নৃবিজ্ঞানে সামাজিক বৈষম্য | নৃবিজ্ঞান

নৃবিজ্ঞানে সামাজিক বৈষম্য ক্লাসটিতে “What is social inequality ?, different forms of social inequality, the study of social inequality in anthropology” বিষয়াবলী তুলে ধরা হয়েছে। “সামাজিক অসমতা কি ?, সামাজিক অসমতার বিভিন্ন রূপ, নৃবিজ্ঞানে সামাজিক অসমতার অধ্যয়ন” এই সকল বিষয়াবলী জানতে “Social Inequality In Anthropology [ নৃবিজ্ঞানে সামাজিক বৈষম্য ]” ক্লাসটি আপনাদের সহযোগিতা করবে।

 

নৃবিজ্ঞানে সামাজিক বৈষম্য

 

বিভিন্ন জ্ঞানশাস্ত্রে সাধারণত ‘তত্ত্ব’ ও ‘তাত্ত্বিক দৃষ্টিভঙ্গি’- এই দুইয়ের মাঝে ফারাক টানা হয়৷ তাত্ত্বিক দৃষ্টিভঙ্গি বলতে সাধারণত কোন গ্র্যান্ড থিওরিকে বোঝানো হয়, যা আসলে দুনিয়াকে দেখার এবং তাকে উপলব্ধি করার একটি বিস্তৃত  দৃষ্টিভঙ্গি। এই বিস্তৃত দৃষ্টিভঙ্গি সাধারণত প্যারাডাইম নামে পরিচিত৷

 

 

প্রত্যেক জ্ঞানশাস্ত্রের একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো বিভিন্ন প্যারাডাইমের অস্তিত্ব এবং এদের রূপান্তর। বিজ্ঞানের দার্শনিক থমাস কুনের ১৯৬২ সালে প্রকাশিত বই ‘দি স্ট্রাকচার অব সায়েন্টিফিক রেভ্যুলুশান’ জ্ঞানশাস্ত্রে প্যারাডাইমের রূপান্তর বুঝতে বিশেষভাবে সহায়ক।

কুনের বিষয়বস্তু প্রাকৃতিক বিজ্ঞান হলেও তার তত্ত্ব সামাজিক বিজ্ঞানীদের নিজেদের শাস্ত্রকে বুঝতে সাহায্য করেছে৷ কুনের মতে, প্যারাডাইম হলো একটি বৃহত্তর তত্ত্ব যার অধীনে বিভিন্ন ক্ষুদ্র তত্ত্ব কাজ করে৷ কুন দেখিয়েছেন যে, এক একটি ঐতিহাসিক অবস্থায় জীববিদ্যা, পদার্থবিদ্যা, রসায়নবিদ্যা প্রভৃতি নানা বিষয়ে বিজ্ঞানের অগ্রগতি ঘটে এক একটি প্যারাডাইমকে আশ্রয় করে, এবং সেই প্যারাডাইমকে ভিত্তি করেই গড়ে ওঠে একেকটি বৈজ্ঞানিক গোষ্ঠী বা ঘরানা৷

কিন্তু একটা সময় আসে যখন একটি প্যারাডাইমের অন্তর্গত ছোট তত্ত্বগুলো আর ঐ একই প্যারাডাইম থেকে উদ্ভূত নতুন প্রশ্ন বা সমস্যার সমাধান দিতে পারেনা, তখন ঐ প্যারাডাইমে একটি সংকট ঘটে এবং এই সংকটের অনিবার্য পরিণতি হলো নতুন প্রশ্নের উত্তর বা উত্তর খোঁজার পক্ষে অনুকূল এমন কোন তত্ত্ব দ্বারা প্যারাডাইমের রূপান্তর অথবা এই নতুন ও আরও বড় তত্ত্বে পূর্ববর্তী প্যারাডাইমের অন্তর্ভুক্তিকরণ৷

শাস্ত্র হিসেবে নৃবিজ্ঞানও নানা প্যারাডাইমের জন্ম দিয়েছে এবং বিভিন্ন প্যারাডাইম রূপান্তরের মধ্য দিয়ে অগ্রসর হয়েছে। ঊনবিংশ শতকে একটি জ্ঞানশাস্ত্র হিসেবে নৃবিজ্ঞান যখন বিকশিত হচ্ছিল তখন এই শাস্ত্রের প্রভাবশালী তাত্ত্বিক দৃষ্টিভঙ্গি বা প্যারাডাইম ছিলো সামাজিক বিবর্তনবাদ। এই তত্ত্ব একরৈখিক বিবর্তনবাদ নামেও পরিচিত৷ এই তাত্ত্বিক দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী, সকল সমাজ ও সংস্কৃতি পর্যায়ক্রমে ধাপে ধাপে একটি আদিম বা সরল অবস্থা থেকে ক্রমশই জটিল থেকে জটিলতর স্তরে উন্নীত হয়,  এবং প্রত্যেক সমাজই  নির্দিষ্ট কয়েকটি সর্বজনীন স্তরের মধ্য দিয়ে অগ্রসর হয়৷

সামাজিক বিবর্তনবাদের স্বর্ণযুগ বলা হয় ১৮৬০ থেকে ১৮৯০ পর্যন্ত সময়কালকে। পরবর্তী সময়ে এই তত্ত্বের প্রভাব কমলেও এটা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, সাংস্কৃতিক নৃবিজ্ঞানের প্রথম পঞ্চাশ বছরে এই তত্ত্ব একচ্ছত্র আধিপত্য স্থাপন করেছিল। এই সময়ে বিবর্তনবাদী মডেল সমাজের সার্বিক পরিবর্তনের এবং সমাজের সব অঙ্গপ্রতিষ্ঠানের তথা বিবাহব্যবস্থা, পরিবার, অর্থনীতি, ভাষা, ধর্ম ও রাষ্ট্রের উদ্ভব, বিকাশ ও ক্রমপরিবর্তনের ধারাকে ব্যাখ্যা করার ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে প্রয়োগ করা হয়।

ঊনবিংশ শতকের নৃবিজ্ঞানে বিবর্তনবাদের প্রাধান্যকে কোনভাবেই জ্ঞানজগতে একটি ‘নতুনত্ব’ বলে আখ্যায়িত করা যাবে না। এর কারণ,  বিবর্তনবাদী ধ্যানধারণা ইউরোপীয় বুদ্ধিবৃত্তিক জগতে নতুন কিছু ছিল না। সপ্তদশ শতকে ইতালীয় দার্শনিক ভিকো বিশ্বজনীন ইতিহাস লেখার প্রচেষ্টায় বিবর্তনবাদী সামাজিক প্রগতির ধারণা ব্যক্ত করেন৷ ভিকো বিশ্বের ইতিহাসকে তিনটি স্তরে বিভক্ত করেছিলেন এবং সামাজিক অগ্রগতি বিষয়ক এই প্রস্তাবনা দেন যে, , প্রতিটি সমাজ নির্দিষ্ট ও সংজ্ঞায়িত বৈশিষ্ট্যের তিনটি স্তরের মাধ্যমে এগোয়৷ ভিকোর মতে, প্রথম স্তর ছিল ঈশ্বরের যুগ, যখন মানুষ প্রকৃতি পূজা করতো।

তারপর আসে বীরের যুগে, যখন সামাজিক অসাম্যের কারণে সমাজে অশান্তি বিরাজমান ছিলো৷ ভিকোর কাছে সামাজিক অগ্রগতির চূড়ান্ত যুগ হলো সেই ভবিষ্যৎ কাল যখন সমাজকে পরিচালনাকারী শক্তি হবে যুক্তি এবং এই যুগকে ভিকো আখ্যায়িত করেছেন যুক্তির যুগ হিসেবে৷ ভিকোর মতে, এই যুগগুলো ইহজাগতিক ও মানবিক কর্মপ্রচেষ্টার ফসল৷ আলোকায়নের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিলো বিশ্বজনীন ইতিহাস রচনার প্রচেষ্টা।

 

সামাজিক বৈষম্য

 

বিশ্বজনীন ইতিহাস রচনায় যারা নিয়োজিত ছিলেন, তাদের মধ্যে অ্যান রবার্ট জ্যাক টারগো, অ্যাডাম ফারগুসন, জন মিলার ও উইলিয়াম রবার্টসন প্রমুখের লেখনীতে প্রাক-নৃবৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় পাওয়া যায়৷ অ্যাডাম ফার্গুসন এমনকি অসভ্যতা, বর্বরতা ও সভ্যতার সুপরিচিত ছাঁচটাও ব্যবহার করেছিলেন, যা উনবিংশ শতকে মূলধারার নৃবিজ্ঞানের কেন্দ্রীয় প্রত্যয় হয়ে দাঁড়ায়। একটি গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য বাদে ধ্রুপদী সাংস্কৃতিক বিবর্তনবাদকে একদিক থেকে আলোকায়ন ইতিহাসবাদের ধারাবাহিকতা বা সম্প্রসারণ বলা যেতে পারে।

গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্যটি হলো, অষ্টাদশ শতকের বিশ্বজনীন ইতিহাসবিদরা যেখানে আধুনিক পাশ্চাত্যের ইতিহাস লিখেছেন, সেখানে উনবিংশ শতকের সাংস্কৃতিক নৃবিজ্ঞানীদের আলোচনার কেন্দ্রীয় বিষয়বস্তু ছিলো প্রাগৈতিহাসিক কালের অ-পাশ্চাত্য জনগোষ্ঠী।

 

নৃবিজ্ঞানে সামাজিক বৈষম্য নিয়ে বিস্তারিত ঃ

 

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment