আজকের আলোচনার বিষয় ‘অত্যাচারিতকে দোষারোপ করা’র প্রবণতা এবং তার প্রত্যাখান – যা বর্ণবাদের সম্পর্ক এর অর্ন্তভুক্ত, বর্ণবাদী দৃষ্টিভঙ্গির একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে অত্যাচারিতকে তার দুরবস্থার জন্য দায়ী করা (victim- blaming)। ১৯৬০-এর দশকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, বর্ণবাদী সঙ্কট ঘনীভূত হয় এবং বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলন শক্তিশালী হয়ে ওঠে (এ আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন কৃষ্ণাঙ্গ নেতা মার্টিন লুথার কিং)।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় পরিসংখ্যান অনুসারে শ্বেতাঙ্গদের তুলনায় কৃষ্ণাঙ্গদের মাঝে দরিদ্রদের সংখ্যা অনেক বেশি, এ বিষয়টির উপর বর্ণবাদ বিরোধীরা গুরুত্বারোপ করেন। শ্বেতাঙ্গ গরীবের তুলনায় কৃষ্ণাঙ্গ গরিবের সংখ্যা কেন বেশি, এ প্রশ্নের জবাবে কিছু মার্কিনীরা অভিনব ব্যাখ্যা দাঁড় করান। তাঁদের মধ্যে একজন ছিলেন সমাজবিজ্ঞানী ড্যানিয়েল ময়নিহান।
‘অত্যাচারিতকে দোষারোপ করা’র প্রবণতা এবং তার প্রত্যাখান
ময়নিহানের মতে, নিগ্রো পরিবার রোগাক্রান্ত এবং বিকারগ্রস্ত। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা জরুরী যে “নিগ্রো” শব্দটি নেতিবাচক (যেমন “বাঙ্গাল” বা “গারো” শব্দটি নেতিবাচক) এবং ১৯৬০-৭০ এর দশকগুলোতে, বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলন চলাকালীন সময়ে, কৃষ্ণাঙ্গরা এই শব্দ প্রত্যাখ্যান করেন। এর পরিবর্তে তারা “ব- ্যাক” (যার বাংলা দাঁড়ায় কৃষ্ণাঙ্গ) হিসেবে নিজেদের আত্ম ও সমষ্টিগত পরিচিতি দাঁড় করান।
ময়নিহান বলেন, বিকারগ্রস্ত পারিবারিক জীবনের কারণেই কৃষ্ণাঙ্গরা দরিদ্র। তাদের পরিবারে পুরুষের অনুপস্থিতি লক্ষণীয়। অধিকাংশ পরিবারে দেখা যায় একাকী মায়ের সাথে বসবাস করছে তার শিশু সন্তান। বেকার পুরুষেরা তাদের নিজ পরিবারের দায়িত্ব গ্রহণে ব্যর্থ। আদর্শ পিতা-মাতার অভাবে কৃষ্ণাঙ্গ শিশুরা ভাল কিছু শেখে না। বড় হলে তাদের নিজের জীবনও তাদের পিতা মাতার জীবনের মত দারিদ্র্যে পর্যবসিত হয়। লক্ষ্য করে দেখেন, এই ব্যাখ্যায় যারা প্রান্তিক এবং নিপীড়িত, তাদের দোষারোপ করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, তারা নিজেরা (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কৃষ্ণাঙ্গ দাসত্বের ইতিহাস নয়, বর্ণবাদী পরিকাঠামো এবং তার শক্তিমত্তা নয়) তাদের দুরবস্থার জন্য দায়ী।

ময়নিহানের ভাবনাচিন্তার শক্তিশালী জবাব পাওয়া যায় নৃবিজ্ঞানী ক্যারল স্ট্যাকের কাজে। তিনি কৃষ্ণাঙ্গ পরিবার নিয়ে গবেষণা করেন। তাঁর গবেষণা ক্ষেত্র ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডেট্রয়েট শহরে বসবাসের একটি সরকারী প্রকল্প। গরিব কৃষ্ণাঙ্গদের মধ্যে গড়ে উঠা নারীকেন্দ্রিক গৃহস্থালী এবং দারিদ্রের খুব ভিন্ন ব্যাখ্যা দেন তিনি। স্ট্যাক বলেন, কৃষ্ণাঙ্গরা বর্ণবাদী বৈষম্যের শিকার। বর্ণবাদের কারণে পুরুষেরা কাজ পায় না, তারা বেকার থাকতে বাধ্য।
সরকারী ভাতা ব্যবস্থাও পুরুষ সঙ্গীর সাথে বসবাসরত নারীর প্রতি বিদ্বেষ-প্রসূত। দারিদ্র্যের এই প্রেক্ষিতে গড়ে উঠেছে নারী-কেন্দ্রিকতা। স্ট্যাক এই নারী-কেন্দ্রিকতাকে বিকারগ্রস্ততার লক্ষণ, বা “অযৌক্তিক” জীবন-যাপন পদ্ধতি মনে করেন না। তিনি বলেন, গৃহস্থালীর এই গঠন দারিদ্রের প্রেক্ষিতে গড়ে উঠেছে, এবং এটিকে দেখা উচিৎ দারিদ্র্য মোকাবেলার একটি কৌশল হিসেবে। নিচের কেস স্টাডিতে তার ব্যাখ্যার বিবরণ সংক্ষিপ্ত আকারে দেয়া হয়েছে।
আরও দেখুনঃ