আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় সুমেরীয় সংস্কৃতি
সুমেরীয় সংস্কৃতি
সুমেরীয় সংস্কৃতি
আসিরীয় শক্তি দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। আসিরীয় সম্রাটরা বিশাল সাম্রাজ্যের বিভিন্ন অংশের মধ্যে রাষ্ট্রীয় ঐক্যবোধ প্রতিষ্ঠা করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। নির্মম স্বৈরাচারী আসিরীয় শাসনের অধীনে পদানত জাতিসমূহ বিদ্রোহোন্মুখ হয়ে থাকে এবং ব্যবিলনবাসী ক্যালডীয়রা (ইরান মালভূমির মেডেসদের সাথে মিলিত হয়ে) ৬১২ খ্রিস্টপূর্বাব্দে আসিরীয় রাজশক্তিকে চূর্ণ করে।
ক্যালডীয়া স্থানটি ছিল মেসোপটেমিয়ার দক্ষিণ প্রান্তে, টাইগ্রিস ও ইউফ্রেটিস নদীর মোহনার কাছে। এখানে প্রাচীনকালে সম্ভবত আরব থেকে আগত একটি সেমিটিকভাষী দল বাস স্থাপন করেছিল। এরাই পরবর্তীকালে ‘ক্যালডীয়’ নামে প্রসিদ্ধি অর্জন করেছিল।
আসিরীয়দের বিরুদ্ধে বিদ্রোহে ক্যালডীয়দের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন ‘নোরোপোলাসর’। তাঁর পুত্র নেবুচাদনেজার-এর রাজত্বকালে (৬০৪-৫৬১ খ্রিঃ পূঃ ক্যালডীয় সাম্রাজ্য এক নতুন বিশ্বশক্তিতে পরিণত হয়।
ক্যালডীয় রাজশক্তির বিকাশ মেসোপটেমীয় সভ্যতার চতুর্থ ও শেষ পর্যায়ের সূচনা করল। এ পর্যায়কে প্রায়শ ‘নব-ব্যবিলনীয়’ নামে অভিহিত করা হয়ে থাকে। কারণ ক্যালডীয়রা পুনরায় ব্যবিলনে রাজধানী স্থাপন করেছিল এবং হাম্মুরাবির আমলের সংস্কৃতিকে পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টা করেছিল।
নেবুচাদনেজার আসিরীয় সাম্রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ প্রায় সকল অংশই অধিকার করেন। এমনকি আসিরীয়রা যাকে পদানত করতে পারেনি, সেই ‘জুদা’ রাজ্য পর্যন্ত তিনি করায়ত্ত করেন এবং সে দেশ থেকে কয়েক সহস্র লোককে দাস হিসেবে ব্যাবিলনে নিয়ে যান। কিন্তু এ সাম্রাজ্যও স্থায়ী হয়নি। এক শতাব্দীরও কম সময়ের মধ্যে, ৫৩৯ খ্রিস্টপূর্বাব্দে, এ সাম্রাজ্যের পতন ঘটে।

পারস্যদেশীয় রাজা কাইরাস-এর হাতে এর পতন ঘটে একরূপ বিনাযুদ্ধে— কারণ, পুরোহিতশ্রেণী এবং অভিজাত ও প্রভাবশালী শ্রেণীসমূহ ও ইহুদিগণ পারসিকদের সহায় হয়েছিল। নেবুচাদনেজারের চল্লিশ বছরের রাজত্বকালে ব্যবিলন জাঁকজমক ও বৈভবে নিনেভের স্থান অধিকার করেছিল।
প্রবাদ অনুসারে, নেবুচাদনেজার তাঁর মেডেস দেশীয় রানীর মনোরঞ্জনার্থে প্রাসদের ছাদে এবং নগরপ্রাচীরের ওপরে যে উদ্যান নির্মাণ করেছিলেন, আজও তা ‘ব্যবিলনের শূন্যোদ্যান’ নামে প্রাচীনকালের সপ্তমাশ্চর্যের অন্যতমরূপে পৃথিবীতে বিখ্যাত হয়ে আছে। পারস্য রাষ্ট্র অবশ্য সমস্ত মেসোপটেমীয় সাম্রাজ্যকে নিজ রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করে নিয়েছিল।
কিন্তু এ ছাড়াও অন্যান্য অনেক অঞ্চলও পারস্য সাম্রাজ্যের অন্তর্গত ছিল। তদুপরি পারস্য সাম্রাজ্য ছিল এক সম্পূর্ণ ভিন্ন সংস্কৃতির বাহন। ক্যালডীয় সাম্রাজ্যের পতনকেই তাই মেসোপটেমীয় সভ্যতার ও মেসোপটেমিয়ার রাজনৈতিক ইতিহাসের সমাপ্তিরূপে গণ্য করা চলে।
আরও দেখুন :