আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় মিশরের অর্থনৈতিক জীবনধারা
মিশরের অর্থনৈতিক জীবনধারা
মিশরের অর্থনৈতিক জীবনধারা
মিশরের অর্থনৈতিক জীবনের মূল ভিত্তি ছিল কৃষি। মিশরীয় কৃষি যথেষ্ট উন্নত ছিল। নীলনদকে বাঁধ দিয়ে বিস্তীর্ণ জমিতে চাষ করে গম, যব, যোয়ার, তরিতরকারি, শন, তুলা, আঙুর ও অন্যান্য নানা প্রকার ফল উৎপন্ন করা হত। প্রাচীন রাজত্বের প্রথম দিক থেকে মিশরে বিভিন্ন শিল্পের বিকাশ ঘটতে থাকে। খনিশিল্প, ধাতুশিল্প, জাহাজ নির্মাণ, মাটির পাত্র, সূতিবস্ত্র, কাঁচশিল্প, চামড়াশিল্প, আসবাবশিল্প প্রভৃতিতে মিশর খ্যাতি অর্জন করে।
সুন্দর সুন্দর বর্ণোজ্জ্বল কাঁচের সামগ্রী, সূক্ষ্ম কারুকার্যশোভিত পাথরের বাটি ও অনুপম কারুকার্যবিশিষ্ট অলঙ্কার শিল্প উন্নত মানের শিল্পজ্ঞানের পরিচয় বহন করে। পণ্য উৎপাদনের জন্যে ক্রমশ কারখানার প্রচলন হয়। এক একটা কারখানায় কুড়ি পঁচিশ জন বা তারও বেশি লোক নিয়োজিত হত।
প্রাচীন রাজবংশের রাজত্বকালে মিশর ব্যবসা বাণিজ্যে প্রভূত উন্নতি অর্জন করে, ফারাওদের জাহাজগুলো নীলনদ বেয়ে আরও দক্ষিণে আফ্রিকার মূল ভূখণ্ডের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে মেহগনি কাঠ ও হাতির দাঁত সংগ্রহ করে আনত। ভূমধ্যসাগরে চলাচলের উপযোগী মালবাহী জাহাজ মিশরীয়রাই প্রথম তৈরি করেছিল। মিশরীয় সাম্রাজ্যের বাণিজ্য মোটামুটি চারটি পথে পরিচালিত হত :

(১) বাণিজ্য জাহাজ চলাচলের সুবিধার জন্যে মিশরীয় বদ্বীপের পূর্বাঞ্চলের সাথে লোহিত সাগরের সংযোগ সাধন করে একটি খাল কাটা হয়েছিল। এটি ছিল পূর্বাঞ্চলীয় বাণিজ্যপথ;
(২) দক্ষিণের অঞ্চলের সাথে বাণিজ্য চলত নীলনদ দিয়ে;
(৩) স্থলপথে বাণিজ্য যোগযোগ ছিল মেসোপটেমিয়া ও দক্ষিণ সিরিয়ার সাথে;
(৪) জাহাজ পথে মাল আনা-নেয়া করা হত সিরিয়ার উত্তরাঞ্চল, গ্রীসের মূল ভূখণ্ড, ত্রুটি ও ভূমধ্যসাগরের অন্যান্য দ্বীপগুলো থেকে।
মিশরের প্রধান রপ্তানি দ্রব্য ছিল গম, লিনেন ও স্বর্ণালঙ্কার এবং প্রধান আমদানিদ্রব্য ছিল উটপাখির পালক, ধাতুনির্মিত অস্ত্রশস্ত্র, মসলা, সূক্ষ্ম কারুকার্যময় কাঁচদ্রব্যের ব্যাপক প্রচলন ছিল গ্রীসে।
মিশরীয় ধর্ম ও শিল্পের মূল দিকগুলোর সাথে ঈজিয়ান দ্বীপের জনগণের পরিচয় ঘটেছিল বাণিজ্যের মাধ্যমে, যা পরবর্তীকালে গ্রীকদের ওপরও প্রভাব বিস্তার করেছিল। একই ভাবে মিশরীয় সভ্যতাও পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর সভ্যতার দ্বারা বিপুলভাবে প্রভাবিত হয়েছিল।
আরও দেখুন :