রোমান সভ্যতার পতনের কারণ

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় রোমান সভ্যতার পতনের কারণ

রোমান সভ্যতার পতনের কারণ

 

রোমান সভ্যতার পতনের কারণ

 

রোমান সভ্যতার পতনের কারণ

বিশ্বসভ্যতার ক্ষেত্রে রোমানদের সবচেয়ে বড় অবদান তাদের আইন-ব্যবস্থা। খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দীর মধ্যভাগে রোমানরা তাদের প্রচলিত দেওয়ানী ও ফৌজদারী (সিভিল ও ক্রিমিনাল) আইনগুলি একত্রে সংকলিত করে। এগুলি বারটি কাঠের ফলকে খোদিত করে প্রকাশ্যে ঝুলিয়ে দেয়া হয়।

এগুলিকে বলা হত দ্বাদশ তালিকা (Twelve Tables ) 1. কিন্তু এই আইনগুলি ছিল আদিম কৃষিভিত্তিক সমাজের প্রয়োজন মেটাবার উপযোগী এবং ক্রমপ্রসারমান আধুনিক রোমান রাষ্ট্রের চাহিদা পূরণে এ আইনগুলি ক্রমশ ব্যর্থ হচ্ছিল।

তা ছাড়া শুধু রোমান নাগরিকদের ক্ষেত্রেই এগুলি প্রয়োগ করা যেত। কিন্তু পরবর্তীকালে পরিবর্তিত সামাজিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থার উপযোগী ও ক্রমশ বিস্তৃত রোমান সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত অন্যান্য নাগরিকদের জন্যও একটি নতুন আইনব্যবস্থার প্রয়োজন দেখা দিল। দ্বাদশ তালিকাকে পরিবর্ধিত ও পরিমার্জিত করে একে উদার ও বিশ্বজনীন করে গড়ে তোলা হল।

নতুন প্রবর্তিত রোমান আইনের সূত্রগুলি হল : পরিবর্তিত সামাজিক রীতিনীতি, স্টয়িক দার্শনিকদের আদর্শ, বিচারকদের সিদ্ধান্ত এবং মূলত প্রিটরদের আদেশ। রেমান প্রিটররা ছিলেন ম্যাজিস্টেট এবং আইনকে একটি বিশেষ দৃষ্টিতে ব্যাখ্যা করে তাঁরা জুরিদের যে কোনো মামলা বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার নির্দেশ দিতেন। জুরিরা অবশ্য শুধু তাঁদের মতামতই ব্যক্ত করতেন এবং মামলার চূড়ান্ত রায় দেয়ার ক্ষমতা প্রিটরেরই ছিল।

প্রিটরদের আইনের ব্যাখ্যাগুলি পরবর্তীকালে মামলা পরিচালনার ক্ষেত্রে অনেকখানি সাহায্য করত। এভাবে রেমানরা এমন একটি আইনব্যবস্থা গড়ে তোলে, যা আধুনিক যুগেও আইনের ভিত্তি হিসাবে কার্যকর হয়। প্রিন্সিপেট-এর শাসনকালে রোমান আইনের সর্বোচ্চ বিকাশ ঘটে। সম্রাট অগাস্টাস সীজার ও তাঁর উত্তরাধিকারীগণ কয়েকজন বিশিষ্ট জুরিকে মামলা নিষ্পত্তির বিষয়ে চূড়ান্ত অভিমত ব্যক্ত করার অধিকার দান করেন।

 

আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন
আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

বিভিন্ন সময়ে গেইয়াস, আলপিয়ান,প্যাপিনিয়ান এবং পলাসকে এই অধিকার দেয়া হয়। এঁরা আইনবিদ ও আইন-এর বিভিন্ন বিষয়ের ব্যাখ্যাদানকারী হিসাবে প্রসিদ্ধ ছিলেন। এঁরা রোমান আইনের একটি সুস্পষ্ট বৈজ্ঞানিক ও দার্শনিক ভিত্তি তৈরি করেন। নব প্রণীত রোমান আইন তিন শাখায় বিভক্ত ছিল : জাস সিভিলে, জাস জেন্টিয়াম ও জাস ন্যাচুরাল। শুধুমাত্র রোমান নাগরিকদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য জাস সিভিলে (Jus Civile) বা সিভিল আইন কখনও ছিল লিখিত বা অলিখিত।

এতে অন্তর্ভুক্ত ছিল সিনেটের বিধানসমূহ, প্রিন্সেপদের নির্দেশসমূহ, প্রিটরদের আদেশসমূহ এবং প্রচলিত রীতিনীতি, যা সাধারণত আইনরূপে স্বীকৃত ছিল। জাস জেন্টিয়াম (Jus Gentium) বা জনগণের আইন জাতি-বর্ণ-নির্বিশেষে সকল রোমান নাগরিকদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ছিল। এ আইনের মাধ্যমে দাস প্রথাকে স্বীকৃতদান, ব্যক্তিগত সম্পত্তির রক্ষণাবেক্ষণ, ক্রয়-বিক্রয়ের নীতি নির্ধারণ, অংশীদারিত্ব ও চুক্তির ব্যাখ্যা প্রভৃতি সম্পাদিত হত।

এর অবস্থান নিঃসন্দেহে সিভিল আইনের নিচেই ছিল এবং বিদেশীদের বিচারকার্য সম্পন্ন করার সময়ে এগুলি সিভিল আইনকে মাঝে মাঝে সাহায্য করত। জাস ন্যাচুর‍্যাল (Jus Naturale) বা প্রাকৃতিক আইন ছিল রোমান আইনের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক। ন্যায় ও সত্যের ভিত্তিরূপে স্টয়িক দার্শনিকরা প্রকৃতির আইনের একটি যুক্তিসঙ্গত ব্যাখ্যা দান করে গেছেন। তাঁরা বলেছেন, মানুষ প্রকৃতির কাছ থেকেই সমান অধিকারপ্রাপ্ত, অতএব, কোন সরকারের অধিকার নেই এর উপর হস্তক্ষেপ করার।

 

রোমান সভ্যতার পতনের কারণ

 

এই আইনের সর্বশ্রেষ্ঠ প্রবক্তা সিসেরোর মতে, প্রাকৃতিক আইনই সর্বোচ্চ আইন। যে শাসক এই আইনকে অস্বীকার করে সে অত্যাচারী।
পরবর্তীকালের প্রায় সকল রোমান আইন প্রবক্তা এর স্বপক্ষে মত দিয়েছেন এবং সকল নাগরিক আইন প্রণয়নের সময়ে প্রাকৃতিক আইনের সাথে সঙ্গতি রেখে চলার পরামর্শ দিয়েছেন।

আরও দেখুন :

Leave a Comment