সুমেরীয় আইন

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় সুমেরীয় আইন। সুমেরীয় সভ্যতা মেসোপটেমিয়ার দক্ষিণাংশের একটি প্রাচীন সভ্যতা। এর অবস্থান ছিল আধুনিক রাষ্ট্র ইরাক এর দক্ষিণ-পশ্চিমাংশে। সুমেরীয় সভ্যতার অস্তিত্ব ছিল খ্রিষ্টপূর্ব ৪৫০০ হতে খ্রিষ্টপূর্ব ১৯০০-এর মধ্যে। ব্যাবিলন সভ্যতার উত্থানের সাথে সাথে সুমেরীয় সভ্যতার পতন ঘটে। সুমেরীয় সভ্যতাকে পৃথিবীর প্রথম সংগঠিত সভ্যতা হিসাবে গণ্য করা হয়।

সুমেরীয় আইন

 

সুমেরীয় আইন

 

বর্তমানে ইরাকের টাইগ্রিস ও ইউফ্রেটিস (তৎকালীন দজলা ও ফোরাত) নদীর মধ্যবর্তী উর্বর স্থানে সুমেরীয় সভ্যতার গোড়াপত্তন ঘটে। পশ্চিম এশিয়ার নবোপলয়ী পর্যায় থেকে উত্তরণ ঘটিয়ে মেসোপটেমিয়া অঞ্চলে প্রথম যে সভ্যতা গড়ে উঠে তাই সুমেরীয় সভ্যতা।

দক্ষিণ মেসোপটেমিয়ার আদি অ-সেমেটিকবাসীরা সাধারণভাবে সুমেরিয়ান নামে পরিচিত।

 

সুমেরীয় আইন:

আমরা সচারাচর যাকে এক কথায় ‘মেসোপটেমীয় সংস্কৃতি’ বলে থাকি, তা আসলে প্রধানত চারচি বিভিন্ন সভ্যতার অবদান নিয়ে গড়ে উঠেছে। আমরা আগেই আলোচনা করেছি যে এ চারটি সভ্যতা হলঃ ‘সুমেরীয়’, ‘ব্যবিলনীয়’, ‘আসিরীয়’ এবং ‘ক্যালডীয়’। অনেক সময় ব্যাবিলনীয় সভ্যতাকে ‘আদি ব্যাবিলনীয়’ এবং ক্যালডীয় সভ্যতাকে ‘নব-ব্যাবিলনীয় সভ্যতা’ বলা হয়ে থাকে।

(১) অপরাধীকে প্রতিটি অপরাধের জন্য তদ্রুপ শাস্তির বিধান দেয়া হত, যথা— চোখের পরিবর্তে চোখ, দাঁতের পরিবর্তে দাঁত বা প্রতিটি অঙ্গের জন্যে সেই অঙ্গ ছেদন।

(২) বেসরকারি ও রাষ্ট্রীয় উভয় উদ্যোগে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি বা তার পরিবারকে উদ্যোগী হয়ে অপরাধীকে আদালতে হাজির করতে হত। আদালত বাদী-বিবাদীর মধ্যে সংযোগকারী হিসেবে কাজ করত, রাষ্ট্রের প্রতিনিধি হিসেবে শুধুমাত্র ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্যে নয়।

 

আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন
আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

(৩) সামাজিক মর্যাদা হিসেবে বিচার করা। সুমেরীয় আইনে সমাজের জনগণ তিন শ্রেণীতে বিভক্ত ছিল –

(ক) অভিজাত,

(খ) সাধারণ বা ব্যবসায়ী শ্রেণী এবং

(গ) ভুমিদাস ও ক্রীতদাস।

অপরাধীর শাস্তি বিধান হত তার সামাজিক মর্যাদা হিসেবে। কখনো কখনো অপরাধের গুরুত্ব বিবেচনা করে। একজন সাধারণ নাগরিক বা ভূমিদাস অথবা ক্রীতদাসের স্থলে কোনো অভিজাতকে হত্যা বা পঙ্গু করা হলে অধিকতর গুরুতর শাস্তি দেয়া হত। অনুরূপভাবে একজন অভিজাত যদি অপরাধী হতেন তাহলে একজন সাধারণ বা ভূমিদাস অপেক্ষা তাকে গুরুতর শাস্তি প্রদান করা হত।

এর কারণ সম্ভবত এই যে, সামরিক বাহিনীতে একমাত্র অভিজাতরাই প্রবেশাধিকার লাভ করতেন এবং সুমেরীয় সামরিক বাহিনী কঠোরভাবে তার আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখত।

 

সুমেরীয় আইন

 

(৫) ইচ্ছাকৃত অপরাধ ও আকস্মিক ক্রোধজনিত কারণে সংঘটিত অপরাধের মধ্যেকার পার্থক্য ছিল সামান্যই। উভয়ক্ষেত্রেই অপরাধীকে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে হত।

 

আরও দেখুন :

Leave a Comment