Site icon Anthropology Gurukul [ নৃবিজ্ঞান গুরুকুল ] GOLN

ধর্মের সামাজিক কার্যাবলী | ধর্মের নৃতত্ত্ব

ধর্মের সামাজিক কার্যাবলী ক্লাসটিতে “ধর্মের নৃতত্ত্ব [ Anthropology of Religion ]” বিষয়ের পাঠ আলোচনা। “Social Functions Of Religion [ ধর্মের সামাজিক কার্যাবলী ]” এই ক্লাসটিতে ধর্মের বিষয়াবলী তুলে ধরা হয়েছে। নৃবিজ্ঞানের [ Anthropology ] লক্ষ্য হলো অতীত ও বর্তমানের মানব সমাজ ও মানব আচরণকে অধ্যয়ণ করা।

 

ধর্মের সামাজিক কার্যাবলী

 

সামাজিক সমস্যা প্রতিরোধে ধর্মের ভূমিকা আলোচনা করা হলো :

ক) মানসিক নির্ভরশীলতা:

ধর্ম দুর্ভিক্ষ, দারিদ্র্য রোগগ্রস্ততা ইত্যাদি থেকে মানুষকে মুক্ত করার জন্য পুনঃনিশ্চয়তা প্রদানকরে। মানুষ অনেক সময় বিভিন্ন জটিল জীবনে নিপতিত হয়। এ সমস্ত জটিলতা থেকে মানুষ মুক্তি পাবার জন্য ধর্মের আশ্রয় নেয়। ধর্ম মানুষের মানসিক শক্তি ও আনন্দ দান করে। তাই মানুষ বিপদে শক্তি ও সাহস পায়। এ উপলদ্ধি মানুষের সমস্যামুক্ত জীবনযাপনে সাহায্য করে।

খ) সামাজিক মূল্যবোধের বিকাশ:

ধর্ম মানুষের সামাজিক মূল্যবোধগুলো বিকশিত করে সমস্যামুক্ত জীবনযাপনে অভ্যস্ত করে তোলে। যেমনÑ মিথ্যা কথা বলা, দায়িত্বে অবহেলা করা, চুরি করা, মানুষের মনে কষ্ট দেওয়া ইত্যাদি মানুষের সামাজিক মূল্যবোধের পরিপন্থী কাজ। ধর্ম এসব কাজকে ধর্মবিরোধী আখ্যা দেয়। এর ফলে মানুষ সচরাচর এসব কাজে উদ্বুদ্ধ হয় না।

গ) সামাজিক ঐক্য ও শৃঙ্খলা:

ধর্ম সমাজজীবনে ঐক্য ও শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সহাযতা করে। ধর্মীয় বিশ্বাস, শিক্ষা, অনুশাসন ও আচার-অনুষ্ঠান মানুষকে সুসংগঠিত করে এবং তাদেরকে সহিষ্ণু ও সহনশীল করে তোলে। সুতরাং ধর্মের মাধ্যমে সামাজিক বিক্ষোভ, বিশৃঙ্খলা, অসন্তুষ্টি প্রভৃতি দূর হয় এবং বিভিন্ন সমস্যা প্রতিরোধ করা যায়।

 

 

ঘ) সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্ববোধ:

ধর্ম মানুষের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ ও সম্প্রীতির বন্ধনকে সুদৃঢ় করে। ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত যাতায়াতের ফলে মানুষের মধ্যে পরিচিতি, সম্পর্ক, বন্ধন, সহানুভূতি, সহযোগিতা, সহমর্মিতা, ভ্রাতৃত্ব, সম্প্রীতি ইত্যাদি গুণাবলি বিকশিত হয়। এসব গুণ সামাজিক সমস্যা প্রতিরোধে সাহায্য করে।

ঙ) সামাজিক নিয়ন্ত্রণ:

সমস্যা নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে সামাজিক নিয়ন্ত্রণ তাৎপর্যপূর্ণ। ধর্মীয় বিশ্বাসের কারণে মানুষ অন্যায় ও অসৎ কাজ থেকে বিরত থাকে। রাষ্ট্র ও আইনের চোখ ফাঁকি দিয়ে অনেক সময় অপকর্ম করলেও সৃষ্টিকর্তাকে ফাঁকি দিয়ে কোনো অপকর্ম করা সম্ভব নয়। এ বিশ্বাস ও নীতিবোধ সামাজিক সমস্যা প্রতিরোধে বিশেষভাবে সাহায্য করে।

চ) আর্তমানবতার সেবা:

আর্তমানবতার সেবায় ধর্ম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ধর্মীয় অনুপ্রেরণাতে মানুষ দুঃস্থ, অসহায়, এতিম, বিধবা, প্রবীণ, অসুস্থ, দরিদ্র প্রভৃতি শ্রেণির সহায়তায় এগিয়ে আসে। এতে পরোক্ষভাবে অনেক সমস্যার সমাধান হয়। আবার সমাজসেবার সাথে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের সুসম্পর্ক বিদ্যমান। মসজিদ, মাদ্রাসা, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডা প্রভৃতি প্রতিষ্ঠান ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালনের সাথে সাথে শিক্ষা, সচেতনতা সৃষ্টি, সমাজসংস্কার, সামাজিকীকরণ, মানবিক চাহিদা পূরণ প্রভৃতি ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করে, যা প্রকারান্তরে সামাজিক সমস্যা প্রতিরোধে সহায়ক।

ছ) শান্তির নিশ্চয়তা বিধান:

ধর্ম পার্থিবজীবন এবং পারলৌকিক জীবন এ দুটো ক্ষেত্রেই শান্তির নিশ্চয়তা বিধান করে। এজন্য ধার্মিক লোকের বৈষয়িক চাহিদা কম যা মানুষকে পরকালের সুন্দর জীবনের জন্য সৎকাজ করতে উদ্বুদ্ধ করে এবং অসৎ কাজ থেকে বিরত রাখে। মানুষের জীবনের এই যে নিশ্চয়তা তা সামাজিক সমস্যা প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে।

জ) জনকল্যাণ:

ধর্ম জনকল্যাণে ব্যাপক অবদান রাখে। সনাতন সমাজকল্যাণ প্রতিষ্ঠান যেমনÑ জাকাত, দানশীলতা, ফিতরা, ওয়াক্ফ, দেবোত্তর প্রথা, ধর্মগোলা, দাতব্য চিকিৎসালয়, লঙ্গরখানা, এতিমখানা প্রভৃতি জনকল্যাণ ও সমাজকল্যাণে অনন্য ভূমিকা পালন করে। এরূপ কল্যাণমূলক কর্মকান্ড সামাজিক সমস্যা প্রতিরোধ করে।

ঝ) অর্থনৈতিক নিরাপত্তা:

অর্থনৈতিক নিশ্চয়তার মাধ্যমে মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণ করা সম্ভব। ধর্মীয় অনুশাসন পালনের পাশাপাশি ধর্ম অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে নিযুক্ত হওয়ার জন্যও উৎসাহিত করে, যা সত্যিকার অর্থে দারিদ্র্যমুক্ত হয়ে আত্মনির্ভরশীল হওয়ার প্রচেষ্টা। মানুষ বিভিন্ন কারণে অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়তে পারে। ধর্মের প্রায়শ্চিত্তমূলক পদক্ষেপ মানুষকে অপরাধবোধ থেকে মুক্ত করে সুস্থ-স্বাভাবিক জীবনযাপনে সহায়তা করে।

উপর্যুক্ত বিশ্লেষণে প্রতীয়মান হয় যে, ধর্ম মানুষের নীতিবোধ ও নৈতিক শিক্ষার উৎস, যা মানুষের আত্মউন্নয়ন ঘটায়। যাতে মানুষ আত্মবিশ্বাসী হয়ে অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে পারে। এজন্য ধর্মের অনুসারীরা পবিত্র জীবনের আশায় নিজেদের ভালো কাজ করার প্রেরণা লাভ করে, যা সামাজিক সমস্যা প্রতিরোধে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

 

 

 

 

ধর্মের সামাজিক কার্যাবলী নিয়ে বিস্তারিত ঃ

 

আরও দেখুনঃ

Exit mobile version