Site icon Anthropology Gurukul [ নৃবিজ্ঞান গুরুকুল ] GOLN

জ্ঞাতিত্ব অনুসন্ধান পদ্ধতি

জ্ঞাতিত্ব অনুসন্ধান পদ্ধতি

জ্ঞাতিত্ব অনুসন্ধান পদ্ধতি

আজকের আলোচনার বিষয় জ্ঞাতিত্ব অনুসন্ধান পদ্ধতি – যা  সাম্প্রতিককালের জ্ঞাতিত্ব অধ্যয়ন এর অর্ন্তভুক্ত, জ্ঞাতি বন্ধন অনুসন্ধানের বংশবৃত্তান্ত বা কুলুজি পদ্ধতি (genealogical method) নৃবিজ্ঞানী রিভার্স উদ্ভূত। তিনি এই পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন ১৮৯৮-১৮৯৯ সালের টরেস স্ট্রেইটস অভিযানে।

পদার্থবিজ্ঞান বা রসায়নবিজ্ঞানের মত একটি নির্ভুল জ্ঞান হিসেবে জাতিতত্ত্বকে (প্রথম দিকে নৃবিজ্ঞান এই নামে পরিচিত ছিল) প্রতিষ্ঠিত করা এই পদ্ধতির লক্ষ্য ছিল। নৃবিজ্ঞানী বুকে’র মতে, এই পদ্ধতি ইংরেজ সংস্কৃতির ধ্যান-ধারণাকে অন্তর্ভুক্ত করে দাঁড় করানো হয়। রিভার্স তাঁর নোটস এ্যান্ড কোওয়েরিজ ইন এ্যান্থোপলজি বইয়ের চতুর্থ সংস্করণে (১৯১২) এই পদ্ধতির বর্ণনা দেন। এটিতে কুলুজি অনুসন্ধানরত মাঠ গবেষককে গবেষণার প্রতিটি ধাপের ব্যাপারে নির্দেশ দেয়া হয়।

জ্ঞাতিত্ব অনুসন্ধান পদ্ধতি

 

 

 

গবেষককে প্রথম যে নির্দেশ দেয়া হয় তা হ’ল, তথ্যদাতাকে জিজ্ঞেস করতে হবে তিনি যে নারীর গর্ভ হতে জন্মগ্রহণ করেছেন তাঁর নাম। দ্বিতীয়ত, তথ্যদাতাকে জিজ্ঞেস করতে হবে, তাঁর জৈবিক পিতার নাম। একই পদ্ধতি অনুসরণ করে গবেষকের জেনে নিতে হবে তথ্যদাতার ভাই ও বোনের নাম, তাঁর বাবা ও মার ভাই ও বোনদের নাম-ধাম, বয়স ইত্যাদি। এগুলো টুকে নেয়ার পর গবেষক তথ্যদাতার কাছ থেকে জানতে চাইবেন তিনি তার জৈবিক পিতা ও মাতাকে, ভাই ও বোনদের, কিভাবে সম্বোধন করেন। এই তথ্যগুলিও টুকে রাখতে নির্দেশ দেয়া হয় গবেষককে। রিভার্স গবেষককে দেশীয় জ্ঞাতি পদ জেনে নিতে উৎসাহ প্রদান করেন ঠিকই কিন্তু সতর্ক করেন যাতে সকল তথ্য (পাশ্চাত্যীয় জ্ঞাতিত্ত্বের ধারণার উপর ভিত্তি করে) জোগাড় করার পর সে প্রচেষ্টা চালানো হয় ।

 

আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

রিভার্সের কুলুজি পদ্ধতি আলোচনা প্রসঙ্গে নৃবিজ্ঞানী বারনার্ড এবং গুড বলেন, বিজ্ঞানসম্মত জ্ঞান | উৎপাদন করা ছিল বংশবৃত্তান্ত বা কুলুজি পদ্ধতির উদ্দেশ্য। রিভার্স (এবং পরবর্তী প্রজন্মের নৃবিজ্ঞানীগণ) গুরুত্ব আরোপ করেছিলেন তথ্যের মানসম্পন্ন লিপিকরণের উপর, মাঠ গবেষককে নির্দেশ ‘ দিয়েছিলেন যাতে তিনি ভুল-ভাল তথ্য বাদ দেন, সাক্ষাতকারে প্রাপ্ত তথ্যকে সত্যায়িত করেন, এবং বিভিন্ন তথ্যদাতাদের বক্তব্য জড়ো করে একটি সমন্বিত চিত্র দাঁড় করান। বুকে উল্লেখ করেন, কুলুজি পদ্ধতি অনুসারীদের প্রতি নির্দেশ ছিল, সংগৃহীত তথ্য যাতে তুলনাযোগ্য হয়। তুলনা তখনই করা সম্ভব, বুকের মতে, যখন স্থানিক ভাষাকে একটি মানসম্পন্ন বৈশ্বিক প্রকাশভঙ্গিতে অনুবাদ করা হয়।

বুকে এই পদ্ধতির তীক্ষ্ণ সমালোচনা করে বলেন: মা যেহেতু বিশ্বের সকল সমাজে সন্তান প্রসব করেন, কোন না কোন ব্যক্তি যেহেতু সকল সমাজে বাবা হিসেবে চিহ্নিত হন, সে কারণে সকল সমাজের মানুষের কুলুজি যোগাড় করা, তৈরি করা সম্ভব। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, পাশ্চাত্য সমাজে পিতা, মাতা এবং সন্তানদের মধ্যকার সম্পর্ককে যে ধরনের গুরুত্ব দেয়া হয়, ঠিক একই ধরনের গুরুত্ব অপাশ্চাত্য সমাজেও দেয়া হয়।

 

 

বুকে আরও বলেন, জ্ঞাতি বন্ধনের তথ্য এই পদ্ধতিতে যোগাড় করার ফলে পাশ্চাত্য সমাজের জ্ঞাতিত্বের ধারণা (রক্ত, বংশ, কুল) অপাশ্চাত্য সমাজে আরোপিত হয়। এই আলোচনা প্রসঙ্গে নৃবিজ্ঞানী লাডি –  াভ হলি মার্গারেট মীডের অভিজ্ঞতার কথা বলেন। মার্গারেট মীড সামোয়া দ্বীপে মাঠ গবেষণা করার সময় লক্ষ্য করেন যে, রিভার্সের কুলুজি পদ্ধতি অনুসরণ করলে সামোয়া দ্বীপবাসীরা এক ধরনের তথ্য দেন। মীড তাদের প্ররোচিত না করলে তারা তাদের পারস্পরিক সম্পর্ককে খুব ভিন্নভাবে তুলে ধরেন। এ কারণে হলি অভিমত প্রকাশ করেন যে, বংশবৃত্তান্ত পদ্ধতি জ্ঞাতিত্বের সম্পর্ক অনুসন্ধানে বংশ বা কুলকেই গুরুত্ব দেয়। এই পদ্ধতি অনুসরণ করলে জ্ঞাতিত্ব কি তা জানার পরিবর্তে, জ্ঞাতিত্ব কি হওয়া উচিত সেটি জানা যায় ।

আরও দেখুনঃ

Exit mobile version