Site icon Anthropology Gurukul [ নৃবিজ্ঞান গুরুকুল ] GOLN

কেস স্টাডি : ইংল্যান্ডের গৃহিণীর ইতিহাস 

কেস স্টাডি : ইংল্যান্ডের গৃহিণীর ইতিহাস 

কেস স্টাডি : ইংল্যান্ডের গৃহিণীর ইতিহাস 

আজকের আলোচনার বিষয় ইংল্যান্ডের গৃহিণীর ইতিহাস – যা  বিয়ের ধারণা এবং সংজ্ঞা এর অর্ন্তভুক্ত, পাশ্চাত্য সমাজে “গৃহিণী” (housewife) শব্দের বিশেষ অর্থ রয়েছে। গৃহিণী মাত্রই নারী; গৃহিণী বলতে সাধারণভাবে বোঝা হয়ে থাকে এমন একজন নারী যার কাজ হচ্ছে একটি গৃহকে সংগঠিত করা, এবং সেটিকে গৃহস্থালী (household) রূপে বজায় রাখা। সংসারের ধোয়াধুয়ির কাজ, রান্না করা, পরিষ্কার করা এবং প্রাক্-স্কুলবয়সী সন্তানদের সার্বক্ষণিক দেখাশোনা করা হচ্ছে একজন গৃহিণীর কাজ। সংক্ষেপে বললে, একজন গৃহিণীর দায়িত্ব হচ্ছে তার স্বামী এবং সন্তানদের গৃহী সেবা প্রদান করা।

গৃহিণীর কাজ হচ্ছে মজুরিবিহীন। পুঁজিবাদী সমাজে পুরুষের/স্বামীর কাজ হচ্ছে মজুরি যুক্ত। আশা করা হয়ে থাকে যে, সেই মজুরি একজন শ্রমিক/চাকুরিজীবী, এবং তার স্ত্রী ও সন্তানদের ভরণপোষণের খরচ মেটাবে। ক্যাথরিন হল বলেন, মজুরি ভিত্তিক অর্থনীতি গড়ে উঠার সাথে সাথে “কাজ”এর সংজ্ঞা পাল্টে যায়।

কেস স্টাডি : ইংল্যান্ডের গৃহিণীর ইতিহাস

 

 

নতুন সংজ্ঞায়নে, কাজ হচ্ছে সেই শ্রম যেটির বিনিময়ে টাকা (বেতন, মজুরি, পারিশ্রমিক আকারে) পাওয়া যায়। যে সকল কাজ কোন অর্থ আয় করে না – যেমন গৃহী শ্রম – সেটিকে “কাজ” হিসেবে বিবেচনা করা হয় না; সেটি, অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ হতে, মূল্যহীন কিংবা “অন-অর্থনৈতিক” হিসেবে বিবেচিত হয়। গৃহিণীর কাজ পারিশ্রমিকবিহীন হওয়ার কারণে, এটির কোন সামাজিক মর্যাদা বা মূল্য নেই। হল বলেন, ইংল্যান্ডের কোন গৃহিণীকে যদি জিজ্ঞেস করা হয় তিনি কি করেন, সাধারণত তার উত্তর হয় এরূপ, “ওহ, আমি তো শুধুমাত্র গৃহিণী”। কিংবা, “না, আমি তো কোন কাজ করি না। আমি একজন গৃহিণী”। কিন্তু ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায় যে, নারীর কাজ সবসময় এত মূল্যহীন ছিল না।

চৌদ্দ শতকের ইংল্যান্ডে গৃহিণীর অর্থ ছিল ভিন্ন। তখন, কৃষিভিত্তিক গৃহস্থালীতে এবং শহরেও, খোদ পরিবার ছিল উৎপাদনের একটি একক (productive unit)। পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় উৎপাদনের স্থান হয়ে ওঠে কলকারখানা, মিল- ফ্যাক্টরি এবং অফিস। গৃহ এবং পরিবারের চৌহদ্দি থেকে ‘কাজ’ সরে যাওয়ার ফলে, এবং গৃহী কাজ ‘অন- অর্থনৈতিক’ হিসেবে সংজ্ঞায়িত হওয়ার ফলে, পরিবার এবং গৃহ হয়ে পড়ে আবেগ-অনুভূতি এবং নিরেট ভালবাসার জায়গা, এবং বাজার থেকে কিনে আনা দ্রব্যাদি ভোগের জায়গা (রুটি-আলু, মাছ-মাংস, পোশাক-আশাক) । চৌদ্দ শতকের প্রাক-শিল্পভিত্তিক পরিবার ছিল স্বনির্ভর এবং গৃহী কাজ বলতে বোঝাত নানান ধরনের কাজ।

 

আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

কাজের পরিসীমা ছিল আরও ব্যাপকতর। সে সময়ের পরিবারে প্রতিটি ব্যক্তির শ্রম ছিল পরিবারের সামগ্রিক শ্রমের অংশ। চৌদ্দ শতকে একজন গৃহিণী গৃহী কাজ এবং সন্তান লালন-পালন করতেন, এবং এই কাজ তখনও ছিল মজুরিবিহীন। কিন্তু, হল্ জোর দিয়ে বলেন, তার কর্ম-পরিসর এবং কাজের তালিকা বুর্জোয়া নারীর মতন পরিসীমিত ছিল না। অতীতে, বহু নারী ভিন্ন ভিন্ন ধরনের কাজ করতেন। মদ বানানো, ফল-মূলের চাষ-বাস, শন কাটার কাজ, এবং দেশজ ঔষধি জ্ঞানের সাহায্যে পরিবারের সদস্যদের শরীর-স্বাস্থ্য পরিচর্যা – এসব কাজ নারীর কাজ হিসেবে বিবেচিত হত।

লিঙ্গীয় শ্রম বিভাজন বিদ্যমান ছিল, কিন্তু এই বিভাজন ছিল আরও নমনীয়; পুরুষের শ্রম ক্ষমতা নারীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল ঠিক যেমন নারীরটিও পুরুষের জন্য ছিল গুরুত্বপূর্ণ। উৎপাদনশীল কাজে একজন নারীর অংশগ্রহণ তার স্বামীর উপর নির্ভর করত না; উৎপাদনশীল কাজের সাথে একজন গৃহিণী নারীর যুক্ততা, এবং এতে অংশগ্রহণ, ছিল প্রত্যক্ষ। সচ্ছল কৃষক গৃহস্থালীর নারীরা নিজ গৃহে কাজ করতেন, গরীব নারীরা অভিজাত পরিবার অথবা ধনী কৃষক পরিবারে কাজ করতেন, গৃহ ছিল একই সাথে কাজের এবং বসবাসের স্থান ।

 

চিত্র ১ : ইংল্যান্ডের গৃহিনীর শ্রম

 

আরও দেখুনঃ

Exit mobile version