আজকের আলোচনার বিষয় ফার্মার এবং পেজেন্ট – যা কৃষক আর্থব্যবস্থা এর অর্ন্তভুক্ত, বর্তমান পৃথিবীর কৃষকদের মধ্যকার ভিন্নতাকে বোঝানোর জন্য দুটো ধারণা বা প্রত্যয় ব্যবহার করা হয় – ফার্মার এবং পেজেন্ট। চলতি বাংলায় আমরা দুটোকেই কৃষক বলে থাকি। তবে ফার্মারদের বৈশিষ্ট্য চিন্তা করলে বলা যায় বাংলাদেশে কোন ফার্মার নেই।
ফার্মার এবং পেজেন্ট
ফার্মারের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, আগেই বলা হয়েছে, এদের বিশাল পরিমাণ জমি আছে। এক জোতে জমির পরিমান কয়েক শ একর থেকে শুরু করে হাজারের উপর একর হতে পারে। তাছাড়া জমি চাষের জন্য আধুনিক প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে থাকেন। কৃষিক্ষেত্রে যা উৎপাদন করেন তাঁর পুরোটাই বাজারের জন্য। এর মানে কৃষিক্ষেত্র হতে নিজেদের খোরাকীর জন্য কিছু উৎপাদন করতে হয় না। এতবড় কৃষিক্ষেত্র তার জন্য প্রয়োজনীয়ও নয়। বরং তাঁরা উৎপাদন করেন বাজার থেকে মুনাফা অর্জনের জন্য। সেই দিক থেকে ফার্মারকে আমরা কৃষি-খামার মালিক বলতে পারি।
পক্ষান্তরে, পেজেন্ট বলতে বোঝানো হয়েছে মূলত যাঁরা ছোট জোতের মালিক। নৃবিজ্ঞানীদের পর্যবেক্ষণ হচ্ছে পেজেন্ট বা কৃষকরা অনেক ক্ষেত্রেই বাজারে মুনাফা অর্জনের জন্য উৎপাদন করে থাকেন না। তাঁরা উৎপাদন করে থাকেন জীবন ধারণের জন্য। অর্থাৎ বেঁচে থাকার জন্য যে সকল খাদ্যশস্য ও অন্যান্য কৃষিজ উৎপাদন প্রয়োজন এই কৃষকেরা সেগুলোই উৎপাদন করেন।
এই সব যুক্তি থেকেই একটা ধারণা চালু রয়েছে। তা হচ্ছে স্বপোষী আর্থব্যবস্থা (subsistence economy)। কৃষক আর্থব্যবস্থা বলতে আলাদা করে যে ব্যবস্থা বলা হয়ে থাকে তা আসলে এটা। যে সমস্ত নৃবিজ্ঞানী এই বিষয়ে কাজ করেছেন তাঁদের অনেকেই মনে করেন কৃষক আর্থব্যবস্থা সহজে পরিবর্তনীয় নয় ।
এখানে একটা ব্যাপার আলাদা করে খেয়াল রাখা দরকার আছে। নৃবিজ্ঞানীরা যে সকল সমাজে কৃষক আর্থব্যবস্থা বলতে স্বপোষী ব্যবস্থা আবিষ্কার করেছেন সেই সমাজগুলি ইউরোপের বাইরে ছিল। পক্ষান্তরে কৃষি খামারের অস্তিত্ব দেখা গেছে ইউরোপে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ উত্তর আমেরিকায়।
নৃবিজ্ঞানীদের এই পর্যবেক্ষণের সময়কালকে তাই বিবেচনায় রাখা দরকার। পৃথিবী ব্যাপী বাজার ব্যবস্থার বিস্তার কি ধরনের পরিবর্তন এনেছে তা নিয়ে ভাবতে হবে। বাজার ব্যবস্থায় মুনাফা অর্জন খুবই গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। মুনাফা অর্জনের ব্যাপারটা কেবল একটা স্থানীয় পর্যায়ে সীমিত থাকে না। এটা সারা দুনিয়া জুড়ে একটা ব্যবস্থা। ফলে সেভাবে দেখতে হবে এই বিষয়টাকে। এই বিষয় নিয়ে আলোচনার আগে কৃষক আর্থধরন (peasant ecotypes) নিয়ে সামান্য আলোকপাত করা যাক ।
আরও দেখুনঃ