আদিম সমাজের পরিচয়

মানব বিবর্তনের ইতিহাসে আদিম সমাজ একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এর মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারি, কিভাবে প্রাথমিক মানুষ সামাজিক জীবন গড়ে তুলতে শুরু করেছিল এবং তাদের জীবনযাত্রার ধরণ, চিন্তাধারা ও সংস্কৃতি কী রকম ছিল। আদিম সমাজের অধ্যয়নে আমরা তাদের বস্তুগত সংস্কৃতি, শিকার ও সংগ্রহ জীবন, সামাজিক সম্পর্ক ও আদর্শসমূহের পরিচয় পাই, যা মানব সমাজের প্রাথমিক ভিত্তি হিসেবে বিবেচিত।

আদিম সমাজের পরিচয়

 

আদিম সমাজের পরিচয়

 

আদিম সমাজের সামাজিক বিকাশ

এ পর্যন্ত আমরা মানুষের শারীরিক ও জৈবিক বিকাশ নিয়ে আলোচনা করেছি। এবার আমরা তাদের সামাজিক বিকাশের দিকে নজর দিব। আদিম সমাজ ছিল শিকারী ও সংগ্রাহক সমাজ, যেখানে মানুষের জীবনযাত্রা ছিল মৌলিক প্রয়োজন পূরণে নির্ভর। হাজার হাজার বছর ধরে তারা কীভাবে পারস্পরিক সহযোগিতায় সামাজিক বন্ধন গড়ে তুলেছিল, তারই নিদর্শন আজও পাওয়া যায়।

 

আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন
আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

বস্তুগত সংস্কৃতি (Material Culture)

আদিম সমাজের বস্তুগত সংস্কৃতি ছিল তাদের জীবনযাত্রার অন্যতম প্রধান স্তম্ভ। এটি হলো সেইসব বস্তু, যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তি যেগুলো তাদের দৈনন্দিন জীবন চালাতে সাহায্য করত। বিশেষ করে পুরাপাথরের যুগের শেষদিকে আদিম মানুষের বস্তুগত সংস্কৃতি যথেষ্ট উন্নত হয়।

তারা তৈরি করেছিল চামড়ার তাঁবু, পাথরের কুঠার, সেলাই করা চামড়ার পোশাক, চামড়ার ঝুলি ও পাত্র, হাড়ের সুঁই, পাথরের প্রদীপ, ডোঙ্গা নৌকা, বড়শি, বর্শা ও হার্পুন। এসব বস্তু ছিল তাদের শিকার ও সংগ্রহের অন্যতম প্রধান উপকরণ।

তারা বিভিন্ন পদার্থকে জোড়া দিয়ে নির্দিষ্ট আকৃতির জিনিস তৈরি করত, যা আধুনিক প্রযুক্তির প্রাথমিক রূপ হিসেবেও বিবেচিত।

প্রাযুক্তিক উদ্ভাবন

পুরাপাথরের যুগের শেষ দিকে তারা তীর-ধনুক আবিষ্কার করে, যা শিকারকে সহজ ও কার্যকর করে তোলে। তীর-ধনুক তৈরিতে তারা কাঠের টুকরোগুলো জোড়া দিয়ে ব্যবহার করত। এছাড়া, তারা ড্রিল বা ছেদনযন্ত্রও আবিষ্কার করেছিল, যা পাথর ও কাঠ ফুটোর কাজে লাগত।

এস্কিমোরা আজও হার্পুন দিয়ে সীল-মাছ শিকার করে, যা পুরাপাথরের যুগের প্রযুক্তির ধারাবাহিকতা প্রকাশ করে। তারা হার্পুন তৈরিতে বহু অংশকে জোড়া দিয়ে ব্যবহার করত, যা অত্যন্ত নিখুঁত কারিগরি দক্ষতার পরিচায়ক।

আদিম মানুষের জীবন ও পরিবেশ

মেরু অঞ্চলের বরফে আবৃত এলাকাতেও পুরাপাথরের যুগের শিকারীরা বসবাস করত। এ অঞ্চলগুলোর কঠিন পরিবেশেও তারা সৃষ্টিশীলতা ও প্রয়োজনমতো প্রযুক্তি উদ্ভাবনের মাধ্যমে জীবনযাপন চালিয়ে গিয়েছিল।

 

আদিম সমাজের পরিচয়

 

আদিম সমাজের মানুষের জীবন, তাদের সামাজিক সম্পর্ক, বস্তুগত সংস্কৃতি ও কারিগরি উদ্ভাবন মানব সভ্যতার প্রাথমিক ভিত্তি স্থাপন করেছে। তাদের জীবনযাত্রার প্রেরণা ও পদ্ধতি থেকে আধুনিক সমাজের অনেক গুরুত্বপূর্ণ পাঠ গ্রহণ করা যায়। এই আদিম সমাজের ইতিহাস আমাদের শিখায় কিভাবে মানুষ তার পরিবেশের সঙ্গে অভিযোজন ঘটিয়ে বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় সবকিছু অর্জন করেছে।

Leave a Comment