আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় আজটেক সভ্যতা
আজটেক সভ্যতা
আজটেক সভ্যতা
খ্রিস্টীয় প্রথম শতাব্দীতে টোলটেক নামক এক জাতির মানুষ উত্তর দিক থেকে এসে মেক্সিকো উপত্যকা অধিকার করে। মায়াদের সংস্পর্শে এসে টোলটেকরা তাদের সংস্কৃতি আয়ত্ত করে এবং মায়াদের অনুকরণে সুন্দর সুন্দর নগর গড়ে তোলে। দ্বাদশ শতাব্দীর মধ্যে টোলটেক এবং তাদের সমগোত্রীয় অন্যান্য জাতির মানুষরা এক বড় রাজ্য গড়ে তোলে। এর কিছুকাল পরেই আজটেক নামক জাতি উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে মেক্সিকোতে আগমন করে।
১৩২৫ খ্রিস্টাব্দের দিকে আজটেকরা বর্তমান মেক্সিকো নগরীর কাছে এক হ্রদের মধ্যে বাস স্থাপন করে। এর পর তারা মেক্সিকোর অন্যান্য উপজাতিদের সাথে ঐক্যবদ্ধ হয়ে একটি যুক্তরাজ্যের প্রতিষ্ঠা করে। পনের শতকে আজটেকদের এ রাজ্য সারা মেক্সিকো জুড়ে বিস্তৃত হয়। আজটেকদের রাজ্য শেষ পর্যন্ত মেক্সিকো উপসাগর থেকে প্রশান্ত মহাসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছিল। আজটেকরা ছিল যুদ্ধপ্রিয় জাতি। তাদের সুশিক্ষিত যোদ্ধার দল সর্বদা প্রস্তুত থাকত।
এ সৈন্যদের সাহায্যে আজটেকরা তাদের প্রতিবেশী দেশসমূহকে সব সময় ব্যতিব্যস্ত করে। রাখত। তবে আজটেকদের এ প্রতিপত্তি দীর্ঘস্থায়ী হতে পারেনি, কারণ ১৫১৯ খ্রিস্টাব্দে স্পেনীয় সেনাপতি কর্টেজের আক্রমণে আজটেক সাম্রাজ্য ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছিল।
আজটেকদের শাসনকর্তা ছিলেন এক সর্বক্ষমতাময় রাজা। তাঁর সমর্থনকারী ছিল সেনাবাহিনী, পুরোহিত এবং অভিজাতগণ।
আজটেকরা অনবরত যুদ্ধ করে অসংখ্য যুদ্ধবন্দী ধরে আনত। যুদ্ধবন্দীদের মধ্য থেকে কিছুসংখ্যককে দেবতার উদ্দেশ্যে বলি দেওয়া হত, অন্যান্যদের দাসে পরিণত করা হত। মায়াদের মত আজটেক সমাজেও দাসের প্রচলন ছিল। আজটেক সমাজে স্বাধীন মানুষরা কয়েকটি শ্রেণীতে বিভক্ত ছিল। সবচেয়ে নিচের শ্রেণীতে ছিল সাধারণ কৃষক ও ভূমিদাসরা। এরা যা উৎপাদন করত তার এক বৃহৎ অংশ রাষ্ট্র আত্মসাৎ করত পুরোহিত, সেনাবাহিনী ও অভিজাতদের পরিপোষণের জন্য।
আজটেক সভ্যতার ভিত্তি ছিল কৃষিকাজ। আজটেকরা কোকো, রবার, টমেটো, ভুট্টা প্রভৃতির চাষ করত। এ সকল গাছ এবং ফল ও শসা আমেরিকা থেকেই অন্যান্য দেশে বিস্তার লাভ করেছে। আজটেকদের রাজ্যে জমির বিশেষ অভাব ছিল। তাই তারা হ্রদের মধ্যে কৃত্রিম দ্বীপ সৃষ্টি করে তাতে ফলের চাষ করত। আজটেকদের সমাজে চারু ও কারুশিল্পের বিকাশ ঘটেছিল। আজটেকরা সুন্দর সুন্দর মাটির পাত্র ও মূর্তি, ধাতুর ভাস্কর্য, অলঙ্কার, অস্ত্র প্রভৃতি নির্মাণের কাজে দক্ষতা অর্জন করেছিল।
আজটেকরা সুন্দর কাপড় বুনতে পারত। আজটেক সমাজে ব্যবসা-বাণিজ্যেরও প্রসার ঘটেছিল। পালকের ফাঁপা নলের ভিতর সোনার রেণু ভরে তাকে আজটেকরা মুদ্রারূপে ব্যবহার করত। আজটেকরা এক ধরনের লেখনপদ্ধতি আয়ত্ত করেছিল। সম্ভবত ওলমেক অথবা মায়াদের কাছ থেকে তারা এ লিপি লাভ করেছিল। আজটেকরা মায়াদের পঞ্জিকাকেও গ্রহণ করেছিল।
মায়াদের মতো আজটেকরাও প্রত্যেক নগরে পিরামিড, মন্দির ও বিশাল ভবন নির্মাণ করত। তারা খাল এবং বাঁধও নির্মাণ করতে পারত। আজটেকদের স্থাপত্যশিল্প ও ভাস্কর্যের প্রায় সকল নিদর্শন স্পেনীয় সেনাপতি কর্টেজের আক্রমণে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছিল।
আরও দেখুন :