জ্ঞাতি শ্রেণীকরণের মূলনীতি 

আজকের আলোচনার বিষয় জ্ঞাতি শ্রেণীকরণের মূলনীতি – যা সামাজিক কাঠামো ও জ্ঞাতিত্ব এর অর্ন্তভুক্ত, প্রাথমিককালের নৃবিজ্ঞানীরা নিলেক্ত বিষয়গুলোকে জ্ঞাতি শ্রেণীকরণের মূলনীতি হিসেবে চিহ্নিত করেন:

জ্ঞাতি শ্রেণীকরণের মূলনীতি

জ্ঞাতি শ্রেণীকরণের মূলনীতি 

 

১. প্রজন্ম :

 প্রজন্ম অনুসারে জ্ঞাতিদের পৃথক করা হয়ে থাকে বহু সমাজে। যেমন: বাবা এবং চাচা এরা একই প্রজন্মের; দাদা, দাদার ভাই – এরা বাবা-চাচাদের এক প্রজন্ম ঊর্ধ্বে। এবং “নিজ” (ইংরেজীতে যাকে বলা হয় Ego, ধরুন “আপনি”) হচ্ছে, তার ভ্রাতৃকুলসহ, একটি ভিন্ন প্রজন্মের সদস্য। “নিজ” হতে আরো কনিষ্ঠ প্রজন্ম হবে ভাগনা-ভাগনি ইত্যাদি।

২. আপেক্ষিক বয়স : 

ইংরেজিভাষী মানুষজনের মধ্যে আপেক্ষিক বয়সের ধারণা নেই। যেমন আছে ভারতবর্ষসহ পৃথিবীর আরো বিভিন্ন অঞ্চলে। আপেক্ষিক বয়সের একটি ভালো উদাহরণ হচ্ছে আমাদের সমাজে স্বামীর ভাইদের মধ্যেকার পৃথকীকরণ: স্বামীর ভাইদের মধ্যে বয়সানুসারে তফাৎ টানা হয়, বড় ভাইয়েরা হচ্ছেন স্ত্রী’র “ভাসুর” আর ছোট ভাইয়েরা হচ্ছেন তার “দেবর”। নৃবিজ্ঞানীদের মতে, জ্ঞাতি শ্রেণীকরণের সাথে যুক্ত হচ্ছে আচরণ। দেবরদের সাথে ঠাট্টার সম্পর্ক অনুমোদিত, পক্ষান্তরে ভাসুরের সাথে সম্পর্ক হতে হবে দূরত্বের, শ্রদ্ধার।

৩. রৈখিক বনাম পার্শ্বিক:

 রৈখিক জ্ঞাতি (lineal kin) বলতে বোঝায় তাদের যারা একটি রেখাসূত্রে বাধা। যেমন: দাদা-বাবা-ছেলে। আর পার্শ্বিক জ্ঞাতি (collateral kin, সংক্ষেপে lateral-ও বলা হয়) হচ্ছেন তারা যাদের সাথে আপনি একজন যোগসূত্রকারী জ্ঞাতি’র মাধ্যমে সম্পর্কিত। যেমন ধরুন (বাঙ্গালি মুসলমান জ্ঞাতি পদাবলী অনুসারে) আপনার দাদার ভাইয়ের সাথে আপনি সংযুক্ত আপনার দাদার মাধ্যমে। অথবা আপনার নানীর বোনের সাথে আপনি সম্পর্কিত আপনার নানীর মাধ্যমে।

বহু সমাজে, পার্শ্বিকতার ধারণা উপস্থিত, আবার বহু সমাজে এ ধারণা অনুপস্থিত। যেমন কিছু সমাজ আছে যেখানে বাবা আর চাচার মধ্যে কোন ভিন্নতা টানা হয়না। আবার একই সূত্রে মা এবং খালাদের মধ্যেও কোন পার্থক্য করা হয়না। মা এবং খালা সকলকেই “মা” হিসেবে সম্বোধন করা হয়ে থাকে।

 

আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন
আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

৪. লিঙ্গ : 

ইংরেজিভাষী সমাজে, “aunt” এবং “uncle” পদ দুটোতে যে পার্থক্য টানা হয়ে থাকে, সেটাকে লিঙ্গীয় পার্থক্য বলা হয়। একই ভাবে “brother” (ভাই) এবং “sister” (বোন) পদ  দুইটির মধ্যে লিঙ্গীয় পার্থক্য দৃশ্যমান। কিন্তু “cousin” পদটি লিঙ্গ নিরপেক্ষ। ছেলে হোক কি মেয়ে, দুজনেই “cousin”।

৫. রক্ত-সম্পর্কিত বনাম বিবাহসূত্রীয় 

এক্ষেত্রে দেখা যায় যে, রক্তসূত্রে (consanguineal) সম্পর্কিত আত্মীয় বিবাহসূত্রে (affinal) সম্পর্কিত আত্মীয় হতে ভিন্ন। যেমন, রক্ত সম্পর্ক সূত্রে যিনি “মামা”, বিবাহসম্পর্ক সূত্রে তিনি “মামা-শ্বশুর”। অথবা, “চাচী-শাশুড়ি”-কে যদিও বাঙ্গালি সমাজে সম্বোধন করা হয় “চাচী” হিসেবে, তার সাথে আত্মীয়তার ধরন যে বিবাহসূত্রীয়, এ বিষয়টাকে স্পষ্ট করার জন্য “শাশুড়ি” শব্দটি যুক্ত করা হয়ে থাকে।

ইংরেজিভাষী সমাজে, “uncle” পদ কিন্তু বিবাহ বা রক্তের এই তারতম্য ধারণ করেনা। “Uncle” বাবার দিকের রক্ত সম্পর্কীয় চাচাকেও বোঝাতে পারে, আবার বোঝাতে পারে খালুকেও যিনি কিনা রক্ত সম্পর্কের না, বরং মায়ের দিকের বিবাহ সূত্রের আত্মীয়।

৬. যোগসূত্রকারী জ্ঞাতির লিঙ্গীয় পরিচয় :

 যে সকল সমাজে পার্শ্বিক জ্ঞাতি গুরুত্বপূর্ণ, সে সকল সমাজে যোগসূত্রকারী জ্ঞাতির লিঙ্গীয় পরিচয় গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। যেমন কিনা কিছু সমাজে সমান্তরাল (parallel) কাজিনদের পৃথক করা হয়ে থাকে আড়াআড়ি (cross) কাজিনদের থেকে। সমান্তরাল কাজিন হচ্ছে বাবার ভাইয়ের এবং মার বোনের সন্তান। আড়াআড়ি কাজিন হচ্ছে বাবার বোনের এবং মার ভাইয়ের সন্তান। এই সব মূলনীতি সে সব সমাজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ যেখানে সমান্তরাল কাজিনের সাথে বিবাহ নিষিদ্ধ কিন্তু আড়াআড়ি কাজিনের সাথে বিবাহ শুধু অনুমোদিত না, এ ধরনের বিবাহকে বিশেষভাবে উৎসাহ প্রদান করা হয়ে থাকে।

 

জ্ঞাতি শ্রেণীকরণের মূলনীতি 

 

৭. কোন পক্ষের বা দিকের আত্মীয় ;

 জ্ঞাতি পদাবলীর মধ্যে যখন বিভাজন বা পৃথকীকরণ ঘটে বাবা এবং মায়ের দিকের আত্মীয়দের মধ্যে, সেটাকে নৃবিজ্ঞানীরা বলেন দ্বিখন্ডিতকরণ; জ্ঞাতি ব্যবস্থা হিসেবে সেটা পরিচিত দ্বিখন্ডিত জ্ঞাতি ব্যবস্থা (bifurcated kinship system ) ধরুন, মায়ের ভাই এবং বাবার ভাইয়ের জন্য ভিন্ন পদাবলীর ব্যবহার। হিসেবে ।

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment