Site icon Anthropology Gurukul [ নৃবিজ্ঞান গুরুকুল ] GOLN

স্বাস্থ্য ভাবনা এবং স্বাস্থ্যের নৃবিজ্ঞান

স্বাস্থ্য ভাবনা এবং স্বাস্থ্যের নৃবিজ্ঞান

আজকে আমাদের আলোচনা স্বাস্থ্য ভাবনা এবং স্বাস্থ্যের নৃবিজ্ঞান নিয়ে। আপনারা আগের দুটো পাঠ থেকেই জানেন কিভাবে উন্নত বিশ্বের লেখাপড়ার জগতে গরিব বিশ্বের উন্নয়ন ধারণা গড়ে উঠেছে এবং সেখানে কি ধরনের বিতর্ক চলমান। উন্নয়ন ধারণাতে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত ভাবনা একেবারে কেন্দ্রীয় জায়গায় রয়েছে।

স্বাস্থ্য ভাবনা এবং স্বাস্থ্যের নৃবিজ্ঞান

 

 

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকেই তৃতীয় বিশ্বের জনগণের স্বাস্থ্য বিষয়ে নানান আলাপ আলোচনা হতে থাকে। এই সব দেশের সরকারকে স্বাস্থ্য বিষয়ে সুনির্দিষ্ট নীতিমালার জন্য চাপ দেয়া হয়। আপাত দৃষ্টিতে মহান এই পদক্ষেপের ব্যাপারে কতকগুলো প্রশ্ন তোলা জরুরী। সর্বপ্রথম যে ব্যাপারটা লক্ষ্যণীয় তা হচ্ছে, জনসংখ্যাকে গরিব বিশ্বের প্রধান সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করা হ’ল। ফলে স্বাস্থ্য গবেষণার সিংহভাগ জুড়ে রয়েছে জনসংখ্যা বিষয়ক গবেষণা। এর পাশাপাশি কিছু রোগবালাই নিয়ে গবেষণা হতে থাকল। এখানেও লক্ষ্য করবার মত বিষয় হচ্ছে পরিচ্ছন্নতার ধারণা।

অর্থাৎ, কিছু রোগকে গরিব বিশ্বের ক্ষেত্রে বাছাই করা হ’ল যেগুলোর মূল কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে পরিচ্ছন্নতার (hygienic) ধারণার অভাব। উদাহরণ হিসেবে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে উদরাময় বা পেটের ব্যামো, আফ্রিকার ক্ষেত্রে ম্যালেরিয়ার কথা উল্লেখ করা যায়। পরিবেশের প্রসঙ্গও এসেছে, তবে এর সাথে পরিচ্ছন্নতার ধারণা সম্পর্কিত। রাসায়নিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা, পরিবেশের উপর শিল্প-কল-কারখানার আক্রমণাত্মক প্রভাব কিংবা দারিদ্র্যের মত বিমূর্ত বিষয়াদির তুলনায় ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতার বোধ ও সচেতনতাকে অধিক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।

 

আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

এসকল গবেষণায় নৃবিজ্ঞানীদের অংশগ্রহণ ছিল বিষয়গুলো আবিষ্কারের ক্ষেত্রে। এসকল বিষয়ে কিছু আলোকপাত করা হবে এই পাঠে। তবে আরেকটি বিষয় না উল্লেখ করলেই নয়। তৃতীয় বিশ্বে অনেকগুলো স্বাস্থ্য গবেষণা কেন্দ্র গড়ে উঠেছে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সামরিক ভূমিকার মধ্য দিয়ে। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় আইসিডিডিআর, বি – এর কথা। শুরুতে এর নাম অবশ্য ভিন্ন ছিল। এই প্রতিষ্ঠানটি তৈরী হয় সিয়াটো (SEATO : সাউথ ইষ্ট এশিয়ান ট্রিটি অর্গানাইজেশন)- এর প্রত্যক্ষ ভূমিকার মাধ্যমে। সিয়াটো একটি সামরিক জোট।

এই বিষয়গুলো নিয়ে গভীরভাবে না চিন্তা করলে বাংলাদেশের মত একটা গরিব দেশের স্বাস্থ্যনীতি নিয়ে কি ধরনের তৎপরতা চলছে তা অনুমান করা সম্ভব নয়। সৌভাগ্যের বিষয়, কিছু নৃবিজ্ঞানীই আবার আমাদের এ সকল বিষয়ে সতর্ক করে দিচ্ছেন। এই বিষয়গুলো নিয়ে গোড়াতেই আলাপ করে নেবার দরকার আছে। কারণ, অনেকেই মনে করেন যে মেডিক্যাল এ্যান্থ্রোপলজি হচ্ছে আসলে স্বাস্থ্য সম্পর্কিত নৃবিজ্ঞান বা সংক্ষেপে স্বাস্থ্য-নৃবিজ্ঞান, সেটা বাংলা নামকরণ থেকেই আপনারা বুঝতে পারছেন। ফলে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত ধারণা কিভাবে ক্রিয়াশীল তা বোঝা জরুরী হয়ে ওঠে। এখানে দুয়েকটি বিষয়ে পরিষ্কার হওয়া প্রয়োজন।

এক কোনও একটা রাষ্ট্র বা সমাজে জনস্বাস্থ্যের (public health) ধারণা কাজ করছে মানেই এই নয় যে সেখানে জনগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষিত আছে। কিংবা কোনও একটা সরকার জনস্বাস্থ্যের ঘোষণা দিচ্ছে মানেই এই নয় সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। দুই, স্বাস্থ্য সংক্রান্ত নৃবিজ্ঞানের কাজ কেবলমাত্র জনস্বাস্থ্য

 

 

প্রসঙ্গে নয়। এখানে জনস্বাস্থ্যের আলাপ এসেছে কারণ বিভিন্ন সমাজে বিশেষত গরিব দেশগুলোর – সমাজে – উন্নয়ন প্রসঙ্গে জনস্বাস্থ্য কেন্দ্রীয় একটা বিষয় হিসেবে দেখা দিয়েছে এবং এই সংক্রান্ত গবেষণা জরুরী হয়ে দেখা দিয়েছে। ফলিত নৃবিজ্ঞানী হিসেবে স্বাস্থ্য-নৃবিজ্ঞানীরা (কোথাও কোথাও বাংলায় “চিকিৎসা নৃবিজ্ঞান’ বলা হয়েছে) প্রাথমিকভাবে এই পটভূমিতেই তাঁদের কাজের বিস্তার ঘটিয়েছেন।

 

 

 

স্বাস্থ্য ভাবনা এবং স্বাস্থ্যের নৃবিজ্ঞান অধ্যায়ের সারাংশ:

আজকের আলোচনার বিষয় স্বাস্থ্য ভাবনা এবং স্বাস্থ্যের নৃবিজ্ঞান অধ্যায়ের সারাংশ – যা স্বাস্থ্য -ভাবনা এবং স্বাস্থ্যের -নৃবিজ্ঞান এর অর্ন্তভুক্ত, স্বাস্থ্য সংক্রান্ত গবেষণা প্রতিষ্ঠিত হবার প্রেক্ষাপট হচ্ছে উন্নয়ন ভাবনার বিকাশ এবং গরিব বিশ্বের স্বাস্থ্য প্রসঙ্গ এই ভাবনায় অন্তর্ভুক্ত হওয়া।

 

 

এই প্রেক্ষাপটে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত নৃবিজ্ঞান ফলিত নৃবিজ্ঞানের একটা শাখা হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। বাংলায় কেউ কেউ একে চিকিৎসা নৃবিজ্ঞান বলেছেন। এর পরিধি ব্যাপক এবং এর বিষয় বহুবিধ। প্রধানত কয়েকটা শিরোনামে নৃবিজ্ঞানের অধ্যয়নে স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সম্বন্ধে ভাবনা ধরা পড়ে: জাতি-ওষুধবিদ্যা, স্বাস্থ্য সংক্রান্ত নৃবিজ্ঞান, ক্লিনিক্যাল নৃবিজ্ঞান, ওষুধের নৃবিজ্ঞান ইত্যাদি। এই শাখার ভিতরে নানাবিধ বিতর্ক বিদ্যমান। এর মধ্যে প্রধান হচ্ছে: পশ্চিমা চিকিৎসা জ্ঞান চূড়ান্ত কিছু কিনা। সেই সূত্রে পশ্চিমা আধুনিক চিকিৎসা জ্ঞান নিয়ে এই শাখা ব্যাপক অনুসন্ধানী অধ্যয়ন চালাচ্ছে।

 

আরও দেখুনঃ

Exit mobile version