আজকের আলোচনার বিষয় ব্রনিসলো ম্যালিনোস্কি : সর্বজনীন পিতৃত্ব। ব্রনিস্ল ক্যাস্পার ম্যালিনোস্কি ১৮৮৪ সালে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। বাবা ছিলেন স্লাভিক ভাষার একজন অধ্যাপক। ম্যালিনোস্কি ক্রাকহফে পদার্থবিদ্যা এবং গণিতে স্নাতক সম্পন্ন করেন। ১৯১০ সালে তিনি লন্ডন স্কুল অব ইকনমিকসে তিনি স্নাতক সম্পন্ন করেন। সেখানে তার সুপারভাইজার ছিলেন সেলিম্যান। এখান থেকেই তিনি নিবিড়ভাবে এথনোগ্রাফি করার প্রেরণা পান। ম্যালিনোস্কিই নৃবিজ্ঞানে ফিল্ডওয়ার্ক বা মাঠকর্ম প্রবর্তন করেন।
ম্যালিনোস্কি ট্রবিয়ান্ডদের উপর করা গবেষণায় নিবিড়ভাবে তাদের জীবন যাত্রা প্রত্যক্ষ করেছিলেন। সেখানে তিনি সংস্কৃতির বিভিন্ন উপাদানগুলো কিভাবে আন্তঃসম্পর্কিত তা দেখার চেষ্টা করেছেন। তারপর তাদের ধর্ম, অর্থনীতি, যাদু প্রভৃতির কার্যক্রম ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছেন। আবার এসব বিষয়ে তিনি স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মতামত নিয়ে তাদের দৃষ্টিকোণ থেকেও দেখার চেষ্টা করেছেন।
‘জাদু’ ম্যালিনস্কি তার ক্রিয়াবাদী ব্যাখ্যা দেয়ার চেষ্টা করেছেন। তিনি দেখান ট্রব্রিয়ান্ড দ্বীপের মানুষজন তাদের জীবিকা নির্বাহের জন্য মাছ শিকারের সময়, অসুস্থতা নিরাময়ের ক্ষেত্রে, কৃষি প্রভৃতিসহ প্রায় সকল ক্ষেত্রেই জাদুর আশ্রয় নিয়ে থাকে। তিনি দেখান সাধারণত যেসব ঘটনা তারা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না, কেবল সেসব কাজের ক্ষেত্রে তারা জাদুর সাহায্য নিয়ে থাকে। ম্যালিনস্কির মতে এটি তাদের মানসিক শক্তি যোগাতে সাহায্য করে। দেখা গেছে যখন তারা সমুদ্রের কাছে কোন খাড়িতে মাছ ধরতে যায় তখন তারা কোন আচার বা জাদু পালন করে না। কিন্তু যখন তারা গভীর সমুদ্রে মাছ শিকার করতে যায় তখন তারা জাদু কেন্দ্রিক বিভিন্ন আচার পালন করে থাকে। এর কারণ সমুদ্রে মাছ ধরতে গেলে যে বিপদের আশঙ্কা থাকে, জাদুচর্চা সেক্ষেত্রে একটি মানসিক নিশ্চয়তা প্রদান করে।
সর্বজনীন পিতৃত্ব লিঙ্গীয় ও শ্ৰেণী সম্পৰ্ক এর অর্ন্তভুক্ত, আরো বহু নৃবিজ্ঞানীদের মতন ব্রিটিশ নৃবিজ্ঞানী ব্রনিসলো ম্যালিনোস্কিও সর্বজনীন সত্য উদঘাটনে রত ছিলেন। এই প্রসঙ্গে তিনি “বৈধতার মূলনীতি”দাঁড় করান।
ব্রনিসলো ম্যালিনোস্কি : সর্বজনীন পিতৃত্ব
ম্যালিনোস্কির বক্তব্য ছিল: বিশ্বের সকল সমাজে সন্তান এবং তার মাতার সামাজিক মর্যাদা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সন্তানের পিতার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। পিতাবিহীন একটি সন্তান এবং তার মা, সামাজিক দৃষ্টিতে অপূর্ণাঙ্গ এবং অবৈধ হিসেবে বিবেচিত। সমাজের দৃষ্টিতে পূর্ণাঙ্গ হিসেবে বিবেচিত হতে হলে, সমাজের কাছে গ্রহণযোগ্য হতে হলে, পিতার উপস্থিতি অপরিহার্য।
পিতার উপস্থিতি নিশ্চিত করে তোলে একটি সন্তান ও তার মায়ের পূর্ণাঙ্গ আইনী মর্যাদা। ম্যালিনোস্কি গবেষণা করেছিলেন মাতৃতান্ত্রিক ট্রব্রিয়ান্ড দ্বীপবাসীদের মাঝে। গবেষণা শেষে তিনি যুক্তি দাঁড় করিয়েছিলেন যে, ট্রব্রিয়ান্ড দ্বীপবাসীদের কাছে মাতৃত্ব হচ্ছে নিতান্ত একটি জৈবিক সম্পর্ক। অপর পক্ষে, পিতৃত্ব হচ্ছে একটি সামাজিক সম্পর্ক।
ম্যালিনোস্কির “বৈধতার মূলনীতি”র অপর নাম হচ্ছে “সামাজিক পিতৃত্ব”- “-এর ধারণা। নৃবিজ্ঞানে এটা | ব্যবহার করা হয়ে থাকে জৈবিক এবং সামাজিক – এই দুই ধরনের পিতৃত্বের পার্থক্য বোঝানোর জন্য। – জৈবিক পিতা হচ্ছেন তিনি যিনি সন্তানের রক্ত-সম্পর্কিত পিতা। আর সামাজিক পিতা হচ্ছেন তিনি যিনি সামাজিকভাবে সন্তানের পিতা হিসেবে পরিচিত।
ম্যালিনোস্কির প্রধান যুক্তি হচ্ছে, এই দুইজন একই ব্যক্তি হওয়ার চাইতে আরো গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে একটি শিশুর সামাজিকভাবে স্বীকৃত পিতা আছে কিনা। জৈবিক পিতার চাইতে সামাজিকভাবে স্বীকৃত একজন পিতার প্রয়োজন বেশি, সকল সমাজে, একইভাবে। তার কারণ, পিতার উপস্থিতির উপর নির্ভর করছে সমাজে সেই সন্তানটির মর্যাদা, অবস্থা, এবং অধিকার। ম্যালিনোস্কির প্রধান বক্তব্য ছিল: সামাজিক বৈধতা পাবার জন্য প্রতিটি সন্তানের পিতা এবং মাতা – দুজনকেই প্রয়োজন ।
আরও দেখুনঃ