Site icon Anthropology Gurukul [ নৃবিজ্ঞান গুরুকুল ] GOLN

পশুপালক সমাজ

আজকের আলোচনার বিষয় পশুপালক সমাজ – যা  প্রাক্ পুঁজিবাদী আর্থব্যবস্থা এর অর্ন্তভুক্ত, পশুপালক সমাজ বলতে বোঝায় তাঁদের যাঁরা খাদ্য উৎপাদনের জন্য পশু পালনের উপর অতি মাত্রায় নির্ভরশীল থাকেন। পালন করা এ সমস্ত পশুর মধ্যে আছে গরু-মহিষ, ভেড়া, ছাগল, ঘোড়া, ইয়াক, উট ইত্যাদি। যে সকল পশু একাধারে দুধ এবং মাংস সরবরাহ করতে পারে সেগুলোই পশুপালন সমাজে প্রতিপালিত হয়। সাধারণভাবে নির্দিষ্ট পরিবেশের সঙ্গে পশুপালনের সম্পর্ক রয়েছে। যেমন, ঘাসী-জমি, পাহাড়, মরুভূমি ইত্যাদি।

অর্থাৎ, যে সমস্ত এলাকাতে কৃষি বা উদ্যান-কৃষির কোন বন্দোবস্ত করা সম্ভব হয় না। কিন্তু নৃবিজ্ঞানীরা লক্ষ্য করেছেন যে, এই ধরনের খাদ্য উৎপাদনের সমাজগুলো চলে ফিরে বেড়াবার জন্য বিস্তর একটা এলাকা পেয়ে থাকে। তাছাড়া তাঁদের পোষ মানানো পশুর জন্য ঘাস পাওয়ার ব্যবস্থা ঐ জমি থেকেই হয়। পোষা জীবজন্তুর যে নামগুলো বলা হ’ল তার প্রায় সবই পুরানো দুনিয়ার। নতুন দুনিয়া, মানে অতলান্তিক মহাসাগরের ওপারে (উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশ) তেমন কোন জন্তু পোষ মানাতে পারেনি মানুষ। ব্যতিক্রম হচ্ছে পেরুতে লামা এবং আলপাচা নামের দুইটি প্রাণী।

পশুপালক সমাজ

ফলে পশুপালন সমাজ পুরানো দুনিয়া থেকেই পাওয়া যায় বলে নৃবিজ্ঞানীদের কেউ কেউ মনে করেছেন। পশুপালন সমাজের উল্লেখযোগ্য যে উদাহরণ পাওয়া যায় তা হচ্ছে: পূর্ব আফ্রিকা – গবাদিপশু বা গরু-মহিষ পালন করা হয়, উত্তর আফ্রিকা – উট পালন করা হয়, দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়া – ছাগল ও ভেড়া পালন করা হয়, মধ্য এশিয়া এবং উপ-সুমেরু এলাকায় (sub arctic ) – কারিবু এবং বল্গা হরিণ পালন করা হয়। তবে এই হিসেব নিকাশের সময় খেয়াল রাখা প্রয়োজন নৃবিজ্ঞানীরা এ সকল সমাজ-আবিষ্কার, করেছেন এমন একটা সময়কালে যখন ইউরোপে শিল্পভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

 

আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

এই সব সমাজের উদাহরণ দিয়ে প্রাচীন কালের কোন সমাজকে বুঝতে চাওয়া ঠিক হবে না। সতর্ক থাকা দরকার এই কারণে যে, অনেক নৃবিজ্ঞানীই শিকারী সমাজের পর পশুপালন সমাজকে একটা বিবর্তনবাদী দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে চেয়েছেন। অর্থাৎ তাঁরা মনে করেছেন যে, শিকারী-সংগ্রহকারী সমাজ থেকে কৃষিভিত্তিক সমাজের দিকে রূপান্তরিত হবার পথে এই ধাপটি দেখা দিয়েছে।

পশুপালন সমাজ এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় বিচরণ করে থাকে যাকে আমরা যাযাবর সমাজ বলে থাকি। তবে কোন কোন নৃবিজ্ঞানীর মতে এক এলাকা থেকে আরেক এলাকায় যাবার ব্যাপারটা দুই ভাবে ঘটে: স্থানান্তর এবং যাযাবরী। কোন পশুপালক সমাজ সারা বছর ধরে বিভিন্ন এলাকায় পশুর দলকে চরিয়ে নিয়ে বেড়ালে তাকে স্থানান্তর বলা হয়।

 

 

যে এলাকায় যখন ঘাসী জমি পাওয়া যায় সেখানে পশুর দলকে নিয়ে যান তাঁরা। সাধারণত পুরুষেরা চরানোর কাজ করে থাকেন। পূর্ব আফ্রিকার মাসাই জাতি এই ধরনের উদাহরণ। পক্ষান্তরে, যে সকল পশুপালক সমাজ সকল সদস্য, পালিত জন্তু-জানোয়ার সমেত এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে বিচরণ করে থাকে তাদেরকে যাযাবর বলা হয়। পশ্চিম ইরানের দক্ষিণ জাগরোস পর্বতমালায় বাখতিয়ারি জাতি এরকম উদাহরণ।

 

আরও দেখুনঃ

Exit mobile version