আজকের আলোচনার বিষয় নামকরণের সংকট – যা স্বাস্থ্য ভাবনা এবং স্বাস্থ্যের নৃবিজ্ঞান এর অর্ন্তভুক্ত, স্বাস্থ্য সংক্রান্ত নৃবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটা নাম একই সাথে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এর সবগুলোই মেডিক্যাল এ্যান্থ্রোপলজি অর্থেই ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এর কারণ হতে পারে এই শাখার পরিধির ব্যাপকতা, আবার দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্যও। যেমন আপনারা ইতোমধ্যেই জেনেছেন ‘ঝাড়-ফুঁক’, ‘জ্বিনে ধরা’ ইত্যাদি বিষয়ের উপর কিছু নৃবিজ্ঞানীর বেশি বেশি ঝোঁক আছে। কখনো কখনো দেখা যায়, এরকম বিষয়ের প্রতি আগ্রহের কারণে কোনও নৃবিজ্ঞানী নিজের গবেষণা কাজকে মেডিক্যাল এ্যান্থ্রোপলজির অন্তর্ভুক্ত না করে অন্য কোন নামে অভিহিত করছেন।
নামকরণের সংকট
এক্ষেত্রে বোঝার সুবিধার্থে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত নৃবৈজ্ঞানিক ভাবনা-চিন্তাকে স্বাস্থ্য-নৃবিজ্ঞানের বিষয়বস্তু হিসেবে দেখা যেতে পারে। মেডিক্যাল এ্যান্থ্রোপলজি ছাড়াও বেশ কয়েকটা নাম পাওয়া যায় জাতি-ওষুধবিদ্যা (ethnomedicine), ক্লিনিক্যাল নৃবিজ্ঞান (clinical anthropology), ওষুধের নৃবিজ্ঞান (anthropology of medicine), স্বাস্থ্য সংক্রান্ত নৃবিজ্ঞান ( anthropology of health) ইত্যাদি।
অনেক লেখক এই সব নামের সাথে শাস্ত্রের মধ্যকার সূক্ষ্ম পার্থক্য দেখানোর চেষ্টা করেছেন। যেমন, ইউরোপের বাইরের দুনিয়ায় বিভিন্ন জাতির মধ্যকার ওষুধ সংক্রান্ত জ্ঞান অনুসন্ধানকে জাতি-ওষুধবিদ্যা বলবার পক্ষপাতী তাঁরা। স্বাস্থ্য সম্পর্কে নৃবিজ্ঞানের অন্যান্য গবেষণা এবং ভাবনা-চিন্তাকে তাঁরা আলাদা করে দেখতে চান। তেমনি ক্লিনিক্যাল এ্যান্থ্রোপলজিকে দেখতে চান এমন এক শাস্ত্র হিসেবে যা ক্লিনিক্যাল কেস-এর, মানে দাওয়াইখানার রোগীর সংকট নিরসনে নৃবৈজ্ঞানিক জ্ঞান কাজে লাগাতে চায়। তাঁদের যুক্তিতে ওষুধের নৃবিজ্ঞান হচ্ছে ‘বায়োমেডিসিন’কে আরও কার্যকরী করবার একটা প্রচেষ্টা।

নামকরণের এই সংকট ভাবনা-চিন্তা ও যুক্তির পার্থক্যের কারণে অনেক জটিল হয়ে পড়েছে। আপাতত আপনাদের জন্য সে বিষয়ে আলোচনা বিস্তারিত করা হচ্ছে না। বাংলায় অনুবাদের ক্ষেত্রে সমস্যাটা বিশেষ আকার ধারণ করেছে। মেডিক্যাল এ্যান্থ্রোপলজির বাংলা অনেক নৃবিজ্ঞানী ইতোমধ্যেই করে ফেলেছেন ‘চিকিৎসা নৃবিজ্ঞান’ হিসেবে।
বাংলাতে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত নৃবিজ্ঞান কিংবা স্বাস্থ্যবিদ্যার নৃবিজ্ঞান বললে মেডিক্যাল এ্যান্থ্রোপলজির আরও সন্নিকট হয়। ক্লিনিক্যাল নৃবিজ্ঞানের বাংলা হিসেবে চিকিৎসা নৃবিজ্ঞান অর্থবহ হতে পারে বলে মনে হয়। যাই হোক, আগের অনুচ্ছেদে উল্লেখ করা নামগুলোর বাইরেও কিছু কিছু কাজ আছে যাকে একই ক্ষেত্রের অন্তর্ভুক্ত করে ভাবা হয়। উদাহরণ হিসেবে পরিবেশ নিয়ে কিছু গবেষণা কাজের কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আর্সেনিক নিয়ে গবেষণা বিশেষভাবে উল্লেখের দাবি রাখে।
তবে এটাও নিশ্চিত হওয়া দরকার, আর্সেনিক বিষয়ক গবেষণাতে একেবারে বিরুদ্ধ দুইটি পক্ষ আছে। একটি পক্ষ স্পষ্ট করে দায়ী করছে অপরিকল্পিত নলকূপ বসানোকে। অন্যপক্ষ তা করছে না। এই উদাহরণ দেবার উদ্দেশ্য হচ্ছে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত গবেষণা ও অধ্যয়নের মধ্যে যে বিতর্ক চলে সে বিষয়ে মনোযোগে রাখা।
আরও দেখুনঃ