Site icon Anthropology Gurukul [ নৃবিজ্ঞান গুরুকুল ] GOLN

জাদুবিদ্যা (Witchcraft & Sorcery — ধর্মের নৃতত্ত্বের আলোচনায় একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়)

ধর্মের নৃতত্ত্ব” (Anthropology of Religion) বিষয়টির অধীনে, জাদুবিদ্যা নিয়ে আলোচনা মানব সভ্যতার ইতিহাস, সংস্কৃতি, বিশ্বাস এবং সামাজিক কাঠামোর একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক উন্মোচন করে। নৃবিজ্ঞানের অন্যতম লক্ষ্য হলো অতীত ও বর্তমানের মানব সমাজ, সংস্কৃতি ও আচরণকে বৈজ্ঞানিকভাবে অধ্যয়ন করা, এবং সেই প্রেক্ষাপটে জাদুবিদ্যা মানব বিশ্বাসের এক বিশেষ রূপ হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ গবেষণার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

 

 

জাদুবিদ্যার সংজ্ঞা প্রকৃতি

জাদুবিদ্যা বলতে বোঝায় এমন কিছু বিশ্বাস ও আচার-অনুষ্ঠানের সমষ্টি, যা প্রাকৃতিক বা অতিপ্রাকৃত শক্তি ও সত্ত্বাকে কাজে লাগিয়ে বাস্তব জগতে প্রভাব বিস্তার করার উদ্দেশ্যে সম্পাদিত হয়। এই বিশ্বাস ও প্রথাগুলো সাধারণত ধর্ম এবং বিজ্ঞান—উভয়ের বাইরে একটি আলাদা চর্চা হিসেবে বিবেচিত হয়।

যদিও ইতিহাসে জাদুবিদ্যার সংজ্ঞা সময়ের সাথে পরিবর্তিত হয়েছে—কখনও ইতিবাচক, কখনও নেতিবাচক অর্থে—তবুও বহু সংস্কৃতিতে এটি আজও ধর্মীয়, চিকিৎসাগত সামাজিক ভূমিকা পালন করছে। কিছু সমাজে এটি রোগ নিরাময়, আত্মিক সুরক্ষা বা সামাজিক শৃঙ্খলা বজায় রাখার অংশ; আবার অন্যত্র এটি ভীতি, শাস্তি বা সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন করার মাধ্যম হিসেবে দেখা হয়।

 

ঐতিহাসিক সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপট

পশ্চিমা সংস্কৃতিতে দীর্ঘকাল ধরে জাদুবিদ্যাকে দ্বিতীয় শ্রেণির, ভিনদেশী আদিম সংস্কৃতির বৈশিষ্ট্য হিসেবে দেখা হয়েছে। উনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগ ও বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে পশ্চিমা বুদ্ধিজীবীরা মনে করতেন, জাদুবিদ্যার চর্চা প্রমাণ করে যে সংশ্লিষ্ট জনগোষ্ঠী মানসিক ও সাংস্কৃতিকভাবে প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। ফলে এটি সাংস্কৃতিক ভিন্নতার এক শক্তিশালী সূচক হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

 

আধুনিক অতিপ্রাকৃতবিদ্যা নব্যপৌত্তলিক ধর্মে জাদুবিদ্যা

বর্তমান সময়ের অতিপ্রাকৃতবিদ্যা এবং নব্যপৌত্তলিক ধর্মসমূহে অসংখ্য আত্ম-সংজ্ঞায়িত জাদুকর ও জাদুকরী নিয়মিত জাদুর আচার পালন করেন। তাদের মতে, জাদু হলো ইচ্ছাশক্তির মাধ্যমে বাস্তব পৃথিবীতে পরিবর্তন আনার কৌশল। এই দৃষ্টিভঙ্গি জনপ্রিয় করেছিলেন ইংরেজ অতিপ্রাকৃতবিদ অ্যালেস্টার ক্রাউলি (১৮৭৫–১৯৪৭), এবং পরবর্তীতে উইকা, লাভেয়ান স্যাটানিজম, এবং ক্যাওস ম্যাজিক-এর মতো বিশ্বাসব্যবস্থাগুলো এই সংজ্ঞা গ্রহণ করে।

 

শব্দের উৎস ভাষাগত বিবর্তন

 

প্রাচীনকাল থেকে খ্রিস্টীয় দৃষ্টিভঙ্গি

খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীর শেষ থেকে পঞ্চম শতাব্দীর প্রথম দিকে, গ্রীকরা এই শব্দটি নেতিবাচক অর্থে ব্যবহার করতে শুরু করে—প্রতারণাপূর্ণ ও বিপজ্জনক রীতি নির্দেশ করতে। ল্যাটিন ভাষাও এই অর্থ গ্রহণ করে এবং খ্রিস্টপূর্ব প্রথম শতাব্দীতে এটি খ্রিস্টীয় তত্ত্বে প্রবেশ করে।

প্রাচীন খ্রিস্টানরা জাদুবিদ্যাকে পিশাচের সঙ্গে সম্পর্কিত বলে মনে করত এবং একে খ্রিস্টধর্মবিরোধী আখ্যা দিত। মধ্যযুগে এই ধারণা অব্যাহত থাকে, যখন খ্রিস্টান লেখকরা—

—এসবকেই “জাদুবিদ্যা”র অন্তর্ভুক্ত করেন। ষোড়শ শতাব্দীতে ইউরোপীয়রা উপনিবেশ বিস্তারের সময় যেসব অ-খ্রিস্টীয় বিশ্বাসের মুখোমুখি হন, সেগুলোও তারা জাদুবিদ্যা হিসেবে অভিহিত করেন।

 

ইতিবাচক নেতিবাচক ধারণার দ্বন্দ্ব

একই সময়ে, ইতালীয় মানবতাবাদীরা প্রাকৃতিক জাদু (Natural Magic)-এর ধারণাকে ইতিবাচকভাবে ব্যাখ্যা করেন, যেখানে জাদুকে প্রকৃতির গোপন শক্তি বোঝা ও কাজে লাগানোর মাধ্যম হিসেবে দেখা হয়। পরবর্তী শতাব্দীগুলোতে পশ্চিমা সংস্কৃতিতে জাদুবিদ্যার এই দ্বৈত ধারণা—একদিকে বিপজ্জনক ও ধর্মবিরোধী, অন্যদিকে রহস্যময় ও প্রাকৃতিক শক্তির প্রয়োগ—বারবার পুনরাবৃত্তি হয়েছে।

 

নৃতত্ত্বে জাদুবিদ্যার অধ্যয়ন

উনবিংশ শতাব্দী থেকে নৃতত্ত্ববিদ ও সমাজবিজ্ঞানীরা জাদুবিদ্যা নিয়ে বিভিন্ন ব্যাখ্যা দিয়েছেন—

  1. এডওয়ার্ড টাইলর (১৮৩২–১৯১৭) ও জেমস জি. ফ্রেজার (১৮৫৪–১৯৪১) —
    • জাদুবিদ্যাকে এমন একটি বিশ্বাসব্যবস্থা হিসেবে ব্যাখ্যা করেন, যেখানে এক বস্তুর সঙ্গে অন্য বস্তুর গোপন সহমর্মিতা রয়েছে এবং একটি অন্যটিকে প্রভাবিত করতে পারে।
    • তাদের দৃষ্টিতে, জাদুবিদ্যা বিজ্ঞানের বিপরীতমুখী।
  2. মার্সেল মাউস (১৮৭২–১৯৫০) ও এমিল দুরখেইম (১৮৫৮–১৯১৭) —
    • জাদুবিদ্যাকে ব্যক্তিগত আচার রীতি হিসেবে চিহ্নিত করেন।
    • তাদের সংজ্ঞায় ধর্ম হলো সাম্প্রদায়িক ও সংগঠিত কার্যক্রম, যেখানে জাদুবিদ্যা ব্যক্তিনির্ভর ও বিচ্ছিন্ন।

 

 

সমালোচনা সমসাময়িক দৃষ্টিভঙ্গি

১৯৯০-এর দশকে বহু পণ্ডিত জাদুবিদ্যা শব্দটির উপযোগিতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তাদের মতে—

 

জাদু বিদ্যা নিয়ে বিস্তারিত ঃ

 

Exit mobile version