রোমের গৃহযুদ্ধ পম্পি ও সীজার

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় রোমের গৃহযুদ্ধ পম্পি ও সীজার

রোমের গৃহযুদ্ধ পম্পি ও সীজার

 

রোমের গৃহযুদ্ধ পম্পি ও সীজার

 

রোমের গৃহযুদ্ধ পম্পি ও সীজার

স্পার্টাকাসের দাসবিদ্রোহ যখন নির্মম হাতে দমন করা হচ্ছিল, ঠিক সে সময়েই প্রস্তুতি চলছিল রোমের গৃহযুদ্ধের দ্বিতীয় পর্বের। এ গৃহযুদ্ধের নায়ক ছিলেন পম্পি ও সীজার— রোমের দু’জন দিগ্বিজয়ী সামরিক অধিনায়ক। পম্পি ছিলেন সুলার বন্ধু এবং মারিয়াস ও সুলার মধ্যে অনুষ্ঠিত গৃহযুদ্ধে সুলার পক্ষ নিয়ে লড়াই করেন। স্পার্টাকস-এর নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত দাসবিদ্রোহ দমনের কাজেও পম্পিকে পাঠানো হয় ক্রেসাস-এর বাহিনীকে সাহায্য করার জন্য।

বিলম্বে পৌঁছালেও পম্পি নিহত স্পার্টাকাসের অবশিষ্ট সৈন্যদলকে নির্মমভাবে ধ্বংস করেন। ভূমধ্যসাগরে জলদস্যুদের দমন করার কাজেও তিনি বিশেষ সুনাম অর্জন করেন। পম্পির উপর এর পর দেয়া হয় পূর্ব দিকে মিথ্রিডেটিসকে পুনরায় দমন করার ভার। অল্প সময়ের মধ্যে পম্পি মিথ্রিডেটিস-এর বাহিনীকে পরাজিত করেন। মিথ্রিডেটিস ক্রিমিয়ায় পালিয়ে যান এবং সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়।

পম্পি এবার এশিয়া মাইনর ও সিরিয়া জয় করেন এবং ইউফ্রেটিস নদীর তীর পর্যন্ত রোমান সাম্রাজ্যের সীমা বিস্তৃত করেন। পম্পি যখন পূর্ব দিকে তাঁর সামরিক অভিযানে ব্যাপৃত ছিলেন, ঠিক তখনই আরেকজন সামরিক অধিনায়ক জুলিয়াস সীজার পশ্চিমে একের পর এক রাজ্য রোমান সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করে যাচ্ছিলেন। রোমের এই ব্যাপক সামরিক অভিযানের কালেই আরেকটি নাটকের মহড়া চলছিল রোম শহরের অভ্যন্তরে।

এ নাটকের নায়ক ক্যাটিলাইন একজন অভিজাত বংশোদ্ভূত, যিনি তিন তিনবার কন্সাল পদে মনোনয়নলাভে ব্যর্থ হয়ে এক গভীর ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করেন। রোমের ম্যাজিস্ট্রেট ও ধনী ব্যক্তিদের হত্যা করে তিনি সমগ্র রোম প্রজাতন্ত্রকে ধ্বংস করার পরিকল্পনা করেন। তাঁর এই ষড়যন্ত্রের কথা জানতে পেরে বিখ্যাত রোমান বক্তা সিসেরো তা সিনেটের অধিবেশন চলাকালে ফাঁস করে দেন।

ক্যাটিলাইন ইতোমধ্যেই পলায়ন করে ইব্রুরিয়া নামক স্থানে তাঁর ক্ষুদ্র সৈন্যদল সমবেত করেন। এর বিরুদ্ধে সিনেট এন্টোনিনাস-এর অধীনে এক বিরাট দল প্রেরণ করে। যুদ্ধে ক্যাটিলাইন ও তাঁর তিন হাজার সহচর পরাজিত ও নিহত হন । ক্যাটিলাইনের ষড়যন্ত্র নির্মূল করার পরে রোমের রাজনৈতিক ক্ষমতা তিনজন সামরিক অধিনায়কের হাতে তুলে দেয়া হয়। এঁরা হলেন পশি, ক্রেসাস ও জুলিয়াস সীজার।

খ্রিস্টপূর্ব ৬০ শতাব্দীতে এঁরা প্রথম ট্রায়ামভায়রেট (First Triumvirate) বা ‘ত্রয়ী শাসক’ গঠন করেন। সমগ্র রোমান সাম্রাজ্য তিনজন অধিনায়ক নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নেন। রোমের দাস-মালিকগণ নিজেদের নিরাপত্তার জন্য কোনো সিনেট বা গণতান্ত্রিক সংস্থা অপেক্ষা সামরিক নেতাদের শাসনব্যবস্থাই সর্বোৎকৃষ্ট বলে মনে করে। পম্পিকে দেয়া হয় রোমের শাসনভার এবং সিনেটের উপর খবরদারীর নেতৃত্ব।

 

আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন
আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

ক্রেসাসকে দেয়া হল পূর্বাঞ্চলের ক্ষমতা এবং গেইয়াস জুলিয়াস সীজার পাঁচ বছরের জন্য রোমান সাম্রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চলের শাসনকর্তা নিযুক্ত হলেন। পশ্চিমের গল (বর্তমান ফ্রান্স) রাজ্য দখল করার উদ্দেশ্যে সীজার তাঁর বিপুল সৈন্যবাহিনী নিয়ে অগ্রসর হলেন। একাদিক্রমে সাত বছর সামরিক অভিযান চালানোর পর গল রাজ্য দখল করা হল।

তাঁর শাসনকাল আরও পাঁচ বছর বাড়ানো হল। খ্রিস্টপূর্ব ৫৫ অব্দে সীজার রাইন নদী অতিক্রম করে বর্বর জার্মান জাতির বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হন এবং এর পর বছরই ব্রিটেনে পদার্পণ করেন। ব্রিটেনে কয়েকটি জাতিকে পরাজিত করতে সক্ষম হলেও রোমান শাসন ব্রিটেনে দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে নি। ইতিমধ্যে গলে আবার বিদ্রোহ দেখা দেয়। কিন্তু সীজার অসামান্য সামরিক কুশলতার সাথে এ বিদ্রোহ দমন করেন। গল বিজয়ের ফলে প্রচুর ধনরত্ন ও প্রায় দশ লক্ষ ক্রীতদাস সীজার লাভ করেন।

এ সকল কাজ তাঁর জনপ্রিয়তা বহুলাংশে বৃদ্ধি করে। সীজারের গল বিজয়ের সমাপ্তির প্রায় সঙ্গে সঙ্গে প্রথম ট্রায়ামভায়রেট-এরও সমাপ্তি ঘটে। ক্রেসাস পার্থিয়াতে মারা যান। বাকি রইলেন পম্পি ও সীজার। ক্ষমতা ও প্রতিপত্তিতে কেউ কারও কম নন, কাজেই দু’জনের প্রত্যেকেই চাইলেন অপরজনকে ক্ষমতাচ্যুত করে রোমে সর্বময় ক্ষমতা নিজ করায়ত্ত করতে।

দুজনের মধ্যে বন্ধুত্বের শেষ চিহ্নটুকুও অবলুপ্ত হ’ল যখন সীজারের কন্যা ও পম্পির স্ত্রী জুলিয়া সন্তানের জন্মদানকালে মারা যান। পম্পি ও সীজার পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বীরূপে আবির্ভূত হলেন এবং রোম আরেকবার গৃহযুদ্ধের সম্মুখীন হল। জুলিয়াস সীজার তাঁর বিপুল সৈন্যবাহিনী নিয়ে রোমের দিকে অগ্রসর হন এবং সিনেটের নিষেধ সত্ত্বেও রুবিকন (সীজার ও পম্পির রাজ্যের সীমারেখা) অতিক্রম করে রোমের দ্বারপ্রান্তে এসে উপস্থিত হলেন।

সীজারের আগমনের সংবাদ পেয়ে পম্পি কয়েকজন সিনেটরকে সাথে নিয়ে গ্রীসে পালিয়ে যান। সীজার তক্ষুণি পম্পিকে অনুসরণ না করে রোমে তাঁর ক্ষমতা সংগঠিত করার চেষ্টায় লিপ্ত হন। পম্পির অনুগত সৈন্যদল সীজারকে বাধাদানের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। রোমবাসীরা আরেকবার গৃহযুদ্ধের ভয়ে ভীত হয়ে পড়ে। কিন্তু সীজার প্রতিহিংসাপরায়ণ না হয়ে সকলকে তাঁর পক্ষে যোগদানের আহ্বান জানান। এর ফলে রোমের বিপুল জনতা তাঁর পক্ষাবলম্বন করে।

 

রোমের গৃহযুদ্ধ পম্পি ও সীজার

 

যুদ্ধক্ষেত্রে তিনি পম্পির দেখা পান। যুদ্ধে পম্পি পরাজিত হয়ে মিশর অভিমুখে পলায়ন করেন। কিন্তু পথিমধ্যে তিনি এক গুপ্তঘাতকের হাতে নিহত হন। সীজার এরপর মিশরে গমন করেন এবং মিশর-সম্রাজ্ঞী বিশ্ববিখ্যাত ক্লিওপেট্রার সাথে সাক্ষাৎ করেন। মিশরের রাজপ্রাসাদে কিছুকাল অবস্থানের পর তিনি পুনরায় সামরিক অভিযানে বহির্গত হন।

প্রথমে সিরিয়াতে ও পরে আফ্রিকায় পম্পির সমর্থকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হন। সীজারের শেষ অভিযান পরিচালিত হয় স্পেনের মুণ্ডা নামক স্থানে, যেখানে পম্পির বাহিনী শেষবারের মতো সীজারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে এবং পরাজিত হয়।

আরও দেখুন :

Leave a Comment