনিঙ্গেন-এর ক্ষেত্রেও তাই। শ্লাইডার বলেন, এ ধরনের রীতি বহু সমাজে প্রচলিত, ইয়াদের ক্ষেত্রে একটি বিশেষ জিনিস দেখা যায়। পদ দুটি কেবলমাত্র যারা জীবিত তাদের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয় এবং একজনের শুধুমাত্র একজন সিটিনিঙ্গেন এবং সিটামাঙ্গেন থাকতে পারে, তার বেশি নয়। পিতা বেঁচে থাকলে শুধু তিনি হন সিটামাঙ্গেন, তার মৃত্যুর পর তার ভাই অথবা চাচাত ভাইদের থেকে একজন হন সেই মানুষটির সিটামাঙ্গেন। মায়ের বেলাতেও একই নিয়ম কাজ করে।

 

ইয়াপ্ সমাজে জ্ঞাতিত্ব

 

ইয়াপ্ সমাজে জ্ঞাতিত্ব

ইয়াদের কাছে সিটামাঙ্গেন এবং ফাক বোঝায় নির্ভরশীলতা এবং কর্তৃত্বের সম্পর্ক। বাল্যকালে ফাকদের লালন পালন করার দায়িত্ব সিটিনিঙ্গেন-এর; ফাক যখন বড় হয় তার দায়িত্ব হচ্ছে সিটামাঙ্গেন-এর দেখাশোনা করা। সাধারণত, একজন নারীর স্বামী হচ্ছে তার সন্তানের সিটামাঙ্গেন, এবং সন্তানেরা হচ্ছে তার ফাক।

নারীর স্বামীটি যখন বুড়ো এবং অথর্ব হয়ে যান, তখন তার ফাক হয়ে যায় তার সিটামাঙ্গেন। এই সিটামাঙ্গেন-ফাক সম্পর্ক অন্যদের মধ্যেও গড়ে উঠতে পারে। যদি নারীর স্বামীর দেখাশোনা তার পুত্র না করে তাহলে সেই দায়িত্ব অন্য কোন পুরুষের পক্ষে পালন করা সম্ভব। তিনি তখন হয়ে যান বুড়োটির ফাক। এমন যদি ঘটে, তাহলে নারীর পুত্র সন্তান তাদের বাড়ি/ঘর/ভূমি/সংসারে (tabinau) তার অধিকার হারায়। অধিকার পান তিনি যিনি বৃদ্ধের দেখাশোনা করেন, অবশ্য তার মৃত্যুর পরে ।

 

আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন
আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

স্লাইডার বলেন, সিটিনিঙ্গেন এবং সিটামাঙ্গেন স্পষ্টতই কোন দশাকে (state) বোঝায় না। বরং, এগুলো ভূমিকা পালনের স্মারক। স্বাভাবিক অবস্থায়, একজন বিবাহিত নারী তার গর্ভজাত সন্তানের সিটিনিঙ্গেন। কিন্তু যদি তার বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে তাহলে তিনি চলে যান তার নিজের, সিটিনিঙ্গেন এবং সিটামাঙ্গেন-এর কাছে এবং তাকে আর তার সন্তানের সিটিনিঙ্গেন হিসেবে দেখা হয় না। সন্তানদের বাবা যদি আবার বিয়ে করেন তাহলে তার নতুন স্ত্রী হন সন্তানদের সিটিনিঙ্গেন।

যদি তিনি বিয়ে না করেন তাহলে স্বামীর বোন হন ভাইয়ের সন্তানদের সিটিনিঙ্গেন। শ্লাইডারের বক্তব্যের সারমর্ম হচ্ছে যে, সিটামাঙ্গেন-ফাক, সিটিনিঙ্গেন-ফাক সম্পর্কে দশার চাইতে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ক্রিয়াকর্ম। এই সম্পর্ক গঠনের ভিত্তি হচ্ছে একজন ফাক তার সিটামাঙ্গেনএর জন্য কি করে এবং একজন সিটামাঙ্গেন তার ফাক-এর জন্য কি করে, সেটা।

 

ইয়াপ্ সমাজে জ্ঞাতিত্ব

 

ইয়াপ্ ধারণাকে শ্লাইডার পাশ্চাত্য ধারণার সাথে তুলনা করে বলেন, পাশ্চাত্য ধারণায় জ্ঞাতিত্ব এবং বংশ বলতে বোঝায় কিছু অন্তর্নিহিত গুণাবলী। এবং এই অর্থে ইয়াপ্ ধারণা পাশ্চাত্য ধারণার বিপরীত কারণ ইয়াপ্রা গুরুত্ব দেন ক্রিয়ার উপর, দশার উপর না। তিনি আরও বলেন, কুলুজি বা বংশবৃত্তান্ত পদ্ধতি অনুসরণ করে নৃবিজ্ঞানীরা পাশ্চাত্যীয় ধারণা অন্য সকল মানুষের উপর আরোপন করেছেন। তাঁরা ধরে নিয়েছেন যে, জ্ঞাতিত্বের মূলে রয়েছে প্রজনন প্রক্রিয়া, যা কিনা রক্তসূত্রীয় বন্ধনের সূত্রপাত ঘটায় এবং এটি সমভাবে বিশ্বের সকল সমাজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment