Site icon Anthropology Gurukul [ নৃবিজ্ঞান গুরুকুল ] GOLN

আদিম সমাজের হাতিয়ার, শিকার কৌশল যানবাহন

আদিম সমাজের হাতিয়ার, শিকার কৌশল যানবাহন

মানুষের সভ্যতার বিকাশ শুরু হয়েছিল প্রকৃতির সাথে সংগ্রাম করে বেঁচে থাকার মধ্য দিয়ে। খাদ্য সংগ্রহ, আত্মরক্ষা, আশ্রয় তৈরি এবং পরিবহনের প্রয়োজন মেটাতে আদিম মানুষ হাতিয়ার, শিকার কৌশল ও প্রাথমিক যানবাহনের উন্নয়ন ঘটায়। এই বিকাশ ধাপে ধাপে মানবসভ্যতার মূল ভিত গড়ে তোলে।

আদিম সমাজের হাতিয়ার, শিকার কৌশল যানবাহন

 

 

আদিম হাতিয়ারের উৎপত্তি ব্যবহার

শিকারী মানুষ প্রথমে পাথর ব্যবহার করে ধারালো প্রান্ত তৈরি করত। হাতকুড়াল, ছুরি, বল্লম প্রভৃতি ছিল তাদের প্রধান অস্ত্র। উচ্চ পুরোপলীয় যুগে (Upper Palaeolithic) মানবজাতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার ছিল বর্শা নিক্ষেপক যন্ত্র (Spear-thrower) এবং তীরধনুক (Bow & Arrow)

এভাবে মানুষ বিজ্ঞানের তত্ত্ব না জেনেও পদার্থবিদ্যা যন্ত্রবিদ্যার মূলনীতি ব্যবহার করেছিল।

 

যন্ত্র নির্মাণ হাতিয়ারের বৈচিত্র্য

মানুষ ধীরে ধীরে হাতিয়ার নির্মাণের হাতিয়ারও তৈরি করতে শুরু করে।

ম্যাগদালেনীয় মানুষ (Magdalenian) শিল্প ও হাতিয়ার নির্মাণে বিশেষ দক্ষতা অর্জন করেছিল, যা পরে কেবল এস্কিমোরা পুনরায় প্রদর্শন করতে সক্ষম হয়।

 

কাঠের হাতিয়ার সমন্বিত অস্ত্র

পাথরের আগেই মানুষ কাঠের হাতিয়ার ব্যবহার করত।

মধ্যোপলীয় যুগে (Mesolithic Age) বনভূমির বিস্তার হওয়ায় কাঠের কাজের ব্যাপক প্রসার ঘটে।

 

যানবাহনের উদ্ভব

আদিম মানুষ পরিবহনের প্রয়োজন থেকে প্রাথমিক যানবাহন তৈরি করে:

এখনও বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে তালগাছ কেটে তৈরি করা ডোঙ্গা নৌকার ঐতিহ্য দেখা যায়।

 

শিকার কৌশল ফাঁদের ব্যবহার

আদিম মানুষ শক্তিশালী প্রাণী শিকারের জন্য ফাঁদ ব্যবহার করতে শিখেছিল।

আজও কঙ্গোর পিগমিরা গর্ত খুঁড়ে বল্লম হাতে বসে থাকে এবং গন্ধ ঢাকতে নিজেদের গোবর দিয়ে আড়াল করে।

 

আধুনিক আদিবাসী শিকার কৌশলের সঙ্গে মিল

বর্তমানের অনেক আদিবাসী সমাজের শিকার পদ্ধতি থেকে আমরা আদিম মানুষের জীবনযাত্রার ধারনা পাই।

এগুলো প্রমাণ করে যে, পুরোপলীয় যুগের অনেক কৌশল আজও প্রায় অপরিবর্তিতভাবে টিকে আছে।

 

পশুর ছদ্মবেশ আগুনের ব্যবহার

উত্তর আমেরিকার আদিম শিকারীরা বাইসন শিকারের সময় বাইসনের চামড়া, আর হরিণ শিকারের সময় হরিণের চামড়া গায়ে দিয়ে পশুর পালের কাছে যেত। এভাবে আত্মগোপন করে তারা শিকার ধরতে সক্ষম হতো। এতে বোঝা যায়, আদিম শিকারীদের পশুর স্বভাব, গন্ধ এবং আচরণ সম্পর্কে গভীর জ্ঞান ছিল।

ফাঁদের পাশাপাশি তারা পরিবেশকেও কাজে লাগাত। অনেক সময় ঝোপঝাড় বা ঘাসে আগুন লাগিয়ে পশুদের তাড়িয়ে ফাঁদে ফেলত। আফ্রিকায় হাতি শিকারে শিকারীরা পুরো পালকে ঘিরে আগুন লাগাত এবং আগুনের বেড়াজালে আটকা পড়া হাতিগুলোকে বর্শা ও বল্লম দিয়ে হত্যা করত। একইভাবে উত্তর আমেরিকার শিকারীরা বাইসন শিকারে এই কৌশল ব্যবহার করত।

 

মাছ শিকার প্রাথমিক প্রযুক্তি

শিকার কেবল স্থলজ প্রাণীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। নদী, হ্রদ ও সাগরের ধারে বসবাসকারী সমাজ মাছ শিকারের উপরও নির্ভরশীল হয়ে ওঠে।

প্রায় আট থেকে দশ হাজার বছর আগেকার একটি মধ্যোপলীয় যুগের জালের নিদর্শন পাওয়া গেছে। এর মানে, মানুষ ততদিনে সুতলি বা দড়ি বানানোর প্রযুক্তি আয়ত্ত করেছিল। তবে, প্রাথমিকভাবে এই দড়ি হয়তো চামড়ার ফালি বা গাছের আঁশ থেকে তৈরি হত।

একটি পুরোপলীয় যুগের পাথরের ছবিতে দেখা যায়, একটি মেয়ে দড়ির মই বেয়ে মৌচাক থেকে মধু সংগ্রহ করছে। এটিও প্রমাণ করে যে মানুষ তখন থেকেই বোনা বা বাঁধাই করার দক্ষতা অর্জন করেছিল।

 

মাছ ধরার চাঁই অন্যান্য কৌশল

পুরান পাথরের যুগে মানুষ মাছ ধরার জন্য চাঁই আবিষ্কার করেছিল। বাঁশ, বেত কিংবা গাছের ডাল দিয়ে তৈরি এসব ফাঁদে মাছ সহজে ধরা যেত। আশ্চর্যের বিষয়, ইউরোপের উত্তরাঞ্চলের অনেক স্থানে এখনও একই ধরনের ঐতিহ্যবাহী চাঁই ব্যবহার করা হয়।

 

নৌকা ভেলার উদ্ভব

মাছ শিকারের প্রসারের সাথে সাথে পরিবহনের প্রয়োজন তৈরি হয়। যদিও পুরোপলীয় যুগে নৌকা আবিষ্কৃত হয়েছিল কিনা তার সরাসরি প্রমাণ নেই, তবে জাল টানতে এবং নদীতে মাছ ধরতে নৌকার প্রয়োজন ছিল—এ বিষয়ে গবেষকরা একমত।

এইসব উদ্ভাবন মানুষকে শুধু মাছ শিকারেই নয়, দীর্ঘ পথ অতিক্রম ও পরিবহনে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে দেয়।

 

 

প্রায় সাড়ে আট হাজার বছর আগের একটি ডোঙ্গা নৌকা। হল্যাণ্ডে এটি পাওয়া গেছে। গাছের গুড়ির খুদে এ নৌকা তৈরি করা হত।

 

প্রাচীন নৌকা পরিবহন কৌশল

প্রায় সাড়ে আট হাজার বছর আগেকার একটি ডোঙ্গা নৌকা হল্যান্ডে পাওয়া গেছে। এটি গাছের গুঁড়ি খুঁড়ে তৈরি করা হয়েছিল। এ থেকেই বোঝা যায়, মানুষ তখন থেকেই পানিপথে চলাচল ও মাছ ধরার জন্য নৌকা ব্যবহার শুরু করেছিল।

চামড়ার নৌকার উৎকৃষ্ট নিদর্শন পাওয়া যায় এস্কিমো সমাজে। তাদের দুটি উল্লেখযোগ্য নৌকা হলো—

গবেষকরা মনে করেন, এই ধরনের চামড়ার নৌকা সম্ভবত মধ্যোপলীয় যুগের (Mesolithic Age) আবিষ্কার।

 

শিকারে নতুন সহায়ক শক্তি: কুকুর

পুরোপলীয় যুগের শেষভাগে বা মধ্যোপলীয় যুগে মানুষ শিকারের জন্য একটি নতুন সহায়ক শক্তিকে কাজে লাগাতে শুরু করে—পোষ মানা কুকুর

আজও ইউরোপ ও আমেরিকার অনেক স্থানে কুকুরের পাল নিয়ে শিকারে যাওয়ার রীতি প্রচলিত।

 

কুকুরের গৃহপালিত হওয়ার প্রক্রিয়া

কুকুরের উৎপত্তি হয়েছে নেকড়ে জাতীয় প্রাণী থেকে। ধারণা করা হয়—

 

কুকুর টানা শ্লেজগাড়ি

শিকার ছাড়াও কুকুর মানুষকে পরিবহনে সাহায্য করেছিল। বরফাচ্ছন্ন অঞ্চলে যাতায়াতের সমস্যা সমাধানের জন্য কুকুর টানা শ্লেজ (Sledge) গাড়ি তৈরি হয়।

 

অন্যান্য প্রাণীর সহযোগিতা

কেবল কুকুর নয়, আদিম মানুষ আরও কিছু প্রাণীকে পোষ মানিয়ে কাজে লাগিয়েছে।

Exit mobile version