জাদু এবং ধর্ম এই ক্লাসটিতে ধর্মের বিষয়াবলী তুলে ধরা হয়েছে। নৃবিজ্ঞানের [ Anthropology ] লক্ষ্য হলো অতীত ও বর্তমানের মানব সমাজ ও মানব আচরণকে অধ্যয়ণ করা।
জাদু এবং ধর্ম
বিভিন্ন রকম জাদু সংক্রান্ত চিন্তা হচ্ছে একটি সাংস্কৃতিক সর্বজনীনতা, এবং এটি ধর্মের একটি বিশেষ দিক। সমাজে প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মই থাকুক, অথবা অধিক মাত্রায় সামান্যীকৃত সর্বপ্রাণবাদ বা শামানবাদই থাকুক, সব সমাজেই জাদুর অস্তিত্ব রয়েছে। পাশ্চাত্য একেশ্বরবাদের বিকাশের সাথে সাথে ধর্ম ও জাদু একে অপরের থেকে ধারণাগতভাবে পৃথক হয়ে গেছে, যেখানে মূলধারার ধর্মমতগুলোর দ্বারা অনুমোদিত অতিপ্রাকৃতিক ঘটনা (যেমন মিরাকল বা অলৌকিক ঘটনা) এবং লোক-বিশ্বাস বা গূঢ় বা অকাল্ট ভাবনাচিন্তার মধ্যে প্রোথিত জাদুর মধ্যে পার্থক্যের সৃষ্টি হয়।
প্রাক-একেশ্বরবাদী ঐতিহ্যে, ধর্মীয় আচার ও জাদুর মধ্যে কোন মৌলিক পার্থক্য ছিল না। জাদুর সাথে সম্পর্কিত রক্ষাকারী দেবতাদেরকে (ইষ্ট-দেবতা, কূলদেবতা, গ্রামদেবতা, নগরদেবতা) কখনও কখনও দুর্বোধ্য দেবতা (হারমেটিক ডেইটি)বা স্পিরিট গাইড বলা হত।
ধর্ম ও জাদুর মধ্যে ক্রিয়াগত পার্থক্য
মারসেল মস ও হেনরি হিউবার্ট এর দেয়া জাদুর প্রাথমিক সমাজতাত্ত্বিক ব্যাখ্যায় যেসব সামাজিক অবস্থায় জাদুর প্রপঞ্চের বিকাশ সাধিত হতে পারে সেসব ক্ষেত্রে জোড় দেয়া হয়। তাদের মতে, ধর্ম হচ্ছে একটি সামাজিক কাঠামোর প্রকাশ, এবং এটি একটি সম্প্রদায়ের সংশক্তি রক্ষায় ভূমিকা রাখে, তাই ধর্ম হচ্ছে পাবলিক বা সর্বজনীন। অন্যদিকে জাদু হচ্ছে একটি ব্যক্তিস্বাতন্ত্রী ক্রিয়া, আর তাই এটি প্রাইভেট বা ব্যক্তিগত।
জাদু নিয়ে প্রথম বস্তুগতভাবে পূর্ণাঙ্গ পরিসরে লেখার কৃতিত্ব দেয়া হয় ইংরেজ প্রত্নতাত্ত্বিক রালফ মেরিফিল্ডকে। তিনি ধর্ম ও জাদুর মধ্যকার পার্থক্যকে সংজ্ঞায়িত করে বলেন, “ধর্ম দ্বারা কোন অতিপ্রাকৃতিক বা আধ্যাত্মিক সত্তায় বিশ্বাস করাকে বোঝায়; জাদু বলতে বোঝায় গূঢ় শক্তিকে নিজের নিয়ন্ত্রণে আনা এবং এর মাধ্যমে বিভিন্ন ঘটনাকে প্রভাবিত করার জন্য চর্চিত আচারকে; নিয়মসিদ্ধ বা বিহিত ‘আচারসমূহ’ ধর্মীয় হতে পারে যদি এটি অতিপ্রাকৃতিক শক্তিকে সন্তুষ্ট করার জন্য বা তার আনুকূল্য লাভের জন্য করা হয়।
কিন্তু সেই আচারসমূহ জাদু সংক্রান্ত হবে যদি সেগুলো পালন করা হয় সহানুভূতির অব্যক্তিবাচক শক্তির জন্য বা অতিপ্রাকৃতিক সত্তাকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য, যার উদ্দেশ্য হচ্ছে একটি সামাজিক প্রতিষ্ঠানকে পুনরায় শক্তিশালী করা বা সামাজিক সম্পর্ক বা গতিবিধির সুযোগ সৃষ্টি করা।”
১৯৯১ সালে হেংক ভারস্নেল বলেন, ধর্ম ও জাদুর ভিন্ন উপায়ে কাজ করে, এবং মোটামুটি চারটি ক্ষেত্রে এই দুটোর মধ্যে পার্থক্য দেখানো যায়: উদ্দেশ্য – জাদুর উদ্দেশ্য হল কোন এক ব্যক্তির স্পষ্ট ও দ্রুত কোন কিছু লাভের জন্য, অন্যদিকে ধর্ম হল তুলনামূলকভাবে কম উদ্দেশ্যমূলক, আর এটি দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্যের দিকে দৃষ্টিপাত করে;
মনোভাব – জাদু হচ্ছে প্রভাব স্রৃষ্টিকারী, কারণ এখানে পুরো প্রক্রিয়াটি থাকে ব্যবহারকারীর হাতে, যাকে ‘যান্ত্রিক বলপূর্বক প্রভাব সৃষ্টিকরণ” বা ইনস্ট্রুমেন্টাল কোয়ের্সিভ ম্যানিপুলেশন বলা যায়, অন্যদিকে ধর্মীয় মনোভাব হল “ব্যক্তিগত এবং অনুরোধমূলক চুক্তি”; ক্রিয়া – জাদু একটি বিশেষ বা টেকনিকাল চর্চা যেখানে একটি কার্য সম্পাদন করার জন্য পেশাদারী দক্ষতার দরকার হয়, অন্যদিকে ধর্ম এসবের উপর নির্ভর করে না, বরং নির্ভর করে ঈশ্বরের বা ঈশ্বরদের ইচ্ছা ও অনুভূতির দ্বারা;
সামাজিক – জাদুর লক্ষ্য সমাজের স্বার্থ্যের বিরুদ্ধে যায় (এক্ষেত্রে কোন বিশেষ ব্যক্তির কোন কিছু অর্জন তাকে সমাজের অন্যদের তুলনায় অন্যায্য সুবিধা দান করে), অন্যদিকে ধর্মের তুলনামূলকভাবে অধিক হিতৈষী ও ইতিবাচক সামাজিক ভূমিকা থাকে।
“ধর্ম” ও “জাদু” শব্দদুটোর পৃথকীকরণের কার্যকারিতা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। এটাও বলা হয়েছে যে, “অতিপ্রাকৃতিক সত্তায় বিশ্বাস” নিয়ে আলোচনার জন্য “জাদু” শব্দটি পরিহার করা হলে সম্পর্কিত আচার চর্চাসমূহকে আরও ভালভাবে বোঝা যাবে। এদিকে, “ধর্ম” শব্দটির পাশাপাশি “জাদু” শব্দটির ব্যবহার হচ্ছে অতিপ্রাকৃতিক জগৎকে বুঝবার প্রচেষ্টার একটি পদ্ধতি, যদি এগুলোর বদলে অন্য কোন শব্দ আনা হয় তাহলেও।
জাদু এবং ধর্ম নিয়ে বিস্তারিত ঃ
আরও দেখুনঃ