আজকে আমরা আলোচনা করবো বিয়ে অজাচার নিয়ে । কিছু জ্ঞাতি সম্পর্ক আছে যাদের মধ্যে যৌন সম্পর্ক নিষিদ্ধ। কড়া নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও যদি এ ধরনের সম্পর্কের মধ্যে যৌনমিলন ঘটে, তাকে অজাচার (incest) বলা হয়। সকল সমাজে অজাচার ধারণা বিদ্যমান, অর্থাৎ, কিছু কিছু জ্ঞাতিসম্পর্কের মধ্যে যৌনমিলন নিষিদ্ধ।
বিয়ে অজাচার
সেই অর্থে, অজাচারের ধারণা বিশ্বব্যাপী (universal)। তবে, কোন্ কোন্ জ্ঞাতির মধ্যে যৌনমিলন ঘটলে তাকে অজাচার বলা হবে, সেই ধারণা সকল সমাজে এক রকম নয়। যৌনমিলনের নিষেধাজ্ঞা এবং বিবাহ-সঙ্গীর নিষেধাজ্ঞা, এ দুটো ভিন্ন জিনিস, এবং এ ব্যাপারে প্রথমেই স্পষ্ট হওয়া জরুরী।

ভিন্নতা এই যে, বিবাহের জন্য নিষিদ্ধ এমনও জ্ঞাতি থাকতে পারে যাদের সাথে যৌনমিলন ঘটলে তা অজাচার হিসেবে বিবেচিত হয় না। উদাহরণস্বরূপ, কিছু সমাজে আড়াআড়ি বিয়ে নিষিদ্ধ। কিন্তু যদি ফুপাত ও মামাত ভাই বোনের মধ্যে যৌনমিলন ঘটে, সেটি অজাচার হিসেবে বিবেচিত হয় না।
নৃবিজ্ঞানীদের মতে, সামাজিকভাবে আরেকটি ধারণার প্রচলন দেখা যায়: অ-মানানসই মিলন (mismating)। এটি কী সে ব্যাপারেও স্পষ্ট হওয়া জরুরী কারণ তা না হলে ভিন্ন ভিন্ন বিষয়গুলোকে গুলিয়ে ফেলার সম্ভাবনা থাকে । নৃবিজ্ঞানীরা অ- মানানসই মিলন বলতে সে ধরনের মিলন, বা যৌন সম্পর্ক গড়ে ওঠাকে বোঝান, যা অনুমোদিত নয় কারণ সেগুলো সামাজিক দৃষ্টিতে মানানসই নয়। কিন্তু এ ধরনের মিলন নিষিদ্ধ হওয়ার কারণ কোনভাবেই অজাচারের ধারণার সাথে সম্পর্কিত নয় । নৃবিজ্ঞানের জন্মলগ্ন হতে বহু নৃবিজ্ঞানী অজাচারের প্রসঙ্গে আগ্রহী হয়ে উঠেন এবং অজাচারের উৎস নিয়ে নানান নৃবৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দাঁড় করান। ব্যাখ্যাগুলো খুব ভিন্ন, কিছু কিছু ক্ষেত্রে পরস্পর-বিরোধী- ও।
বিয়ে অজাচার অধ্যায়ের সারাংশ:
আজকের আলোচনার বিষয় বিয়ে অজাচার অধ্যায়ের সারাংশ – যা বিয়ে অজাচার এর অর্ন্তভুক্ত, অজাচার কি, এবং অজাচার নিষেধাজ্ঞা, বিবাহ-সঙ্গী বাছাইয়ের নিষেধাজ্ঞা, মানানসই মিলনের ধারণা এগুলোর ভিন্নতা এই পাঠে আলোচিত হয়েছে। অজাচারের ধারণা অতীত এবং বর্তমানের সকল সমাজে থাকলেও, কোন্ কোন্ সম্পর্কে যৌন-মিলন নিষিদ্ধ, তার ধারণা ও অনুশীলন সকল সমাজে একরকম নয়।
এ কারণে অজাচারের কোন বিশ্বব্যাপী সংজ্ঞা এ পর্যন্ত দাঁড় করানো সম্ভব হয়নি। অনেকের মতে, ভবিষ্যতেও হবে না। অজাচার কেন নিষিদ্ধ এ বিষয়ে কেবলমাত্র নৃবিজ্ঞানীরা নন, অন্যান্য জ্ঞানকান্ডের চিন্তকেরাও মনোনিবেশ করেছেন, তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা তৈরির প্রচেষ্টা চালিয়েছেন।
এই ব্যাখ্যাগুলো গুরুত্ব দিয়েছে অজাচার-নিষেধাজ্ঞার উৎসের উপর। ব্যাখ্যাদানকারীরা এপর্যন্ত অতীত এবং বর্তমান সকল সমাজের ক্ষেত্রে কার্যকরী একটিমাত্র উৎস খোঁজার চেষ্টা করেছেন। এই ব্যর্থতা থেকে বর্তমানের নৃবিজ্ঞানীদের ধারণা জন্মেছে যে, নির্দিষ্টতার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে অজাচারের কারণ খোঁজা অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ ।
আরও দেখুনঃ