Site icon Anthropology Gurukul [ নৃবিজ্ঞান গুরুকুল ] GOLN

গৃহস্থালী ও তার বিকাশ চক্র

আজকের আলোচনার বিষয় গৃহস্থালী ও তার বিকাশ চক্র -তত্ত্ব অধ্যায়ের সারাংশ – যা পরিবার ও গৃহস্থালী এর অর্ন্তভুক্ত, নৃবিজ্ঞানী মেয়ার ফোর্টস গৃহস্থালীর পরিবর্তে গৃহী দল ( domestic group) শব্দ দুটি ব্যবহার করেন। ফোর্টসের মতে গৃহী দল এবং পরিবার, এ দুটো ভিন্ন আবার আন্তঃসম্পর্কিত। ফোর্টস বলেন, নৃবিজ্ঞানীরা কোন একটি বিশেষ মুহূর্তে মাঠ-গবেষণা করেন। তাঁরা গবেষণা ক্ষেত্রে বিচিত্র ধরনের পরিবার দেখতে পান। অনেক সময় এই বৈচিত্র্য দেখে তাঁরা হকচকিয়ে যান। তাঁরা বুঝতে ব্যর্থ হন যে, আসলে এত ধরনের পরিবার বা বসবাসের ধরন একই পরিবারের ভিন্ন-ভিন্ন মুহূর্তের রূপ।

পরিবার অনড়, অটল নয়। বরং পরিবর্তনীয়। গৃহী দল বাড়ে, পরিবর্তিত হয়, বিলুপ্ত হয়ে যায়। গৃহী দলের এই পরিবর্তনশীল রূপ কোন একটি নির্দিষ্ট মৌলিক পরিবারের বিকাশ-চক্রের একটি বিশেষ মুহূর্ত মাত্র। ফোর্টসের মতে, প্রতিটি গৃহী দলের বিকাশ চক্রের তিনটি পর্যায় লক্ষণীয়। প্রথম ধাপ হচ্ছে (ক) সম্প্রসারণ। একজন পুরুষের সাথে একজন নারীর বিয়ের মাধ্যমে গৃহী দলের সম্প্রসারণের সূত্রপাত ঘটে।

 

 

গৃহস্থালী ও তার বিকাশ চক্র

এই ধাপ জৈবিক ভাবে নির্ধারিত। স্ত্রীর (অথবা স্ত্রীকুলের) মাসিক বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত সন্তান জন্মদানের মাধ্যমে গৃহী দলের সদস্য সংখ্যা বাড়তে থাকে। কাঠামোগত দিক দিয়ে, এই পর্যায়ে সকল সন্তান বাবা-মায়ের ওপর নানাভাবে যেমন অর্থনৈতিকভাবে তেমনি অনুভূতির দিক দিয়ে, আবার – আইনী-বিচারশাস্ত্রীয় অর্থে – নির্ভরশীল। (খ) গৃহীদলের বিকাশ চক্রের দ্বিতীয় ধাপ হচ্ছে বিভাজন ।

এই পর্যায়টি পূর্বের ধাপের বিপরীত: এ পর্যায়ে গৃহী দল ছোট হয়ে যায়। এই ধাপের সূত্রপাত ঘটে যখন সর্বজ্যেষ্ঠ সন্তানের বিয়ে হয় এবং শেষ হয় সর্বকনিষ্ঠ সন্তানের বিয়ের সাথে। (গ) গৃহী দলের বিকাশ চক্রের তৃতীয় ধাপ হচ্ছে পুনঃস্থাপন। অর্থাৎ, জনক-জননীর মৃত্যু ঘটে এবং তাদের সন্তানেরা তাদের স্থলাভিষিক্ত হন। যে সকল সমাজে সর্বকনিষ্ঠ সন্তান উত্তরাধিকার সূত্রে বাড়ি পেয়ে থাকে, সেখানে এরই মাধ্যমে তৃতীয় ধাপের শুরু।

 

আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

বর্তমানে নৃবিজ্ঞানীরা প্রায় একমত যে, কে কোন গৃহস্থালীর সদস্য তা নির্ভর করে তিনটি প্রশ্নের উত্তরের ওপর: আপনি কি সেখানে ঘুমান? আপনি কি সেখানে খাওয়া-দাওয়া করেন? আপনার আয় কি সেই গৃহস্থালীতে দেয়া হয়? কিন্তু বাসস্থান, খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন এবং অর্থনৈতিক কর্মকান্ড ছাড়া গৃহস্থালীর আরো কার্য থাকতে পারে। যেমন, সত্তা বা পরিচিতি-গঠন। কিংবা, গৃহস্থালী হতে পারে জীবনের বিভিন্ন কাল উদযাপনের স্থান বা পরিসর।

 

 

যথা শিশুকাল, বয়সন্ধিকাল ইত্যাদি। অথবা, সম্পত্তিতে কার কতখানি অধিকার আছে সেটার হিসেব-নিকেশের জায়গা হতে পারে গৃহস্থালী। কিংবা, সেটা হতে পারে মৃত পূর্বপুরুষদের স্মৃতি ধরে রাখা (“এইখানে তোর দাদীর কবর…”) বা তাঁদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের স্থান। কিন্তু তার মানে কি এই যে, যে স্থানে এধরনের কার্য সম্পাদিত হয়ে থাকে তা মাত্রই গৃহস্থালী? উদাহরণ স্বরূপ, বাংলাদেশী হিসেবে (শিক্ষিত) সত্তা বা পরিচিতি গঠনের একটি কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠান হচ্ছে স্কুল। তার মানে কি স্কুলও গৃহস্থালী? নৃবিজ্ঞানীরা বলবেন, না। ওপরে উল্লেখিত তিনটির যে কোন একটি কার্যাবলী সম্পাদন গৃহস্থালী এবং তার সদস্যদের চিহ্নিত করার রাস্তা বাতলে দেয়।

আরও দেখুনঃ

Exit mobile version