আজকের আলোচনার বিষয় বিজ্ঞানের শাস্ত্র হিসেবে নৃবিজ্ঞান – যা ফলিত গবেষণায় নৃবিজ্ঞানের অন্তর্ভুক্তি এর অর্ন্তভুক্ত, ম্যালিনোস্কি যে সময়ে আলোচ্য প্রবন্ধখানি লেখেন সেই সময়ে জ্ঞানকাণ্ড হিসেবে নৃবিজ্ঞান নিয়ে একটা বিশেষ বিতর্ক চলছিল । তা হচ্ছে, নৃবিজ্ঞান বিজ্ঞান কিনা কিংবা কিভাবে নৃবিজ্ঞান একটি পরিপূর্ণ বিজ্ঞান হয়ে উঠতে পারে।
বিজ্ঞানের শাস্ত্র হিসেবে নৃবিজ্ঞান
ম্যালিনোস্কি নিজে একে বিজ্ঞান হিসেবে দেখতে চাইতেন। প্রথম উদ্ধৃতিতে লক্ষ্য করা যায়, তিনি ঔপনিবেশিক শাসকদের সহযোগিতা করবার জন্য নৃবিজ্ঞানীদের সম্ভাব্য দায়িত্ব-কর্তব্য নিয়ে বলতে গিয়ে পদার্থবিজ্ঞান এবং ভূতত্ত্ববিজ্ঞান শাস্ত্রের কথা উল্লেখ করেছেন। কিন্তু কেবল ওইটুকুই নয়। তাঁর ভাবনার আগাগোড়ায় এই তাগিদ ছিল। এবং তিনি অন্যান্য বিজ্ঞান শাস্ত্রেরও সমালোচনা করেছেন যে সকল শাস্ত্র, তাঁর মতে, যথেষ্ট কাজে আসেনি।
“…এবং এখন, কুড়ি বছর ধরে নৃবৈজ্ঞনিক কাজ করবার পর, আমি নিজেকে দেখতে পাই, বিরক্তিসমেত, মানুষের একটা কর্মসংঘ হিসেবে মানুষের বিজ্ঞানটাকে ততটাই খারাপ আর বিমানবিককারী হিসেবে তৈরি করতে প্রচেষ্ট আছি যতটা পদার্থবিজ্ঞান, রসায়নবিদ্যা কিংবা জীববিজ্ঞান করে এসেছে গত শতক ধরে কিংবা প্রকৃতির প্রতি বিপ্রাকৃতিককারী হিসেবে। সংক্ষেপে, আমি নৃবিজ্ঞানকে একটা সত্যকার বিজ্ঞান হিসেবে গড়ে তুলবার চেষ্টা করছি এবং অনিবার্যভাবে বিজ্ঞান যে সকল প্রপঞ্চ নাড়াচাড়া করে সেগুলোর মধ্যে তার সামঞ্জস্যবিধান এবং যৌক্তিকতাবিধান করতে হবে ।…”

এই উদ্ধৃতি থেকে কিছু বিষয় পরিষ্কার হয়। এর পরে যদিও তিনি বিজ্ঞান নিয়ে সতর্কতা প্রকাশ করেছেন কিন্তু একই সঙ্গে নৃবিজ্ঞানের বিজ্ঞান হয়ে ওঠাকে অনিবার্য হিসেবে দেখেছেন। আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, ম্যালিনোস্কি যখন কাজ করছেন তখন লেখাপড়ার জগতে ব্রিটেন বা অন্যান্য ইউরোপীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে সামাজিক বিজ্ঞান দাঁড়ায়নি।
ফলে বিজ্ঞান নিয়ে তাঁর এই আগ্রহের একটা ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। কিন্তু তিনি সত্যকার বিজ্ঞানের কথা বারবার জোর দিয়ে বলেছেন। তাঁর ভাবনা থেকে আমরা দেখতে পাই যে তিনি সত্যকার বিজ্ঞান বলতে বুঝিয়েছেন যার প্রয়োজন আছে, যা প্রায়োগিক। বর্তমান বিশ্বের নৃবিজ্ঞানে যে সকল বিতর্ক চালু আছে, সেখানেও এই যুক্তিটা খুবই প্রচলিত। এমনকি নৃবিজ্ঞানের বাইরেও এই যুক্তিটা জোরেসোরে শোনা যায়।
প্রয়োজনীয়তা কিংবা প্রায়োগিকতার প্রসঙ্গ ফলিত নৃবিজ্ঞানের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। ফলিত নৃবিজ্ঞানের সঙ্গে যে সকল নৃবিজ্ঞানীর নাম জড়িত তাঁদের অনেকেরই যুক্তি হচ্ছে: ফলিত নৃবিজ্ঞানের ব্যবহারিক দিক আছে, এর প্রয়োজন আছে। এর পাশাপাশি এই যুক্তিটাও চলে আসে যে ‘বিশুদ্ধ’ বিজ্ঞান সবসময়েই প্রায়োগিক, এর প্রয়োজনীয়তা আছে। আবার যে সকল নৃবিজ্ঞানী এই ব্যাপারে যথেষ্ট সমালোচনা করেন তাঁদের যুক্তি হচ্ছে: ফলিত নৃবিজ্ঞানের প্রয়োজনীয়তা আসলে কিছু সংস্থার প্রয়োজনীয়তা, পলিসি নির্ধারণের প্রয়োজনে নৃবিজ্ঞানের জ্ঞান ব্যবহার করে তারা।
আরও দেখুনঃ