প্রাচীন ভারতের সিন্ধু সভ্যতা

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় প্রাচীন ভারতের সিন্ধু সভ্যতা

প্রাচীন ভারতের সিন্ধু সভ্যতা

 

প্রাচীন ভারতের সিন্ধু

 

প্রাচীন ভারতের সিন্ধু সভ্যতা

ভারতীয় উপমহাদেশের মানুষের ইতিহাস অতি প্রাচীনকাল পর্যন্ত বিস্তৃত। ২ থেকে ৪ লক্ষ বছর আগের মানুষের বসবাসের চিহ্ন এখানে পাওয়া গেছে। ভারতীয় উপমহাদেশের প্রায় সব অঞ্চলেই পুরাতন পাথর যুগের পাথরের হাতিয়ার ও অন্যান্য উপকরণ পাওয়া গেছে। এ থেকে বোঝা যায় যে, অতি-প্রাচীন কালেই ভারতীয় উপমহাদেশে শিকারি মানুষের আগমন ঘটেছিল। তবে সে মানুষরা আধুনিক মানুষ ছিল না।

কালক্রমে আধুনিক মানুষও ভারতীয় উপমহাদেশে এসে পৌঁছেছিল। এদের শিকারি কার্যকলাপের সাক্ষ্য-প্রমাণও পাওয়া গেছে। ভারতবর্ষের বিভিন্ন স্থানে মধ্য পাথরের যুগের অনুরূপ পাথরের হাতিয়ার পাওয়া গেছে। অনুমান করা কঠিন নয় যে, ভারতবর্ষের বাইরে থেকেই প্রথম এ সকল আধুনিক মানুষ এ উপমহাদেশে এসে পৌঁছেছিল এবং সাথে করে উন্নত ধরনের শিকারের হাতিয়ার ও জ্ঞান নিয়ে এসেছিল ।

কারণ, আগেই আলোচনা করা হয়েছে যে, আধুনিক মানুষের উৎপত্তি প্রথমে একস্থানে ঘটেছিল, সেখান থেকেই তারা সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছে। এবং এ কথা জানাই আছে যে, ভারতীয় উপমহাদেশে আধুনিক মানুষের উৎপত্তি ঘটেনি। প্রাচীন ভারতে শিকারি যুগের সমাজের অস্তিত্বের অনেক প্রমাণ পাওয়া গেলেও নতুন পাথরের যুগের কৃষিসমাজের অস্তিত্বের বিশেষ কোনো সাক্ষ্য পাওয়া যায়নি।

৪,০০০ থেকে ৩,০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের মধ্যে বেলুচিস্তানে এবং সিন্ধু অববাহিকায় (সিন্ধু ও পাঞ্জাবে) নতুন পাথর যুগের সংস্কৃতির উদয় ঘটেছিল, তার প্রমাণ পাওয়া গেছে। পশ্চিম এশিয়া থেকেই যে সিন্ধু-বেলুচিস্তানে নবোপলীয় সংস্কৃতির বিস্তার ঘটেছিল তাতে সন্দেহের কোনো কারণ নেই। ভারতবর্ষের আরও কয়েক স্থানে নবোপলীয় কৃষি সংস্কৃতির সন্ধান পাওয়া গেছে; যথা, দক্ষিণ ভারতে, কাশ্মীরে এবং বাংলা ও আসামে।

 

আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন
আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

পণ্ডিতরা অনুমান করেন যে, মধ্য এশিয়া থেকে কাশ্মীরে এবং দক্ষিণ চীন থেকে আসামে নবোপলীয় সংস্কৃতির বিস্তার ঘটেছিল। আর দক্ষিণ ভারতে নবোপলীয় সংস্কৃতি পৌঁছেছিল হয়তো উত্তর পশ্চিম ভারতবর্ষ থেকেই, তবে এ বিষয়ে নিশ্চিতভাবে কিছু বলা কঠিন।
আমরা ইতিপূর্বেই আলোচনা করেছি যে, নবোপলীয় সমাজের বিকাশের মধ্য দিয়ে মিশর বা মেসোপটেমিয়াতে প্রথম ব্রোঞ্জযুগের নগরসভ্যতার উদয় ঘটেছিল।

ভারতীয় উপমহাদেশেও সিন্ধু অববাহিকায় ঐ রকম এক উন্নত নগরসভ্যতার উদয় ঘটেছিল খ্রিস্টপূর্ব ২৬০০ অব্দের কাছাকাছি সময়ে। কিন্তু এ উপমহাদেশেরই পরিসরে সিন্ধু-বেলুচিস্তানের নবোপলীয় সমাজের বিকাশের মধ্য দিয়ে স্বতন্ত্রভাবে ব্রোঞ্জ যুগের সভ্যতার আবিষ্কার ঘটেছিল এমন কথা মনে করা ঠিক নয়। সম্ভবত, পশ্চিম এশিয়া অর্থাৎ ব্যবিলন ইত্যাদি অঞ্চল অথবা মিশর থেকেই ব্রোঞ্জযুগের সভ্যতা এসে ভারতীয় উপমহাদেশে পৌঁছেছিল।

এ অভিমতের পক্ষে একটা যুক্তি হচ্ছে এই যে, ভারতবর্ষে নবোপলীয় কৃষি সংস্কৃতি এত বেশি বিস্তার বা বিকাশলাভ কখনই করেনি যে তার ভিত্তিতে স্বতন্ত্রভাবে ব্রোঞ্জযুগের উদয় ঘটা সম্ভব। দ্বিতীয় যুক্তি হচ্ছে এই যে, ব্রোঞ্জ যুগের যে কতগুলি জরুরি আবিষ্কার প্রথম মিশর ও মেসোপটেমিয়াতেই ঘটেছিল, ভারতবর্ষের সিন্ধু সভ্যতাতেও তার প্রয়োগ দেখা যায়। আবিষ্কারগুলি হল, ব্রোঞ্জের কারিগরি, ইট, ওজন ও মাপনী, লেখন পদ্ধতি ইত্যাদি।

 

প্রাচীন ভারতের সিন্ধু

 

এ সকল জটিল আবিষ্কার যে একবার মেসোপটেমিয়াতে একবার ভারতবর্ষে আলাদা করে ঘটবে, এ রকম মনে করা রীতিমত কষ্টকল্পনা। কারণ আমরা আগেই আলোচনা করেছি যে, লিখনপদ্ধতি বা ব্রোঞ্জের কারিগরি ইত্যাদি আবিষ্কারের জন্য বিশেষ ধরনের সামাজিক পটভূমি প্রয়োজন হয়। এ কথা তাই মনে করা বিশেষভাবে যুক্তিসঙ্গত যে, সিন্ধু উপত্যকাতে ব্রোঞ্জযুগের সভ্যতার উদয় ঘটেছিল মিশর বা মেসোপটেমিয়ার সভ্যতার প্রভাবে বা তার অনুকরণে। আমরা এখন এই সিন্ধু সভ্যতার পরিচয় প্রদান করব।

আরও দেখুন :

Leave a Comment