আজকের আলোচনার বিষয় ধর্ম জাদু – যা জাদু ও বিজ্ঞানের সম্পর্ক এর অর্ন্তভুক্ত, ‘জাদু” শব্দটা পড়লে বা শুনলে আপনার মানসপটে কি বিশেষ কোন ছবি ভেসে ওঠে? চট করে হয়ত টিভিতে দেখা জুয়েল আইচের জাদু বা সেরকম কোন কিছুর কথা আপনার মনে আসবে। এ ধরনের জাদু-প্রদর্শনী একধরনের শিল্পমাধ্যম, যার মূল উদ্দেশ্য বিনোদন।
ধর্ম জাদু
জুয়েল আইচের মত কোন জাদুশিল্পী যখন মাথার টুপি থেকে একগাদা কবুতর বের করে দেখান, বা একজন জ্যান্ত মানুষের শরীর দ্বিখন্ডিত করে দেখান, আমরা বিশ্বাস করি না যে তারা অলৌকিক কোন ক্ষমতার অধিকারী। বরং আমরা ধরে নেই যে এ ধরনের প্রদর্শনীর পেছনে রয়েছে ‘হাতের কারসাজি’, যা আমরা খেয়াল করতে বা বুঝতে পারি না।
আমরা এ ধরনের জাদু প্রদর্শনী থেকে বিনোদন লাভ করি, জাদুকরের দক্ষতায় চমৎকৃত হই। অন্যদিকে নৃবিজ্ঞানে ‘জাদু’ ধারণাটি ব্যবহৃত হয় ব্যাপকতর পরিসরে, বিভিন্ন সমাজে প্রচলিত বেশ কিছু বিশ্বাস ও চর্চাকে বোঝানোর জন্য। যেমন, যখন আমরা পত্রিকায় পড়ি যে. বৃষ্টির আশায় কোন গ্রামের অধিবাসীরা ‘ব্যাঙের বিয়ে’র আয়োজন করেছে, যখন শুনি যে কারো মন জয়ের আশায় উদ্দীষ্ট ব্যক্তিকে বিশেষভাবে প্রস্তুতকৃত পানের খিলি খাওয়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে, বা যখন কারো ক্ষতি করার জন্য ‘বাণ মারা” হয়–এসব ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বিশ্বাস, আচরণ বা কর্মকান্ডসমুহ নৃবিজ্ঞানের ভাষায় ‘জাদু’ ধারণার আওতায় পড়ে।

(ইংরেজী magic-এর প্রতিশব্দ হিসাবে এখানে আমরা বাংলা ‘জাদু” ব্যবহার করছি। সমার্থক বা সম্পর্কিত অন্যান্য বাংলা শব্দের মধ্যে রয়েছে ভেলকি, ভোজবাজি, ইন্দ্রজাল, মায়াবিদ্যা, কুহক, ডাইনি-বিদ্যা ইত্যাদি।) মানুষ যখন বিশ্বাস করে যে বিশেষ কলাকৌশল প্রয়োগ করে অতিপ্রাকৃত শক্তি বা সত্তাসমূহকে বশে আনা যায়, সেগুলোর সাহায্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইপ্সিত ফলাফল অর্জন করা যায়, তখন এ ধরনের বিশ্বাস ও কলাকৌশলকে নৃবিজ্ঞানীরা ‘জাদু’ হিসাবে চিহ্নিত করেন। আধূনিক কালের জাদুশিল্পীরা ‘ভান করেন’ যে তারা অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী, কিন্তু বাস্তবে তারা বা তাদের দর্শকরা জানে যে চোখের সামনে যা ঘটছে তার সবই সাজানো।
অন্যদিকে বাস্তব জীবনের বিভিন্ন সমস্যা থেকে উত্তরণের আশায় বা বিশেষ কোন লক্ষ্য অর্জনের অভিপ্রায়ে যারা নিজেরা জাদুর চর্চা করে বা জাদু-বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হয়, তারা সচরাচর সত্যি সত্যিই বিশ্বাস করে যে নির্দিষ্ট কিছু কলাকৌশল যথাযথভাবে প্রয়োগ করলে ইপ্সিত ফলাফল পাওয়া যায়।
আরও দেখুনঃ